মনে করেন আপনার পাশের বাড়িতে ক্যাচাল লাগছে। এক ভাই আরেক ভাইরে বটি দিয়া দৌঁড়ানি দিয়া বাড়ি থেকে বের করে দিছে। এখন সেই ভাইয়ের থাকার জায়গা নাই।
আবার মনে করেন গ্রামের মাতব্বর আপ্নেরে কইছে সেই নিপিড়িত ব্যক্তিটিকে আশ্রয় দেয়ার জন্য। কতদিনের জন্য আশ্রয় দিবেন, সেইটা অনিশ্চিত। সেইটা সারা জীবনের জন্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
আবার মনে করেন, আপ্নের নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা 'লড়েচড়ে'। একজনের মানুষের পুরো জীবনের সব খরচাপাতি সামলানো আপ্নের পক্ষে সম্ভব না।
আবার মনে করেন, যেই মানুষটারে আপ্নে আশ্রয় দিবেন হেতেয় আপ্নের কোন কাজে আসবো না, উপ্রে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়া আপ্নে সন্দিহান।
এখন মনে করেন, এত্তসব যোগ বিয়োগের পরে আপ্নে কি সেই ব্যক্তিরে আপ্নের ঘরে/ঘাড়ে আশ্রয় দিবেন?
এখন বলি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। অনেকেই বলছেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া উচিৎ। যারা বলে, তারা নিচে যান-
১- রোহিঙ্গাদের জন্য আপনার মন কাঁদে। তাদের আশ্রয় দিতে আপনি বদ্ধ পরিকর। তো আপনি আশ্রয় দিন না আপনার ঘরে/ঘাড়ে। আজীবন তাদের খরচাপাতি চালান। বাপের নিকট থেকে পাওয়া জায়গা জমির একটা অংশ দিয়ে দেন। হ্যাঁ, বলতে পারেন আপনার অর্থনৈতিক অবস্থাও 'লড়েচড়ে'। ভাই, এই দেশটার অর্থনৈতিক অবস্থাও এরকম। আমরা কোন ধনী দেশের জনগণ না।
২- আচ্ছা মানলাম আপনি ঘরে/ঘাড়ে আশ্রয় দিতে পারবেন না, কিন্তু আপনার দরদ চুইয়ে চুইয়ে কিংবা উথলিয়ে পড়ছে। আচ্ছা বলেন তো, এই যে ৩ অথবা ৫ অথবা ১০ লাখের উপর রিফিউজি এতদিন ধরে বাংলাদেশে আছে, আপনি কয়মুঠো চাল তাদের মুখে তুলে দিছেন? আপনার এই দরদ কি শুধু ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে কিছু লাইক কামানো পর্যন্তই?
৩- আমি উপরে চারিত্রিক সার্টিফিকেটের কথা বলেছি। একদল রোহিঙ্গা কিছুদিন আগে একটা আনসার ক্যাম্পে হামলা করে একজনকে গুরুতর আহত করেছে, কিছু রাইফেল আর বিপুল অ্যামো নিয়ে চম্পট মেরেছে। পরে সেই রাইফেল উচাঁয়ে জিহাদের ডাক দিয়ে ভিডিও করে আপলোড দিয়েছে। সেটা ফেসবুকে/ইউটিউবে উড়াউড়ি ঘোরাঘুরি করছে। কয়েক বছর আগে পেপারে এসেছিল, কিছু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী সৌদিআরবে অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছে। পরে জানা গেছে এরা ছিল রোহিঙ্গা। প্রতি বছরই এরকম নিউজ আসছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ছে বৈকি। এই রিফিউজি ইস্যুর আগে বাংলাদেশে ইয়াবার একটা ইতিহাস দেখান তো। ইয়াবা কোত্থেকে আসে জানেন তো? কাদের মাধ্যমে আসে, সেটাও নিশ্চয় জানেন?
৪- কয়েক বছর যাবত চলমান চাপাতি সার্জারি আর সর্বশেষ 'হলি আর্টিজেন বেকারি' সিনেমার দরুন আমরা বহির্বিশ্বে বেশ সুনাম (?) অর্জন করেছি। এদিকে আবার রোহিঙ্গার একদল নাকি জিহাদের ডাক দিয়েছে। আবার আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিবো। আমাদের অর্জনের(?) লিস্টটা আরও লম্বা করবো বটে।
প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এবং এটা করা উচিৎ। তবে অবশ্যই সামর্থের মধ্যে থেকে। ভুল পদক্ষেপের তালিকা যত খাটো হবে তত উত্তম হবে আপনার জন্য, আমার জন্য, আমাদের জন্য এবং আমাদের পরবর্তীদের জন্য।
তো এটা নিয়ে অত্যধিক চিন্তা করে মাথার চুল না খসিয়ে আমরা স্রেফ এটা করতে পারি যে, আল্লাহর কাছে দুয়া করি উনি যেন পৃথিবীতে শান্তি বর্ষণ করেন, ভালরে আরও ভালও করেন, খারাপরে হেদায়েত করেন, নিপীড়িতদের আশীর্বাদ করেন আর দুনিয়ায় আমাদের জন্য আমাদের পরিক্ষা সহজ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১৪