সঙ্গদোষে নাকি লোহাও ভাসে! চরমতম এই সত্যটা আর কেউ না হোক ফাহিবের বাবা মা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন। তা না হলে, যেই ছেলে বুয়েট থেকে এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করল, বিদেশী কম্পানীতে এতদিন ভালো বেতনে চাকুরী করল, তার মাথায় এই বিদঘুটে ভুত হুট করে ঢুকলোই বা কিভাবে? উনারা নিশ্চিত ফাহিবের সাথের কিছু বদমায়েস বন্ধুবান্ধরাই ওর মাথাটা এইভাবে নষ্ট করেছে। এর চেয়ে পাশ করার পর বিদেশে পড়তে যেতে চেয়েছিল, সেটা করতে দিলেও মনে হয় অনেক ভালো হত, একমাত্র ছেলে দেখে তখন কিছুতেই রাজি হন নি উনারা। ফাহিবের বাবা তো ছেলের উপর মহাক্ষিপ্ত। মা নিরবে অবিরত চোখের পানি ফেলেছেন। কিন্তু কোনভাবেই ছেলেকে উনারা বাগে আনতে পারছেন না। কোন শাষনই কাজ করছে না। বাসা থেকে বের করে দেবার ভয় দেখিয়ে আরেক বিপদে পড়েছিলেন ওর বাবা। প্রায় দশদিন ছেলের কোন খোঁজখবরই পান নি। শেষ পর্যন্ত নিজেই যেয়ে এখানে ওখানে খোঁজ নিয়ে ছেলেকে ধরে আবার বাসায় নিয়ে এসেছেন।
কিন্তু এইসব নিয়ে ফাহিবের কোনই বিকার নেই। ফাহিব আছে ওর নতুন জগৎ নিয়ে। ওর ধারনা, খুব সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে ওর বাবা মা ওভার রিয়্যাক্ট করছে। তিন বছর চাকুরী করেছে, এখন আর এইসব চাকুরী ভালো লাগছে না দেখে ছেড়ে দিয়েছে। এখন ও অন্যভাবে ক্যারিয়ার তৈরির চিন্তাভাবনা করছে। সবার কি আর জীবন নিয়ে একইরকম চিন্তাভাবনা থাকে নাকি? অথচ ওর ভবিষ্যৎ প্ল্যান কি সেটা পুরোপুরি না শুনেই ওর বাবা মা'র মাথা খারাপ অবস্থা। চরম হতাশ হয়ে শেষপর্যন্ত কোনভাবেই ছেলেকে বাগে আনতে না পেরে ফাহিবকে বিয়েই দিয়ে দিলেন তারা। এইবার যদি কিছুটা সুমতি হয় এই ছেলের!
বাসর ঘরঃ
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাসার সবার চাপাচাপিতে ফাহিবকে বাসর ঘরে ঢুকতেই হলো। বিয়ে মানেই স্বাধীনতার নির্বাসন। বিয়ে ও করতে চায় নি। বাসর ঘরে স্বেচ্ছায় ঢুকার তো প্রশ্নই আসে না। বাসার সবার মতিগতি দেখে বাসা থেকে পালানোর একটা প্ল্যান ছিল ফাহিবের মাথায়, কিন্তু কিভাবে যেন ওর মা সেটা ঠিকই বুঝে ফেললেন। সারাক্ষন চোখে চোখে রাখা হলো ওকে। আর তাই রাত এগারোটায় নিজের রুমে ঢুকার সময় ফাহিব হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। নিজের রুমে যেয়ে শান্তি মতো এখন একটু রেস্ট তো নেয়া যাবে। যদিও ওর রুমে একটা মেয়ে বসে আছে তবে সেটাকে তাড়িয়ে দিতে ওর নিশ্চয় সময় লাগবে না। তবে ফাহিবের মাথায় একটা সহজ বিষয় ঢুকল না, এত বড় বেকুব কোন মেয়ে, যে ফাহিব বিয়েতে কোনভাবেই রাজি না জেনেও ওকে বিয়ে করেছে। মেয়ের বড় বোন'কে তো বিয়ের অনুষ্ঠানেই ফাহিব হুমকি দিয়ে এসেছিল। একরাতেই বিয়ের খেল খতম করে দিবে ও। কিন্তু আশেপাশের সবাই কিভাবে যেন তাকিয়ে রইল এটা শুনে। কেউ পাত্তাই দিল না ওর কথা! তখন থেকেই ওর মেজাজটা গরম হয়ে আছে। আজকে এই মেয়ের খবর আছে। ধ্যাৎ, বিকেলবেলায় সবাই মিলে জম্পেস একটা আড্ডা আর সুখটান দেয়া আজকের মতো মিস হয়ে গেল এই মেয়ের জন্য।
বেশ মুড নিয়েই ঘরে ঢুকল ফাহিব। মেজাজ এমনিতেই বেশ তিরিক্ষি হয়ে আছে। সব রাগ যেয়ে পরল মেয়েটার উপর। একে ভালো মতো ধমক টমক না দিতে পারলে ও শান্তি পাবে না। মেয়েকে ঝাড়ি মারার জন্য কয়েক পা ঘরের ভিতরে এগুতেই শুনলঃ
-এইরুমে ঢুকার আগে কি হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে এসেছেন আপনি?
