রাত প্রায় ২টা ৮ বাজে! ওয়াসরুমে যাওয়ার জন্য খাটে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে লাইট জ্বালাতেই দেখে দুইটা মিসকল, ১২.৪৮, নাম্বারটা অপরিচিত. এতো রাতে কে ফোন করবে? একটু ভাবনায় পড়ে যায় মিশুক..
ওয়াসরুম থেকে এসেই চিন্তা করে ফোন করবে কিনা, নিজের অজান্তেই যেন সবুজ বোতামটায় চাপ পড়ে যায়, কল চলে যায় রিং হচ্ছে......প্রায় অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর কেউ রিসিভ করলো। ঘুম ঘুম গলায় হ্যালো!! মেয়ে কণ্ঠ শুনে মিশুক একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়, জী এই নাম্বারে রাত ১২টার পরে ফোন আসছিল! আপনি কে বলছেন? একটু চুপ থেকে মেয়েটা বলছে ও হ্যালো! কি যা তা বলছেন? আপনি কে? আর আমিই বা আপনাকে ফোন করতে যাবো কেন? আর ভদ্রতা বলে কিছু কি নেই! এতো রাতে কেউ কাউকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে? মিশুক পুরো বোবা হয়ে যায়, কি বলছে এই মেয়ে? ফোন আসছে দেখেই তো ফোন করলাম, আবার উল্টো ঝাড়ি দিচ্ছে, দেখুন আমি দুঃখিত এতো রাতে ফোন দেওয়ার জন্য, আমি ভাবলাম পরিচিত কেউ ফোন করেছে বিশেষ কোন কারণে, স্যরি.... ফোনটা কেটে দিয়ে কেমন জানি বোকা বোকা লাগছে মিশুকের কাছে, ধুর ফোন করাটাই উচিত হয়নি কার প্রয়োজন হলে আবার করতো উল্টো মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে।
হোস্টেলে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হচ্ছে মিশুক ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য! মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে ইনবক্সে একটা মেসেজ! সেই নাম্বারটা থেকে এসেছে'' স্যরি কাল রাতে আমার ছোটো বোন আপনার মোবাইলে ভুল করে ফোন করেছিল, I am Sorry...মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায় মিশুক প্রায় বিকেল ঘনিয়ে এসেছে অনেকটা ক্লান্ত মিশুক. হোস্টেলে এসে ফ্রেস হয়ে নেয়, মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে আরেকটা মেসেজ'' আপনিতো অনেক ভাবিস্ট মানুষ স্যরি বললাম তাও কিছু বললেন না'' এতো ভাব নেওয়া ভাল না'' মেসেজটা দেখে মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে যায় মিশুকের! কি পাগলের পাল্লায় পড়লাম এই মেয়ের সমস্যাটা কি? মেসেজের রিপ্লাইয়ে মিশুক লিখে ''ভাবের কি দেখলেন? কাল রাতে তো অনেক কিছু বললেন, আবার কোন হিসেবে আমার কাছে মেসেজের রিপ্লাই আশা করেন?'' মেসেজের সাথে সাথেই রিপ্লেই! এজন্য তো সরি বললাম। মিশুক মোবাইলটা রেখে খাটে শোবে তখনি মোবাইলটা বেজে উঠে!! হ্যালো! আপনার প্রবলেমটা কি? কত শেষ না করেই চুপ হয়ে যান কেন! ইচ্ছে করছে না তাই,,ছেলে মানুষ তো দেখি মেয়েদের মতো ঢং করেন। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মিশুক জিজ্ঞেস করে আপনার নাম কি? অবন্তী! প্রায় অনেকক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দেয় মিশুক,
হঠাৎ বুঝতে পারছে মিশুক, মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছে ও...তবে কি? ধুর কিসের মধ্যে কি!! পরদিন ভার্সিটি থেকে আসার পর কি মনে করে যেন মেসেজ দিল মিশুক...তারপর চলল মেসেজ চালাচালি।
পরিচয়টা অনেকটা গনিষ্ঠ হয়ে উঠলো! রোজ কথা না বললে ভাল লাগে না মিশুকের, সাহস করে দেখা করার কথা বলে. অবন্তী রাজি হয়ে যায় আর এতদিনে হোস্টেলে জানাজানি হয়ে যায় মিশুক প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে...
