মিষ্টি স্বাদের মুখোরোচক বর্ণিল রঙের আম পছন্দ করে না এমন মানুষ হয়তো একজনও খোঁজে পাওয়া যাবে না । আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুনে ও বেশ সমৃদ্ধশালী। সেই জন্যই হয়তো আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা । জেলার সবচেয়ে বড় আমবাজার শিবগঞ্জের কানসাট । কানসাট শুধু দেশের সবচেয়ে বড় আম বাজারেই নয়, এটি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বেচাকেনার বাজারও। মে-জুন মাস কানসাটের আমবাজারের ভরা মৌসুম । এই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমে পরিপূর্ন থাকে। মাঠজুড়ে শুধু আম আর আম ।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০-৪০০ আড়ত বসে আম বেচাকেনা করার জন্য। শুধু তাই নয়, মাঠ পেরিয়ে শিবগঞ্জ-সোনা মসজিচদ মহাসড়কের কানসাট বাজারের উভয় দিকে অন্তত ৩ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে আমের ডালা নিয়ে বিক্রির জন্য কৃষক দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিদিন এসব কৃষকের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত বেপারি, শত শত আমের আড়ৎ ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বাজারে চলে আমের বিকিকিনি। আমের সময়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই এখানে হাট বসে।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক আমের বাজার থাকলেও কানসাট আমের বাজার পাইকারী বাজারের জন্যে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। এ যেন এক আমের স্বর্গ রাজ্য। আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। আর এ আম বাজার থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার উপরে। আমের দেশে দেখতে পাবেন সারি সারি সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ভটভটির ওপর বড় বড় ডালিভর্তি সুস্বাদু জাতের লোভনীয় ক্ষীরশাপাতি, লক্ষ্মণভোগ, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, বোম্বাই, ফজলি ও আশ্বিনা সহ গুটিজাতের নানা রকমের হাজার হাজার মণ আম। দৃষ্টিনন্দন রকমারী আমের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে মুর্হূতে। কাঁচা- পাকা আমের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ভুলে যাবেন র্দীঘ যাত্রাপথের ক্লাান্তি। আম বাজার ঘুরে দেখার সাথে সাথে আপনি চাইলে কিনে খেতে পারবেন নানা রকম তরতাজা পাকা আম। এছাড়া ঝুড়িভর্তি করে আম কিনে নিতে পারবেন নিজের জন্যে।
দেশে বিদেশে আমের জন্য একনামে রাজশাহী জেলা সুখ্যাতি অর্জন করলেও বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন কথা বলে। আম চাষের প্রধান কেন্দ্র হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। মোট আমের ৬০ ভাগ উৎপাদিত হয় দেশের সীমান্তবর্তী এই জেলায়। এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এরপরে আসে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলার অবস্থান। রাজশাহী জেলার মধ্যে বিশেষ করে আমের চাষ হয় বাঘা, বাগমারা, পুঠিয়া, চারঘাট, দুর্গাপুর ও পবা উপজেলায় ।
▪ কখন যাওয়ার উপযু্ক্ত সময়ঃ
আমি গত বছর কানসাটে গিয়েছিলাম আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তখন আমের সিজন প্রায় শেষ বললেই চলে। এত বড় বিশাল বাজার পুরাটায় ফাঁকা থাকতে দেখেছি। ঐ সময় হাতেগনা কয়েকটি আমের ঝুড়িভর্তি সামান্য সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি ছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমের রাজ্যের আসল সৌন্দয্য দেখা হতে অনেকটা বঞ্চিত হয়েছি।