- না। কেন?
-আমার হাইজিন নিয়ে সমস্যা আছে। বাথরুম কোথায় আছে সেটা তো জানেন। যান, আগে যেয়ে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে আসুন।
ফাহিব এবার বেশ ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকালো। নাটক ছিনেমায় তো দেখায় বিয়ের রাতে মেয়েরা মাথায় বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকে। আর এইমেয়ে তো দেখি দিব্যি বেডের উপর বসে পা ঝুলিয়ে মোবাইল টেপাটেপি করছে। মাথায় কাপড়ের কোন বালাই নেই! লজ্জা শরম কম নাকি এইমেয়ের?
ফাহিব কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলার আগেই এই মেয়ে বলে উঠলঃ
-আপনি ফ্রেস হয়ে আসার আগে আপনার কোন কথাই আমি শুনব না। যান, আগে বাথরুমে যান।
ডানহাত উঁচু করে আঙ্গুল দিয়ে যেভাবে বাথরুম দেখাল তাতে ফাহিবের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। বেতমিজ মেয়ে, আদব কায়দার কিছুই এর বাবা মা শেখায় নি। প্রথমে বাথরুমে না যাবার সিদ্ধান্ত নিলেও ছোট বাথরুমের চাপ বেড়ে গেলে নিজেই ওদিকে হাঁটা দিল।
-বাথরুমে টাওয়াল রাখা আছে। হাতমুখ ধুয়ে টাওয়াল দিয়ে মুছে টাওয়ালটা বাথরুমেই রেখে আসবেন। খবরদার বাথরুমের টাওয়াল রুমে নিয়ে আসবেন না।
বাথরুমে ঢুকার আগে ঠিক যা করতে ওকে মানা করেছিল ঠিক সেটাই করল ফাহিব। টাওয়াল হাতে নিয়েই রুমে ঢুকল ও, ইচ্ছে করেই।
ফাহিবের হাতে বাথরুমের টাওয়াল দেখে রেগে গেল মেয়েটা।
-আপনার কি ধারনা আমি ঠাট্টা করেছি আপনার সাথে? এত্ত বড় সাহস কিভাবে হলো আমার কথা না শুনার?
-আমার রুমে, আমার খাটে বসে আমার সাথে এই ভাষায় কথা বলার সাহস পেলে কোথা থেকে? বেতমিজ মেয়ে, আরেকবার বেয়াদপি করবে তো সোজা আমার রুম থেকে বের করে দেব।
ফাহিবের আপাদমস্তক একবার বেশ ভালো করে দেখল, তারপর বিছানা থেকে নেমে আসল মেয়েটা।
-আমার পরিচয় আপনি জানেন? আপনার চেয়ে কত বড় বড় ইতর বাঁদর ত্যাদড় পোলাপানদের আমি একদম সোজা করে ফেলেছি। আরেকবার যদি আমার সাথে এইভাবে কথা বলেন তো খবর আছে আপনার।
-কি করবে তুমি? বের হও আমার রুম থেকে।
কষে একটা ধমক দিল ফাহিব। এটা শুনে ফাহিবের সামনেই বিছানার উপর একটা বালিশ সরালো মেয়েটা। বিস্ফোরিত চোখে ফাহিব সেই বালিশের নীচে যা দেখল তাতে ওর মাথাই ঘুরে গেল।
-আমার সাথে এভাবে আরেকবার উঁচু গলায় কথা বললে এই হ্যান্ডকাফটা দিয়ে ঐ জানালার গ্রীলের সাথে আটকিয়ে এই গজারের লাঠিটা দিয়ে এমন ধোলাই দেব যে সারাজীবনে আর কোনদিনও সেটা ভুলবেন না। মাইরের উপর কোন ঔষধ নাই। আপনার বাবা মা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আপনাকে ঠিক করার। আজকেই একবারে সোজা করে ফেলব।
মেয়ের গলার টোন আর বিছানায় পড়ে থাকা জিনিসগুলি দেখে ফাহিবের মাথায় শর্টসার্কিট হয়ে গেল। কাহিনী কি? এই মেয়ের এত তেজ কোথা থেকে আসল? মাইর দিলে কেমন হয়! বিছানার উপরের জিনিসগুলি বা কই পেলে এই মেয়ে!
-এত বড় বড় কথা যে বলছ, ধরে যখন আচ্ছা মতো মাইর লাগাবো তখন সব ফুটুস হয়ে যাবে।
-কি? আমাকে মাইর দিবেন আপনি? এত সাহস? আসুন তো দেখি! সারদাতে একবছর এত কষ্ট করে কি শিখলাম তাহলে!
