অজানা, আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল বলেই আপনার কথা শেষে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একদিন আপনি আমার চুপচাপ থাকা দেখে বলেছিলেন আমাকে অনেক বড় কোনও সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার মনে হয় আমার জীবনটাই একটা সমস্যা। আমার সাথে পরিপূরক। এমনকি যে লেখাটা আমার অন্তত বাসার বারান্দায় বসে লেখার কথা ছিল তাও আমাকে কৃত্রিম কম্পিউটার স্ক্রিন এর সামনে বসে লিখতে হচ্ছে।
অজানা, একবার কি একটা সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারছিলনা, আমি একটু চেষ্টা করতেই সেটা মিলিয়ে ফেলেছিলাম। সেদিন নিজে নিজেই মনে হয়েছিলো, আরে, আমিতো অনেক বুদ্ধিমান! কিন্তু আমার সেই ধারণা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মৃত্যুচিন্তা আমাকে কোনও কিছু ঠিক ভাবে করতে দেয়না।
সবসময় আমার মধ্যে মৃত্যু চিন্তা কাজ করত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সেটা ছিল খুব সাধারণ চিন্তা। কারন ভাবতাম, হাঁ, একদিন সবার মতো আমিও মারা যাবো। স্বাভাবিক।
কিন্তু সেটা সাধারণ আর থাকল কই। একদিন বাস এ জানালার পাশে বসে যাচ্ছিলাম। অনেক জোরে বাস চলছিল। চুল উড়ে উড়ে চোখের উপর চলে আসছিলো। খুব ভালো লাগছিলো, যদিও খুব কম মুহূর্তের জন্যই আমি ভালো বোধ করতে পারি।
পরমুহূর্তেই কোনও এক অজানা কারণে মোহভঙ্গ হল। এবার মৃত্যু চিন্তা আসলো কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন ভাবে। পরের মুহূর্তটুকু আমার অজানাতেই কল্পনা হয়ে গেল ভেতরে ভেতরে। আমি চিন্তা করলাম আমি আর বাস এ বসে নেই, বাস চলছে, যেভাবে চলছে পৃথিবীর আর সমস্ত কিছু, যেমন ভাবে চলে আসছে কোটি কোটি বছর আগে থেকে। শুধু পার্থক্য একটাই, আমি সেখানে নেই। নেই আমার কোনও অস্তিত্ব। কি আশ্চর্য এই না থাকা!
অজানা, সেদিন কোনও কারন ছাড়াই চোখে পানি চলে এসেছিল। অসংখ্য বছর ধরে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস, আরও অসংখ্য বছর এভাবেই চলতে থাকবে। কিন্তু কি হবে মাঝের এই বিন্দু সমান সময় পৃথিবীতে থেকে? আমি অনেক তত্ত্ব কথা জেনেছি। আমার জানার মধ্যে অনেকটা সময় খরচ করেছি বড় বড় মনিষীদের মৃত্যু বিষয়ক কি চিন্তা ছিল তা জানার। মনের মতো কিচ্ছু খুঁজে পেলাম না।
সবচেয়ে সাধারণ যে কথাগুলো পেয়েছি তা হল, পৃথিবীতে নিজের নামটা অবিনশ্বর করে যেতে চাইলে পরিস্রম করে যেতে মৃত্যু পর্যন্ত। বুঝলাম, কিন্তু কেন? সেই উত্তর টা কোথাও পেলাম না।
আমার নাম হাজার বছর মনে রাখুক লোকে, কিন্তু আমি, এই যে এখন যে চিন্তা করতে পারছি, সে কোথায়? সে কি পেল সবাইকে তার নাম মনে করিয়ে দিয়ে? সে ত জানতেও পারলনা তার কর্ম সম্পর্কে। মৃত্যুর আগে কেউ কারো কাজ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
কি লাভ, কি উদ্দেশ্য এই জীবনের? কি জন্য এই পৃথিবীতে আসা? সবচাইতে বড় সঙ্কট তখনই হয় যখন বুঝতে পারিনা মারা যাওয়ার পর কি হবে? সবাই যা বিশ্বাস করে সেসবে কান দিতে ইচ্ছা করেনা। তাহলে কেন এই ক্ষুদ্র সময়ের জন্য এত সংগ্রাম?
আর কেনই বা আমি এত ভালো একটা জীবন পেয়েছি, আর আমার পাশে মানুষজন রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে? আমি জানি সৃষ্টিকর্তা পক্ষপাতিত্ব করেন না। তাহলে সেই মানুষগুলোর কি দোষ ছিল যে আমার মতো জীবন পেলনা? বুঝতে পারিনা কিছু।
যখনি কিছু একটা করতে যাই, সেটার কার্যকারিতা, এক কথায় মৃত্যু চিন্তা সেটা করতে কোনও উৎসাহ দেয়না। আমি বিশ্বজয় করে ফেললাম। পরের দিন যদি মারা যাই, বিশ্বজয় করার আনন্দ উদযাপন করবনা?
অজানা, আপনি কি বলতে পারেন কেন মারা যেতে হয়? তাহলে জন্ম কেন হল? চিন্তা করার ক্ষমতাটাই দরকার ছিলনা তাহলে। চিন্তা করতে পারার ক্ষমতাটা পাওয়ার কি আসলেই খুব একটা দরকার?