আম পরিপক্ক হবার পর থেকেই মূলত এই বাজারে আম আসা শুরু করে। মে-জুন মাস কানসাট যাবার সবচেয়ে উপযুক্ত সময। এই সময চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমে পরিপূর্ন থাকে। তবে জুন মাসের পুরো সময় মূলত সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। এছাড়া জায়গাটিতে আরো আছে ঐতিহাসিক প্রাচীন গৌড়ের নানান ঐতিহাসিক স্থাপনা। আমের মৌসুমে তাই ঘুরে আসতে পারেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে। সুস্বাদু আমের স্বাদ নেওযার সাথে সাথে প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো ঘুরে দেখা এই যেন একঢিলে দুই পাখি শিকার করা।
▪ আম বাজার যাওয়ার উপায়ঃ
চাঁপাই নবাবগঞ্জ যাবার সহজ উপায় বাসে করে যাওয়া। ঢাকার কল্যানপুর ও গাবতলী থেকে এসি ও নন এসি বাস সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যায়। এসব বাসে আপনি সরাসরি কানসাট চলে যেতে পারবেন অথবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে নেমে সেখান থেকে ২১ কিলোমিটার দূরের কানসাটে অন্য কোন লোকাল বাহনে যেতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে রাজশাহী গিয়ে সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যাওয়ার বাসে করে যেতে পারবেন। তবে একদিনের ভ্রমণ করতে চাইলে সরাসরি বাসে যাওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে আগের দিন রাতে রওনা হয়ে পরিদিন সকালে পৌঁছে যাবেন, সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে পারবেন।
▪ থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্তঃ
আপনার যদি রাতে থাকার প্রয়োজন হয় সেইক্ষেত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে থাকার জন্যে মোটামুটি মানের বেশকিছু হোটেল আছে। তবে পরিবেশ তেমন ভাল না। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনার রাজশাহী শহরে চলে আসতে হবে। রাজশাহী শহরে আপনার বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল ও খাবার রেস্টুরেন্ট পাবেন।
● তিন চাকার এত বড় ট্রাক সাথে গোল ব্রেক দেখে অবাক হলাম , বাঙালীর সৃষ্টিশীলতা যাকে বলে ●
▪ আশে-পাশের দর্শনীয় স্থান
আম বাজারের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন আম বাগানে ঘুরে দেখতে পারবেন। বড় বড় কিংবা ছোট ছোট গাছের চমৎকার সুসজ্জিত্ব বাগানগুলো আপনার নজর কাটবে। চাইলে বাগান থেকেও নিজ হাতে পেরে আম কিনে নিতে পারবেন। এছাড়া হাতে সময় থাকলে কানসাটের কাছেই কানসাট জমিদার বাড়ি ( দেখার মতো কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরা বাড়ি বেদখল হয়ে গেছে। প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাবে ধ্বসং হওয়ার উপক্রম। কানসাট জমিদার বাড়ী শুধু নামেই ঠিকে আছে ) ও কানসাট আম বাজার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার গেলে সড়কের পূর্ব পাশে দেখা যাবে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসেবে খ্যাত ছোট সোনা মসজিদ আরও আছে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের আলপনা গ্রাম টিকইল। কানসাট থেকে নাচোল প্রায় ৩৫ কি.মি. যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টার মতো। চাপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে ২৪ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থান টিকইল গ্রামের।
● আম দেখে দরদাম করছি, দাম শুনে আক্কেল গুডুম ! ঐ সময়ে ঐ দামে চট্রগাম শহর থেকে আম পাওয়া কোন ব্যাপার না ●
● ভরা মৌসুমে আম বাজারের দৃশ্যরূপ ●
● সাইকেলে করে ঝুড়ি ভর্তি আম বাজারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ●
● দেশের বাহিরে আম রপ্তানী করার জন্য মোড়কীকরন করা হচ্ছে ●
রাজশাহী ভ্রমণের দর্শর্নীয় স্থান সমূহঃ
● উত্তরবঙ্গের অসাধারণ কারুকার্যময় পুরাকীর্তি !
● রাজশাহীর আরেকটি ঐতিহাসিক সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন !
নাটোরের চলনবিল (Chalan Beel)
কবি গুরুর ‘নাগর নদী’
পতিসর রবীন্দ্র কুঠি বাড়ী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস (রাবি)
সুত্রঃ প্রথম ও শেষের তিনটি ছবি ইন্টারনেট থেকে বাকি সবগুলো ছবি নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৮