সারদাতে মানে? এই মেয়ে এইখানে গেল কিভাবে? কিছুটা কনফিউজড হয়ে ফাহিব তাকিয়ে রইল মেয়ের দিকে।
-এইগুলি কি দেখুন, বেশ ভালো করে দেখুন। সারাজীবনের জন্য আর কখনও ভুলবেন না।
মেয়েটার হাত থেকে একটা আইডেন্টিটি কার্ড আর ব্যাজ নিয়ে ভালো করে দেখে ফাহিব এবার বুঝল কেন বিয়ের অনুষ্ঠানে ওর কথায় কেউ পাত্তাও দেয় নি। সাড়ে সর্বনাশ! এই চীজ কোথা থেকে বাবা মা যোগার করল?
নামঃ জান্নাতুল তাসনিম রেশমা।
পদবীঃ এ এস পি।
-আপনার ফ্রেন্ড রাশেদ ভাইকে ফোন দিন। দিয়ে আমার ব্যাপারে এখনই খোঁজ নিন। উনি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র। আমাকে খুব ভালো মতোই চিনেন উনি।
রাশেদ ফাহিবের সাথে একই ডিপার্টমেন্টেই পড়ত। বিসিএস দিয়ে এখন পুলিশে আছে। রাজশাহীতে পোস্টিং। এলাকায় নাকি পলিটিক্যাল কি ঝামেলা লেগেছে এইজন্য বিয়েতে আসতে পারেনি।
-নিন আপনার বন্ধুকে ফোন দিয়ে কনফার্ম হন।
মেয়ের ফোন ফিরিয়ে দিয়ে নিজের মোবাইল বের করে ফোন দিল ফাহিব। কল রিসিভ করতেই দরজা খুলে বারান্দায় চলে আসল ও। ঐপাশ থেকেই প্রথম কথা ভেসে আসল।
-দোস্ত তুই তাহলে এখনও বাইচা আছোস? আমি তো তোর কুলখানির জন্য চান্দা তোলার লিস্ট বানাচ্ছিলাম।
-তুই কি জান্নাতুল তাসনিম……
-থাম তুই, আমি তোর বৌ'রে খুব ভালো করেই চিনি। আমার আন্ডারেই তিনমাস ছিল। দোস্ত তুই কিছু মনে করিস না। একটা সত্যি কথা বলতো? তুই কি পালক ছেলে, আই মিন উনারা কি তোকে পালছে শুধু?
-কি উলটা পালটা কথা বলছিস তুই? আমি পালক ছেলে হতে যাব কেন?
-তাইলে আমারে বল, তোরে এই ভাবে কুরবানী দিয়েছে কেন? এই মেয়ে তোর লাইফ তো একেবারে ঝাড়াঝাড়া করে ফেলবে।
-হারামজাদা আমাকে আগে বলিস নাই কেন?
-তুই আমারে দাওয়াত দেয়ার আগেই এই মেয়ের বাবা আমাকে ফোনে মানা করেছিল। রেশমার বাবা ডিআইজি। কিছুদিন আগেই আমার ইমিডিয়েট বস ছিল। কেমনে কই তোরে?
হঠাৎ করেই সব কিছু ফকফকা হয়ে গেল ফাহিবের কাছে। এই জন্যই গত একমাস ধরে ওর বাবা মা ওকে আর কিছুই বলছিল না। যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছিল ফাহিব। একবার রাত একটার সময় বাসায় ফিরলে শুধু ওর বাবা বলেছিল, “আমাদের কথা তো তুমি শুনবে না। ঠিক আছে, আমরাও তোমার ব্যবস্থা করছি”। অর্থাৎ আজকের সবকিছুই প্রি-প্ল্যানড।
-দোস্ত, একটা কথা শোন, এই মেয়ের সাথে বেশি ঘাটাঘাটি করিস না। আমার সার্কেলে যখন ছিল, তখন জুনিয়র সব অফিসার আর কন্সটেবলরা আড়ালে ওকে বাঘিনী বলে ডাকত। একবার দশ বছরের একটা মেয়ের রেপিস্ট'কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের রুমে ঢুকেছিল রেশমা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রশ্নের একটা উত্তর শুনে রেশমা এরে এমন মাইর দিয়েছিল যে সেখানেই ফুটুস। পরে এটাকে বাইরে নিয়ে যেয়ে আমার অন্য কাহিনী সাজাতে হয়েছে।
-কি বলেছিল রেশমা'কে?
-রেশমা জিজ্ঞেস করেছিল, দশ বছরের একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দেখে কিভাবে এর উত্তেজনা উঠল? ওকে পালটা উত্তর দিয়েছিল, যেকোন মেয়ে দেখলেই নাকি এর জিনিস খাড়া হয়ে যায়। রেশমার কাঠমিস্ত্রী দিয়ে বানানো একটা গজারের স্পেশাল লাঠি আছে, ঐটা দিয়ে ইচ্ছেমতো ননষ্টপ দুরমুজ দিচ্ছিল আর বলছিল, দাড়া তোর জিনিস সারাজীবন যেন আর কোনদিনও খাড়া না হয় সেই ব্যবস্থা করতেছি।
ফাহিবের আর রুচি হলো না রাশেদের সাথে এই বিষয়ে কথা বাড়ানোর। ম্যাইনকার চিপা শব্দটা অনেক শুনেছে জীবনে ও, কার গাওয়া একটা গান আছে, সেটাও শুনেছে কিন্তু এই জীবনে প্রথমবারের মতো এটার প্রকৃত অর্থ কি বুঝল ও! নিজের বাবা মা ওর সাথে শেষ পর্যন্ত এইরকম বিট্রে করল! বেশ কিছুক্ষন ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করার পর ফাহিব বুঝল যে, এই মেয়ের সাথে আর যাই হোক, ওর সংসার করা সম্ভব না। সুতরাং, বেড়াল অবশ্যই বাসর রাতেই মারতে হবে। বারান্দা থেকে রুমে ঢুকেই সোজা রেশমার কাছে যেয়ে বললঃ
-তোমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে আর আমাকে ভুল তথ্য দিয়ে এই বিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বিয়ে আমি মানি না, মানব না।
-তাই, তাহলে এখন কি করবেন?