অবন্তীকে ফাস্টফুডের সামনে আসতে বলে মিশুক, ও বন্ধু নিয়ে আসে কিন্তু কাউকে দেখছেনা! মিশুক ওর বন্ধু রাফি বলে কিরে মনে হয় ওর আমাকে পছন্দ হয়নি! তখনি মোবাইলে রিং আসে তুমি কই? যেখানে আসার কথা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি. তুমি কোথায়? অপজিটে দেখ ডায়গন্টিক সেন্টারটার সামনে দাঁড়িয়ে আসি, এই দিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে! মিশুক একটা ছাতা নিয়ে অবন্তী আর ওর বান্ধবীদের ফাস্টফুডের সামনে নিয়ে আসে। ফাস্টফুড যদিও বন্ধ! তাই মিশুক ওর বন্ধুদের চলে যেতে বলল আর অবন্তী ওর বান্ধবীদের বিদায় দিল, ওরা দুজন একা একটু সময় চাচ্ছিল.. এই দিকে বৃষ্টি হচ্ছে বিষণ একটা রিক্সা নিয়ে ঘুরবে ওরা অনেকক্ষণ রিক্সায় করে ঘুরলো অনেক কথা বলল, তারপর অবন্তীকে ওর হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে মিশুক ফিরে ওর হোস্টেলে, বন্ধুরা অপেক্ষায় আছে কি হল জানতে যখনি শুনলো অবন্তী মিশুকের সাথে রিলেশন করতে রাজী। এবার পার্টি দে দোস্ত তোর তো হয়ে গেল....
মিশুকের সাথে অবন্তীর রিলেশনটা প্রায় দুই বছর হতে চলল, মিশুকের ডিপ্লোমা প্রায় শেষ হোস্টেল ছেড়ে মামার বাসায় থাকতো! অবন্তীর কথা মিশুক ওর বাবাকে জানিয়েছে, মিশুকের বাবা ওর বন্ধুর থেকে অনেক বেশী ক্লোজ ছিল। তাই অমত করেনি, রোজ ওকে বলতো দেখাবি না তোর গার্লফ্রেন্ড কে? মিশুক হাসতো বলতো দেখাবো টাকা দাও আগে.. অবন্তী ইন্টার মিডিয়েট শেষ করেছে তাই হোস্টেল ছেড়ে মামার বাসায় আছে এখন খুব একটা দেখা করতে পারে না।
এই দিকে মিশুকের বাবা অনেক বেশী অসুস্থ হয়ে যায়, অবন্তীকে বলে বাবার অসুস্থের কথা! অবন্তী আসবে বলল..যদিও মিশুক জানতো ওর আসাটা অনেকটা অসম্ভব, পরদিন সকালে দরজায় নক করছে কেউ খুলতেই দেখে অবন্তী, মিশুক অনেক বেশী অবাক হয়! তুমি? Welcome.. বাবা অনেক খুশি হয় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, এই দিকে বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে, মিশুক কি করবে বুঝতে পারছে না, হাসপাতালে টাকার অভাবে ভর্তি করাতে দেরী হয়ে যায় ।
যার জন্য মিশুক বাবাকে হারায়, বাবা না ফেরার দেশে চলে যায়...মাত্র একদিন পর ডিপ্লোমার রেজাল্ট দিতো, বাবার সাথে রাগারাগি হতো মিশুকের. বাবা প্রায় বলতেন তোর আয় করা টাকা আমি খাব না মনে রাখিস, খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম বেতন পেলে বাবাকে একটা চশমা কিনে দিবে। বাবাই জিতলো!.....
অবন্তী ওদের গ্রামে চলে যায়, ওর পরিবারের ইচ্ছা অনার্স পড়লে গ্রামের কলেজে যেন পড়ে! এই দিকে অবন্তীর বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়ে গেছে, একটার পর একটা প্রস্তাব আসতে থাকে ও পড়বে বলে সব প্রস্তাব না করে দেয়! একে একে ১৫টা বিয়ের প্রস্তাব না করে. মিশুককে অবন্তী বলছে আর পারছিনা মিশুক বাসা থেকে অনেক চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য, একটা কিছু কর....
