লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বন্ধ করা হোক। সারা পৃথিবীর মানবজাতি ও কোটি কোটি প্রানীর জীবনের উপর এমন অভূতপূর্ণ অনিশ্চয়তা এর আগে আর কখনো সৃষ্টি হয়নি। সামান্য ভুলে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংশ হয়ে যাবে সারা পৃথিবী এমন কি পুরো সৌরজগত। যথাযথ প্রস্তুতি ও নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সবাই এগিয়ে আসুন।
লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি) একটি আবদ্ধ টানেল বিশেষ যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পদার্থের দুইটি কণার মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে অবিশ্বাস্য রকম বিপুল পরিমান শক্তি উৎপাদিত হয়। এলএইচসি উদ্ভাবন করেছে ইউরোপের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সংস্থা সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)। এলএইচসি জেনেভা শহরের নিকটে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত। এটি ২৭ কিলোমিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি বৃত্তাকার টানেল।
২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই মেশিন প্রথম চালু করা হয়। কিন্তু তখন প্রচন্ড উদ্বেগ দেখা দেয় যে, বিগ ব্যাং পরীক্ষা চালানোর সময় ওই কোলাইডারে যে অপরিসীম শক্তি উৎপন্ন হবে তা যদি কোনোভাবে বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ নিয়ে তখন সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয় তীব্র উত্তেজনা। এ পরীক্ষার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়।
সব প্রতিবাদকে অবজ্ঞা করে মেশিন চালু করার মাত্র নয় দিন পরই তাতে একটি ত্রুটি ধরা পড়ে। তাতে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের তীব্র শক্তিসম্পন্ন চুম্বকে প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি হয়। এরপর বিজ্ঞানীরা কোলাইডারকে বন্ধ করে তা মেরামতে হাত দেন। মেরামতে তাদের লেগে যায় ১৪ মাস। এতে খরচ পড়ে আরো ৪ কোটি ডলার।
অবশেষে গত ক'দিন আগে আবারো চালু করা হয়েছে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার। সার্ন ধাপে ধাপে এতে পরীক্ষা চালাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এর ভেতর দিয়ে প্রোটন কণা বিপরীত দিক থেকে পাঠিয়ে তার গতি আলোর গতির সমান করা হবে। ফলে বিপরীতমুখী প্রোটনের সংঘর্ষে কোলাইডারের ভেতরে সৃষ্টি হবে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর। এরপর তা বিস্ফোরিত হবে মহাশক্তিতে। এ সময় তৈরি হবে বিগ ব্যাংয়ের সময়কার তাপ। এই তাপ দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তাৎক্ষণিক অবস্থা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এই তাপ চার ট্রিলিয়ন (৪০০০০০০০০০০০০) ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকেও বেশি হবে বলে জানা গেছে। এরকম তাপ আমাদের চেনা মহাবিশ্বে আর কখনই তৈরি হয়নি।
আর এই প্রক্রিয়া চলাকালীন কম্পিউটারের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটাই মনিটরিং করবেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন। তারা পর্যবেক্ষণ করবেন পদার্থ বিজ্ঞানে প্রচলিত ম্যাটার, এন্টিম্যাটারসহ অনেক বিষয়ের উত্তর। তবে এখনো পূর্বাভাসকারীরা কোনো অঘটন ঘটবে না_ এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। ফলে এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তাই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করবে নাকি পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে এখন দেখার বিষয় সেটাই।