-আমি তোমাকে ডির্ভোস দেব। যেখান থেকে এসেছ ঠিক সেখানেই পাঠিয়ে দেব।
রেশমা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললঃ
-এটা যে আপনি করতে চাইবেন সেটা আমরা সবাই জানি। আর এটা যেন না করতে পারেন সেটারও সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
-মানে, কি বলছ তুমি? আমি ডির্ভোসও দিতে পারব না?
-বিয়ের কাবিনে আমার মোহরানা কত ধরা হয়েছে ভুলে গেছেন নাকি? আমি আপনার ২টা ব্যাংক একাউন্টে খুব ভালোমতো খোঁজ নিয়েছি। সবমিলিয়ে আছে মাত্র ৫লাখ। আপনি একটা রাম বুদ্ধু, কোন পাগলে আপনাকে ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেট দিয়েছে? আমার কাছ থেকে আপনার পালানোর কোন উপায় নেই।
মুখ খারাপ করে মনে মনে নিজেকে কষে একটা গালি দিল ফাহিব। বিয়ের অনুষ্ঠানে মেজাজ খারাপ করে পারতপক্ষে কোন কথাই বলেনি ও। শুধু বিয়ে পড়ানোর সময় শুনেছিল এমাউন্টটা ৫০ লক্ষ। তখন চিন্তাও করেনি এটাই এত বড় বুমেরাং হয়ে যাবে। রাগে এখন নিজের সব চুল টেনে টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর।
-আপনি দিনের পর দিন ইচ্ছেমতো আপনার আব্বু আম্মুকে জ্বালাতন করেছেন। চাকরী ছেড়ে দিয়ে ইয়ার দোস্তদের নিয়ে শাহবাগে একটা দোকানে বসে সিগারেট ফুঁকতেন, গাঁজায় সুখটান দিতেন আর মনের সুখে আড্ডা দিয়ে বেড়াতেন। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চলতেন। সুতরাং এই বিয়ে হচ্ছে তার পানিশমেন্ট।
-খুব মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আজকে থেকে কবি হবার, সাহিত্য রচনা করার আর লেখালিখির যে বিটকেলে ভুত আপনার মাথায় চেপেছে সেটা আমি ঝেটিয়ে বিদায় করে দেব। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর দিন আজকে এখন থেকেই শেষ।
ফাহিবের মাথায় সবকিছু মিলিয়ে ভজঘটের বিশাল একটা গিট্টু লেগে গেল। ঘরের ভিতরে ২টা বড় টিউবলাইট জ্বলার পরও চোখে নিকষ কালো আধার দেখল ফাহিব। কি করা যায় এখন? আচ্ছা বাসা থেকে এখন পালিয়ে অন্য কোথায় চলে গেলে কেমন হয়? অবচেতন মনেই দরজার দিকে তাকালো ও।
-ফাহিব সাহেব, দরজার দিকে তাকিয়ে কোন লাভ নেই। এইরুম থেকে বের হতে পারবেন শুধু। বাসার বাইরে আমি ২জন কন্সটেবল পাহাড়ায় রেখেছি। বাইরে বের হলেই ধরে আবার আমার কাছেই ফিরত দিয়ে যাবে।
ফাহিবের মাথা চক্কর দেয়া শুরু করল। এই বদ্ধ উন্মাদ মেয়ের সাথে কয়েকদিন থাকলে নির্ঘাত ও পাগল হয়ে যাবে। ঠিক এইসময় দরজা খট খট করলে রেশমা খুলে দিতেই বাসার হাউজমেইড একটা ট্রলীতে করে বেশ কিছু নাস্তা আর ফল দিয়ে গেল।
-আপনার যদি খিদে লাগে এখান থেকে খেতে পারেন। আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে পেট ভরে খেয়ে এসেছি। আমার বিয়েতে আমি খাব না তাই হয় নাকি?
-আমি এখন আর কিছু খাব না।
-তাইতো, এতক্ষন আমার কাছে যা যা শুনেছেন তাতে তো পেট ভালো মতনই ভরে যাবার কথা!