মিশুক চাকরি করতে শুরু করে ৬ মাসে ৫টা জব চেঞ্জ করে ভাল একটা জবের জন্য। অবশেষে একটা ভাল চাকরী প্রায় ও, আর এই দিকে অবন্তীর জন্য ১৬তম বিয়ের প্রপোজাল আসলো, ছেলেরা অনেক টাকা পয়সা ওয়ালা। তাই এবার ওকে বিয়ে করতেই হবে পরিবার থেকে বলছে। আর ওর কোন কথা শুনবে না, ও কি করবে বুঝতে পারছে না মিশুক ওকে অবয় দিল বলল ওর কথা বলতে, মিশুকের বিশ্বাস ছিল ও যতটা স্টাবলিস হয়েছে অন্তত অবন্তীর জন্য আগের ১৫টা প্রপোজাল থেকে ও উত্তম।
অবন্তী প্রথমে যদিও বলছে ও আরো পড়তে চায়, যখন কেউ আর সে কথা শুনতে রাজী নয় তখনি ও মিশুকের কথা বলে। প্রচণ্ড মারধোর করে ওকে, ও যে মোবাইল ইউজ করে পরিবারে কেউ জানতো না ওর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে গেল, মিশুকের নাম্বার নিলো অবন্তীর বাবা। মিশুক জানে ওকে যে কোন সময় অবন্তীর বাবা ফোন করবে ঠিক তাই হল! অফিসে থাকা কালীন সময় ওর নাম্বারে অবন্তীর বাবা ফোন করে ওকে আসতে বলে, সামনের শুক্রবার দেখা করতে বলে। মিশুকের বিশ্বাস ছিল ও তার ভালবাসাকে পেতে সব করবে যে কোন মূল্যে অবন্তীর পরিবারকে রাজী করাবে, মিশুক দেখা করে অবন্তীর পরিবারের সাথে ওর বাবা, নানু, ফুফু আসে, মিশুক তার সব সার্টিফিকেট জব এপয়েনমেন্ট লেটার সব নিয়ে যায়। ও সততার সাথে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়, ওর বাবা নেই! গ্রামে একটা ভাঙ্গা বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই, যে টুকু জমি ছিল বাবার চিকিৎসার জন্য বন্ধক রাখে, ওর পরিবারের একমাত্র আশা ভরসা সে। সব শুনে ওকে বলে আগামী শুক্রবার ফোন দিবে আর একটা শর্ত দেয় অবন্তীকে দশ ভরি স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করতে হবে। মিশুক তাতেও রাজি হয়, পরে শুনে সেই দিন নাকি অবন্তীকে অনেক মারে ওর বাবা প্রায় চেন্সলেস হয়ে যায়, সেই শুক্রবার আসে মিশুক ফোন করে অবন্তীর বাবাকে ফোন ধরেই ওকে বলে আর যেন ফোন না করে, ওর সাথে অবন্তীর বিয়ে দিবে না। মিশুকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে!! অনেক চেষ্টা করে মিশুক অবন্তীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার কেউ ওর ফোন ধরে না, মিশুকের ইচ্ছা ছিল অন্তত দুই পরিবার একসাথে বসুক তারা যেই সিদ্ধান্ত দিবে সে মাথা পেতে নিবে।
কিন্তু অবন্তীর বাবা কিছুতেই রাজী নয়, অমন চালচুলো হীন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিলে উনার মাথা হেট হয়ে যাবে। এই দিকে অনেক দিন মিশুক অবন্তীর সাথে দেখা করতে পারছে না, আগে মাঝে মধ্যে বাসার ফোন থেকে কল করতো এখন তাও না,
বাসা থেকে অবন্তীর বের হওয়া একদম নিষেধ। মিশুক যে করেই হোক অবন্তীর সাথে দেখা করতে চায়, অবন্তীর এক বান্ধবীর কাছে মিশুক বলে ও কাল আসছে অবন্তী যে করেই হোক যেন একটি বারের জন্য হলেও আসে..
