বর্ষার ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইতিহাস ঐতিহ্য দেখার অভিলাষে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত চমৎকার সব স্থাপনা আর নিদর্শন দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল গত বছর। হাতে ছাতা কাধেঁ ব্যাগ সাথে রাস্তায় জমে থাকা অপরিষ্কার পানির টইটুম্বর ও দমাতে পারেনি সেই দিনের পথচলা। কখনও বৃষ্টির ঝাপটায় হয়েছি ভিজে সিক্ত । কখনও বা যথাসমযে গাড়ি না পেয়ে অপেক্ষায় হয়েছি বিরক্ত । রোদ বৃষ্টির এমন খেয়ালিপনা সত্ত্বেও সেদিন শেষ করে এসেছিলাম রাজশাহী ভ্রমণ । রাজশাহী ভ্রমণের প্রথম ঐতিহাসিক স্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ্ এর ছোট সোনামসজিদ ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আজ আপনাদের নিয়ে যাবো পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির আঙিনায়। অসাধারণ কারুকার্যময় গোবিন্দ মন্দিরের সাথে মিল রয়েছে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের।
● ইতিহাস:
পুঠিয়া পাঁচআনি জমিদার বাড়ি অঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। একটি উচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত বর্গাকার নির্মিত মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে আছে একটি কক্ষ ও চার কর্ণারে রয়েছে ৪টি বর্গাকৃতির ছোট কক্ষ। গর্ভগৃহের চারপাশে ৪টি খিলান প্রবেশ পথ আছে। এটির উপরে একটি ফিনিয়েল বিশিষ্ট চুড়া আকৃতির ছাদ আছে ও কার্নিশ ধনুকের ন্যায় বাকানো। দেয়ালের ফলক গুলোতেও যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন হিন্দু দেব দেবীর চিত্র, সংস্কৃত ভাষায় রচিত পোড়ামাটির ফলক দ্বারা সজ্জিত। গোবিন্দ মন্দির ১৮২৩ থেকে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে মহারাণী ভুবনময়ী দেবী কর্তৃক নির্মিত হয়। গোবিন্দ মন্দিরের অবস্থান পুঠিয়া রাজবাড়ির ছয়টি মন্দিরের মধ্যে সর্বনিকটতম।
● অবস্থান:
রাজশাহী শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ির সবচেয়ে কাছে এই মন্দিরের অবস্থান। রাজবাড়ির পেছনের অংশে এই মন্দিরের একমাত্র মূল প্রবেশপথ। মন্দিরের পেছনে মহারাণীর গোসল-ঘাট। অন্যপাশে রাজবাড়ি, এবং রাজবাড়ির বিপরীত পাশে বর্তমানে রয়েছে ভূমি অধিদপ্তরের কার্যালয়। মন্দির এলাকার ভেতরেই রয়েছে কাছারিঘরের কর্মচারিদের জন্য প্রস্তুতকৃত ভবনের ধ্বংসাবশেষ।
▪ সংরক্ষনের অভাবে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম পাশে অবস্থিত স্থাপনা ▪
● অবকাঠামো:
মন্দিরটি মূলত ইট দ্বারা নির্মিত, বহিঃ দেওয়ালে রয়েছে পোড়ামাটির চিত্রফলক। এসব চিত্রফলকে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। বর্গাকার এ মন্দিরের প্রতি বাহু ১৪.৪৭মিটার এবং উচ্চতায় প্রায় ১৮.২৮ মিটার। পঞ্চরত্ন স্থাপত্য পরিকল্পনায় এ মন্দিরের চারকোণে চারটি ও কেন্দ্রে একটি করে মোট পাঁচটি শিখর বা রত্ন আছে। শিখরগুলো ক্ষুদ্রাকার, চৌচালা আকারে নির্মিত। প্রথম তলার প্রতি পাশে ৩টি করে প্রবেশ পথ রয়েছে, প্রতিটি প্রবেশপথের উপরাংশে রয়েছে বহুমুখী খিলান। মন্দিরের ছাদের কোণগুলো আংশিক বাঁকানো। ২৫০ বছর পুরানো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্রফলক দেখে ধারণা করা হয়, স্থাপনাটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত৷
▪ পোড়া মাটির ফলক ▪
● কোথায় থাকবেন:
পুঠিয়াতে তেমন ভাল কোন থাকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। রাজশাহী সদর খুব কাছে হওয়াতে রাজশাহীতে থেকে পুঠিয়া ঘুরতে গেলে বা পুঠিয়া ঘুরে রাজশাহীতে গিয়ে থাকা যাবে খুব সহজে। রাজশাহীতে বিভিন্ন মানের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। পুঠিয়া যদি থাকতেই চান তবে, থাকার জন্য বেছে নিতে পারেন পুঠিয়া জেলা পরিষদের ডাক-বাংলো। জেলা পরিষদ থেকে ডাকবাংলোর কক্ষ বরাদ্দ নিতে হবে আগে থেকে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি বেসরকারী আবাসিক হোটেল রয়েছে।
▪ অসাধারণ কারুকার্যময় দেয়াল ▪
▪ পোড়ামাটির ফলক দ্বারা সাজানের যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন হিন্দু দেব দেবীর চিত্র ▪
রাজশাহী ভ্রমণের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
রাজশাহীর আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান ছোট সোনা মসজিদ (Choto Sona Mosque)
এশিয়ার বৃহত্তম কানসাট আম বাজার
পতিসর রবীন্দ্রকুঠি বাড়ী
কবি গুরুর নাগর নদী
নাটোরের চলনবিল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস (রাবি)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৫