এই কথাটা শুনার পর ফাহিবের ইচ্ছে করল রেশমার ডানগালে সেইরকম একটা কষে থাপ্পড় দিতে। কেন জামাইরা ধরে মাঝে মাঝে বৌরে মাইর দেয় এখন বুঝল ও! একটা কবিতার বই লেখার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছিল ও। এইবারের বই মেলাতেই বের করার কথা। প্রকাশক'কেও টাকা এডভান্স দেয়া হয়েছে। সব জলে গেল মনে হচ্ছে! ইচ্ছে করছে যেয়ে রেশমার ফর্সা সুন্দর গলাটা টিপে ধরতে। না, এভাবে হবে না, ও পুরুষমানুষ, একে অন্য উপায়ে শায়েস্তা করতে হবে। বিয়ে তো হয়েই গেছে, অসুবিধা কি?
কিন্তু রেশমা ওর মনের গোপনতম ইচ্ছেটাকেও জলাঞ্জলি দিয়ে বিছানা থেকে একটা বালিশ তুলে নিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললঃ
-ঐ যে ডিভানটা দেখছেন, এখন থেকে ঐখানে শুবেন আপনি। আর আমি এই বিছানায় ঘুমাব।
আয়েস করে শুয়ে শুয়ে কবিতা লেখালিখি করার জন্য হাতিল থেকে একটা ডিভান কিনে বেডরুমেই রেখেছিল ফাহিব। এটাই এখন বড় কালশাপ হয়ে দাড়াল ওর জন্য।
-কেন আমাদের বিয়ে হয়েছে না? আমি তোমার সাথেই ঘুমাব। এটা হ্যাজবেন্ড হিসেবে আমার অধিকার।
-হ্যাজবেন্ড? একটু আগেই না আমাকে ডির্ভোস দিতে চাচ্ছিলেন? আচ্ছা ঠিক আছে, কোন অসুবিধা নেই। আগে আমাকে আমার নায্য মোহরানার টাকা বুঝিয়ে দিন। এটা ছাড়া আমাকে স্পর্শ করাও আপনার জন্য হারাম।
-এত রাতে আমি এত টাকা কোথায় পাব?
-সেটা তো আপনার মাথাব্যথা, আমার না। বিয়ে করার সময় তো আমাকে দেখে তেঁতুলের রস জিভে চলে এসেছিল। যেই লুলচোখে তাকিয়ে ছিলেন কতক্ষন! টাকার কথা মনে ছিল না কেন? যতদিন মোহরানার পুরো টাকা আমার হাতে দিতে না পারবেন, ততদিন আলাদা শুবেন। খবরদার আমাকে টাচ করার কথা ভুলেও চিন্তা করবেন না।
ফলের ট্রেতে একটা ফল কাটার ছুড়ি দেখা যাচ্ছে। মাঝারি সাইজ। এটাতেই কাজ হয়ে যাবে। যা থাকে কপালে! এই মেয়ের সাথে সংসার করার চেয়ে ফাঁসিতে ঝুলে মরে যাওয়াও অনেকগুন ভালো। এগিয়ে যেয়ে ছুড়িটা হাতে নিয়ে রেশমার দিকে ঘুরতেইঃ
-একি, আপনি হাতে এটা কি নিয়েছেন? বাসর রাতে বিড়ালের জায়গায় নিজের বৌকেই মেরে ফেলতে চাচ্ছেন নাকি? এটা কি দেখেছেন?
ফাহিব তাকিয়ে দেখল বেডের উপর একটা আর্মস রাখা। রিভলবার নাকি পিস্তল চিনল না ও।
-বাংলাদেশ সরকার আমাকে আত্মরক্ষার জন্য এটা দিয়েছে। ফুললি লোড করা, সাথে এক্সট্রা একটা ম্যাগাজিনও আছে। জানেন তো আত্মরক্ষার জন্য আমাদের গুলি করার পারমিশনও আছে! বেশি ইচিং বিচিং করবেন তো হাঁটুর নীচে গুলি করে বিছানায় বেশ কিছুদিনের জন্য শুয়ে থাকার স্থায়ী ব্যবস্থা করব। টোটো কোম্পানীর বাদ্যাইম্যা ম্যানেজার জামাইয়ের চেয়ে চোখের সামনে বিছানায় পড়ে থাক সেটাও অনেক ভালো!
শেষ লাইনগুলি শুনে ফাহিবের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয় হয় অবস্থা!
-এতই যদি আমার দোষ থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করেছ কেন?