ভাগ্য ভাল ছিল অবন্তীকে দেখার সুযোগ হয় মিশুকের, অবন্তীকে মিশুক অনেক বুঝায় যেন পালিয়ে বিয়ে করে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই! কিন্তু অবন্তী পালিয়ে বিয়ে করবে না,নিজের ভালবাসার জন্য বাবা মায়ের ২০ বছরের ভালবাসাকে দুরে ঠেলে দিতে পারবে না , মিশুক ওর কথার রিসপেক্ট করে। ওকে একটা ফোন গিফট করে চলে আসে, যদিও ওর মনে হচ্ছে এই হয়তো শেষ দেখা।
অবন্তীর বিয়ের জন্য আরেকটা প্রস্তাব আসে! ছেলে বিদেশে থাকে, এবার যে করে হোক ওকে বিয়ে দিবে। যদিও অবন্তী মরে গেলেও বিয়ে করবে না, তার বাবা তার মাকে মারে বিয়ে না করলে তার মাকে তালাক দিবে, ওর ছোটো ভাই বোনকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে, এই শর্তে অবন্তীকে রাজি করায় ওর পরিবার। মিশুক যতই চেষ্টা করছে ওর পরিবারের কার সাথে যোগাযোগ করার ততই ও হতাশ হচ্ছে, এই দিকে ওর বিয়ের কথা শুনে আবারও মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মিশুকের!
অবন্তীকে ও অন্য কার সাথে দেখতে পারবে না, এইদিকে সেই বিদেশী ছেলের সাথে অবন্তীর এংগেজমেন্ট হয়ে যায়, আগামী সপ্তাহে বিয়ে ঠিক হয়। মিশুক অনেক কষ্ট করে সেই ছেলের ঠিকানা জোগাড় করে তাকে এবং তার পরিবারের কাছে সব খুলে বলেন। সব শুনে সেই ছেলে পক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এতে ঐ এলাকায় রটিয়ে যায় ওদের সম্পর্কের কথা। আরো প্রস্তাব আসার আগেই ভেঙ্গে যাওয়ায় ওরা সেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। মিশুক তবুও চাচ্ছিল অন্তত একটি বার ওর পরিবার ওর মামাদের সাথে বসুক অবন্তীর পরিবার। ওদের নতুন ঠিকানায় চলে যায় মিশুক, বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল অবন্তী সেই শেষ দেখা।........ মিশুককে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবন্তীর মামা লোকজন নিয়ে আসে মিশুককে মারার জন্য, ওর কাছে এসে বলে কি চাস তুই! আমি একটা রেজাল্ট চাই! আপনারা আমার পরিবারের সাথে একটি বারের জন্য বসেন। যা সিদ্ধান্ত নিবেন মাথা পেতে নিবো। অবন্তীর মামা বলেন আমরা তোমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবো না। তোমাকে নতুন করে কিছুই বলার নেই যত তাড়াতাড়ি ওকে ভুলে যাবা ততই তোমার জন্য ভাল। মিশুক অনেকটা অসহায় হয়েই বলে ঠিক আছে বেশ, তবে তাই করবো! কিন্তু আমার দুইটা শর্ত আছে আপনারা ওর পড়ালেখা আবার শুরু করাবেন, কারণ আমি চাই না কেউ এসে আমায় বলুক আমার জন্য তার লাইফটা নষ্ট হয়ে গেছে,
আর ফরেইনর কোন ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিতে পারবেন না, দেখা যাবে সেই ছেলে যখন বিদেশে চলে যাবে. তখন ও একা হয়ে যাবে আর তখন আমার সাথে আবার সম্পর্ক করার চেষ্টা করবে। আমার জীবনটা আবার উলট পালট হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ- গল্পটা এখানেই শেষ, যদিও হয়তো অনেকে পড়ে ভাবছেন এটা আবার কেমন গল্প? এটা জীবনের গল্প, চারপাশের সেই চিরছেন জীবনের.....যেখানে বংশ, মর্যাদা, সম্পদ একটা মানুষের মূল্য মাপা হয়। সে নিজে কতটা যোগ্য তার প্রয়োজন নেই!
তার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কি তাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কাউকে ভালবাসা অভিশাপ। ভাল থাকুক মিশুকরা যাদের ভালবাসা অনেক বড় পাপ.....
......সংগৃহীত(ফেসবুক থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৩০