-আপনাকে আবার মানুষ বানানো জন্য। আপনার আব্বু আম্মু আমাকে খুব ভালো করে অনুরোধ করেছেন। শ্বশুর শাশুড়ির প্রথম অনুরোধ কি ফেলা দেয় যায় বলেন? তাছাড়া আমার একটা ঘরজামাইও দরকার। আপনার সবকিছু শুনার আর নিজের চোখে দেখার পর মনে হলো আপনিই পারফেক্ট, তবে সামান্য কিছুটা ঘষামাজা করে নিতে হবে।
কি ধরনের ঘষামাজার টার্গেট করেছে কে জানে? শেষ পর্যন্ত এই মেয়ের ঘরজামাই হতে হবে ওকে? কপাল এতই খারাপ ওর? চোখে প্রায় জল চলে আসার উপক্রম।
-এভাবে হাঁদারামের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চুপচাপ যেয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনি নাকি সারারাত জেগে থাকেন আর দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠেন? আজকে থেকে ঠিক এই সময়ে ঘুমিয়ে পড়বেন আর সকাল আটটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে যাবেন। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, আপনি শুয়ে পড়ার আগেই সবলাইট বন্ধ করে দেবেন। সামান্য আলোর মধ্যেও আমি ঘুমাতে পারি না।
রেশমা বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লে ফাহিব লাইট নিভিয়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। একদিনে যথেষ্টই হয়েছে।
পাঁচমিনিট পরেই রেশমার মোবাইলে ফোনকল আসল। ফাহিবের মনে হলো কেউ যেন কোন কাজের রির্পোট করছে।
-ফাহিব সাহেব, আপনার জন্য দারুন একটা সুখবর আছে। আপনার সেই আড্ডা মারার আর গাঁজা ফুকার চারজন ইয়ার দোস্তদের থানায় নিয়ে বেশ ভালোমতো আপদমস্তক সাইজ করা হয়েছে। এদের যা যা করেছে শুনলাম, তাতে আমি নিশ্চিত, আপনাকে এরপর দেখা মাত্রই এরা লুঙ্গি তুলে ঝেড়ে দৌড় দিবে।
রেশমার অট্টহাসি শুনে ফাহিবের পিত্তথলি পর্যন্ত জ্বলে উঠল। অন্ধকারে চুপচাপ যেয়ে গলা টিপে ধরলে কেমন হয়? কিন্তু রাশেদের কাছ থেকে শুনা সারদাতে দেয়া ট্রেনিংগুলির কথা আবার মনে পড়ে গেল। ঘোড়ায় চড়া, দৈনিক দৌড়ানো, প্যারেড, অবস্টাকলস, মার্শাল আর্ট, ফায়ারিং। নাহ, অনেক বড় রিস্ক হয়ে যায়। মাইর টাইর খেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। কালকে আর কাউকেই মুখ দেখানো যাবে না। এর চেয়ে বরং ঘুমিয়ে পড়াই নিরাপদ।
পরের দিন সকালবেলাঃ
-আপনাকে এই শেষবারের মতো ঘুম থেকে উঠতে বলছি। এরপর গায়ের উপর বালতি দিয়ে পানি ঢেলে দেব।
ধরমড় উঠে বসল ফাহিব। এই মেয়েকে কোন বিশ্বাস নেই।
-আমার খিদে লেগেছে। আপনাকে ছাড়া এই রুম থেকে বের হতে পারব না। পনের মিনিট সময় দিলাম, এর মধ্যে হাতমুখ ধুয়ে রেডি হবেন।
ভালো করে তাকিয়ে ফাহিব দেখল ইতিমধ্যেই রেশমা কাপড় পালটে সালোয়ার কামিজ পড়ে ফেলেছে। ঘড়িতে কেবলই নয়টা বাজে। সাত সকালবেলা এর সাথে ঝগড়া করে মুড নষ্ট করার কোনই মানে হয় না।
বিশমিনিট পরে যখন রেশমাকে নিয়ে ফাহিব রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলে, সবাই হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।
-আম্মু এখন থেকে সবকিছু নিয়ম মতো হবে। আপনাদের আর ওকে নিয়ে কোন টেনশন করতে হবে না।
রেশমার কথা শুনে ফাহিবের বাবা মা খুশিতে দাঁত বের করে হেসে ফেলল। দুইজনের চোখেই অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা।
-মা, এইজন্যই তো তোমাকে এনেছি। সবসময় ওকে ভালোমতো দেখেশুনে রাখবে।
বাবা'র এইকথা শুনে রাশেদের মতো ফাহিবেরও সন্দেহ হলো আসলেও ও পালক ছেলে নাকি?
নাস্তা খাওয়া শেষ হবার পর রেশমা ওর শ্বশুরের কাছ থেকে বাসার কাছাকাছি সেলুনের এড্রেসটা নিল। ফাহিবের ছোটবোন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলঃ
-তুমি সেলুনে যেয়ে কি করবে ভাবি? চুল কাটবে নাকি? চল তোমাকে পার্লারে নিয়ে যাই!
-আমি কাটব না, তোমার ভাই কাটবে। চুল দাড়ি না কেটে উনি কবি হবার বিশাল ভাব ধরেছেন। উনার এই কবি কবি ভাব আমি সারাজীবনের মতো একবারেই কেটে ফেলে দেব।
ফাহিবের প্রায় মাথায় হাত অবস্থা। পাক্কা পাঁচমাস ধরে এত কষ্ট করে এতবড় একটা ঝুটি সহ ঝাকড়া চুল বানিয়েছে ও আর এত সুন্দর দাড়ি কি একদিনে হয়?
-চলুন এখন সেলুনে যাব।
-না আমি এইগুলি কাটব না।
-সবার সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না। আপনি আমাকে এখনও ভালোমতো চিনেন নি। বাইরে ২টা কন্সটেবল এখনও পাহাড়া দিচ্ছে। দরকার পরলে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে ধরে নিয়ে যাব। আমি যা বলি সেটাই করি।
নিজের কাছে তখনই ওয়াদা করল ফাহিব এর শাস্তি ও রেশমাকে অবশ্যই দেবে। বাসাসুদ্ধ সবাই ওর সাথে বিট্রে করেছে। তবে দিন সবার সমান যায় না! এটার উসুল ও রেশমার কাছে ঠিকই আদায় করবে।
একঘন্টা পরে দুইজন যখন বাসায় ফিরে আসল, সবাই ফাহিবকে দেখে অবাক! কি সুন্দর লাগছে এখন। ফাহিবের মা তো খুশিতে রেশমা'কে জড়িয়েই ধরল….
-দেখেছেন আম্মু, আমাকে বিয়ের আগে ওকে দেখার জন্য যেই ছবিটা দিয়েছিলেন ঠিক সেরকম বানিয়ে এনেছি।
বিশদিন পরের কথাঃ
গুলশান ১নাম্বারে বিকেলবেলা হঠাৎই ফাহিবের সাথে রাশেদের দেখা। স্যুট টাই পড়া ফাহিবকে দেখে রাশেদের চোখ প্রায় আকাশে উঠার উপক্রম! একি অবস্থা!
-কিরে, তোকে তো দেখি রেশমা ঠিকই সাইজ করে মানুষ বানিয়ে ফেলেছে। শুনলাম চাকুরীতেও নাকি আবার ঢুকেছিস, এটা কি সত্য?
রাশেদকে দেখে ফাহিবের মেজাজ সাথে সাথেই খারাপ হয়ে গেল। এই হারামজাদাই আসল কালপ্রিট। এর মাধ্যমেই ওর সব খোঁজখবর নিয়েছিল রেশমার বাসা থেকে, এমনকি শাহবাগের কোথায় যেয়ে ও আড্ডা মারতো সেটাও এর কাছ থেকে জেনে রেশমা নিজে যেয়ে ফাহিবকে দেখে এসেছিল। বেঈমান কোথাকার! রাশেদের সামনে রাস্তায় একদলা থুথু ফেলে একটা কথাও না বলে গটগট করে চলে আসল ফাহিব।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই বিয়ের পরের দিনগুলির কথা আবার মনে পড়ে গেল ফাহিবের। ওর জীবন একদম ভাজা ভাজা করে ফেলেছে রেশমা। বিয়ের পর ফাহিবকে নিজের সরকারী বাসায় জোর করে নিয়ে এসেছে। ফাহিব চাকরী ছেড়েছিল প্রায় সাতমাস আগে। বাসা থেকে এইভাবে বিয়ে দিয়েছে দেখে রাগ করে ঠিক করেছিল ও বিয়ের পরেও চাকরী করবে না। ঘরজামাই পছন্দ তো রেশমার, ১০০% ঘরজামাই থাকবে ও। দারুন একটা শাস্তির ব্যবস্থা করেছে ও রেশমার জন্য! কারও সাথে যখন রেশমা ওকে পরিচয় করিয়ে দেয়, কি করে জিজ্ঞেস করলেই ফাহিব হাসিমুখে বলে দেয়, “আমি তো চাকরী বাকরী করি না। ঘরজামাই তো, সেজন্য সারাদিন ঘরেই বসে থাকি”। রেশমার সাথে এই নিয়ে প্রথম দশদিন বেশ কয়েকবার তুমুল ঝগড়াও হয়েছে ওর। সবধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েও যখন কোনভাবেই চাকুরী করার জন্য ফাহিবকে রাজি করাতে পারল না, রেশমাও ফাহিবের জন্য ভয়ংকর শাস্তির ব্যবস্থা করল। হাড়ে হাড়ে বজ্জাত মেয়েটার মাথাভর্তি সব শয়তানি বুদ্ধি। মোহরানার টাকা এখনও শোধ দিতে পারেনি দেখে এই সূত্র ধরে শাস্তিস্বরূপ বিয়ের পর থেকেই ধারে কাছেও ফাহিবকে ঘেষতে দেয় না। শর্ত একটাই - হয় আমার মোহরানার টাকা শোধ দাও, না হলে চাকুরীতে ঢুকে প্রতিমাসে শোধ দেবার লিখিত চুক্তি করো। অন্যকোন মেয়ে হলে পুরুষমানুষ কাহাকে বলে সেটা ও ঠিকই বুঝিয়ে দিত, কিন্তু রেশমার সাথে সেটা করার সাহস কিছুতেই পেল না ও। ফাহিব দাঁতে দাঁত চেপে প্রথম পনেরদিন অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরন করেও চাকুরীতে ঢুকল না। রেশমাকে শাস্তি দেবার এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্নই উঠে না! একই বিছানায় রেশমার উলটো দিকে ফিরে নাক ডেকে ডেকে ঘুমাতো ফাহিব।
এদিকে কিছুতেই ফাহিব'কে বাগে আনতে না পেরে রেশমাও চরমতম শাস্তির ব্যবস্থা করল ঠিক ষোলদিনের মাথায়। রাতেরবেলা খাওয়া দাওয়া শেষ হবার পর বেডরুমের দরজা ভালোমতো লাগিয়ে দিয়ে রেশমা হতাশ গলায় শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করলঃ
-তুমি তাহলে চাকুরীতে কিছুতেই ঢুকবে না?
ফাহিব দাঁত বের করে হেসে দিল। এত আনন্দ ও রাখবে কোথায়?
-না, চাকুরী করা আমার পোষাবে না। তুমি তো ঘরজামাই চেয়েছ, সুতরাং সারাদিন ঘরেই থাকবো।
-তোমার মতো বজ্জাত পুরুষমানুষের নাটবল্টু স্ক্রু কিভাবে টাইট দিতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। এবার দেখবো তুমি কয়দিন চাকুরীতে না ঢুকে থাকতে পারো!
কথা শেষ করেই সোজা বাথরুমে ঢুকলো রেশমা। পাঁচমিনিট পরে যখন বের হয়ে এলো, রেশমা'কে দেখে ফাহিবের মাথায় সাথে সাথেই সর্টশার্কিট হয়ে গেল। শুধুই সেমি ট্রান্সপারেন্ট একটা স্লীভলেস নাইটি পড়ে বের হয়ে এসেছে। রেশমা মেয়ে হিসেবে যথেষ্টই সুন্দরী। এই ড্রেসে রেশমা'কে দেখে ফাহিবের বিশেষ একটা হরমোন সহসাই আন-ব্যালেন্সড হয়ে মাথায় ইলেকট্রনগুলি উলটা পালটা দিকে ছুটোছুটি শুরু করে দিল। তাকানোও যাচ্ছে না, আবার না তাকিয়েও থাকা যাচ্ছে না। বজ্জাতির একটা সীমা থাকা উচিৎ!
-এই ড্রেস পড়েছ কেন?
-কেন? অসুবিধা কোথায়? তুমি আমার হ্যাজবেন্ড, তোমার সামনে আমার যেকোন ড্রেস পড়ার পারমিশন আছে!
পাঁচমিনিট পরে-
-ফাহিব, এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছ কেন? ভালো মতন দেখ! আমি না তোমার বিয়ে করা বৌ! আমার দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছ নাকি?
-না না, লজ্জা পাবার কি আছে?
-ঠিক বলেছ। লজ্জা কিসের? যতক্ষন ইচ্ছে দেখবে। তোমার দেখার সুবিধার জন্য আমি তোমার একদম সামনে এসে দাঁড়ালাম।
তারপর ফাহিবের হাতে ড্রেসের প্যাকেটটা দিয়ে রেশমা বললঃ
-ফাহিব বলো তো? প্যাকেটের গায়ের মডেল মেয়েটাকে, না আমাকে বেশি হট লাগছে? খুব ভালো করে দেখে বলবে।
ফাহিব পর পর বেশ কয়েকটা বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আজকে ওর খবর আছে! কিসের মডেল? সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখেই রাত দশটার সময় বারটা বেজে যাচ্ছে ওর!
-তুমি চিন্তা করো না, এভাবেই আজকে রাতে তোমার সাথে ঘুমাব আমি। তুমি আসলেও পুরুষমানুষ নাকি সেটারও পরীক্ষা হয়ে যাবে।
নিজের মাত্র একহাত সামনে এই ড্রেসে রেশমা দেখে মাত্র এগারো মিনিট টিকে থাকতে পারল ফাহিব। এরপর বিনাযুদ্ধেই হার মেনে নিল। আলমিরা থেকে ২০০টাকার স্ট্যাম্পড কাগজ বের করে তাতে ফাহিবের সাইন নিল আগে রেশমা। সবকিছু আগেই লিখে রেখেছিল। চুক্তি মোতাবেক চাকুরীতে যত দ্রুত সম্ভব ঢুকবে ফাহিব আর যা বেতন পাবে সেখান থেকে প্রতিমাসে নিয়মিত মোহরানার টাকা পরিশোধ করবে। এবং রেশমার অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই ফাহিব চাকুরী ছাড়তে পারবে না।
ফাহিবের শারীরিক আর মানসিক যা অবস্থা তখন, রেশমা যে শর্তই দিত তাতেই চোখ বন্ধ করে সাইন করে দিত! কোনরকমে কাগজে শুধুই সাইনটা করে প্রথমবারের মতো নিজের বৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ফাহিব……..
কানের কাছে একটা বড় পাব্লিক বাসের হর্ণ শুনে হুট করেই আবার বর্তমানে ফিরে আসল ফাহিব। আজকেই নতুন চাকুরীতে ঢুকেছে ও। ওর খারাপ কপালের দৈন্যদশা কি কিছুতেই কাটবে না? চাকুরীতে ঢুকার প্রথমদিনেই কিনা এত বড় অপয়া একজনের সাথে দেখা হলো ফাহিবের……..
উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় ব্লগার মফিজ ভাইকে এবং উনি মোটেও ভুয়া নন, কোনভাবেই না! উনি আমার গল্পের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। এবং চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন ব্লগার। উনার রম্য লেখাগুলি দুর্দান্ত হয়!
যারা এই ধরনের আরও গল্প পড়তে চান তাদের জন্যঃ
গল্পঃ ভুল সবই ভুল