শেষ রাতের ঘন কুয়াশা ভেদ করে ভোরের আলোময় পরিবেশটা হয়ে ওঠছে ধীরে ধীরে মাধুর্যময়। দূর থেকে ভেসে আসছে পাখিদের কলকাকলি। নদীর মৃদু ছন্দময় ছল-ছল ধারা । সূর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে মানুষের কলরোল বাড়ছে পাল্লা দিয়ে । ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে কচ্ছপ গতিতে বয়ে চলেছে ছোট-বড় হরেক রকমের ডিঙি নৌকা। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দর্শনার্থীদের জন্য থাকা স্থায়ী বেঞ্চে বসে দেখছিলাম চারপাশের অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য। নদের চলমান স্বচ্ছ পানিতে আলোর স্ফুটিক দেখাচ্ছিল ভিন্নরকম সুন্দর। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। পাখিদের ক্লান্ত উড়াউড়ি। নদীতে পর্যটনশীল পালতোলা নৌকা। এমন মনোরম দৃশ্য! যা পর্যটকদের নয়ন জুড়ানোর জন্য যতেষ্ট।
উদ্যানের বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে ঝরছে সোনামাখা আলোর বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন বিনোদন পিয়াসীরা। কেউ চাতালে বসে, কেউ সবুজ ঘাসে শুয়ে স্নাত হচ্ছিলেন ভোরের সজীবতায়। গাছের ফাঁকে ফাঁকে নাচতে থাকে সারি সারি আলোর মিছিল। চমৎকার একটি সবুজ পরিবেশ। ওজন কমানোর জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ে হাটঁছে বার বার পার্কের এপাশ থেকে ওপাশে। পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়া গোলাকার সরু রাস্তা দিয়ে ।
তরুন থেকে বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত শারীরিক ব্যায়ামে। পার্কের ভিতরে বসেছে ভ্রামমান খাবারের দোখান, ডায়েবেটিস রোগীর জন্য সুগার পরীক্ষা কেন্দ্র ও ছোটদের জন্য নাগর দোলা সহ আছে যাবতীয় সব আয়োজন।
দুই পাশে সবুজের সমারোহ। ভ্রমণপিয়াসীদের ছোটাছুটি। কেউবা ক্যামেরায় প্রিয় কোনো মুহুর্ত বা মনের রাখার মতো ফ্রেমের সন্ধানে। নদীর তীরে কত রকম কারুকাজ। মাটির আস্তরণ দেখে বোঝা যায়, পলি জমে জমে গড়ে ওঠেছে এই ভূখণ্ড। একটুখানি ভিতরেই গ্রামীণ পরিবেশ। প্রকৃতির অবারিত নির্মল সান্নিধ্য। পার্কের ফুল বাগানে ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি ।
একটু একটু করে নিভে আসছিল আলো। নদীর পানিতে নানান রঙের খেলা। পরিবেশটা হয়ে ওঠে মায়াবী। আলো-আঁধারিতে নদীর এই নির্জনতায় নিজকে উজাড় করে দিতে মন চায়। মেঘের রঙের রঙিন হতে মন চায় বার বার।
বিকেলের দিকে পার্কে বেশ লোকজন হয়। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় লেগে যায়। সুদৃশ্য টাইলের বেঞ্চি পাতা আছে অনেক। পার্কের পরিবেশ ও বেশ চমৎকার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সাজানো-গোছানো। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা নেই। বাগানের পাশে ঘন ঘাসের চওড়া আসন; তবুও নদের ঠিক কিনারে, স্ল্যাবের গায়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকাতে যেনো অন্য এক মজা। বাতাসটা সোজা গায়ে এসে লাগে। হিম হিম বাতাশ তখন ভালো লাগে ভীষণ।
সুন্দরে চোখ পড়ে। চোখ জুড়ায় যতদুর দৃষ্টি যায়। এই ব্রহ্মপুত্রের ধার ঘেঁষে দাঁড়ালে পৃথিবীর অন্যত্র নদ-নদীর যতো সৌন্দর্য আছে , সব তুচ্ছ হয়ে যায়। এই সুন্দর এক অপার্থিব প্রাচুর্যের ভাণ্ডার নিয়ে জেগে থাকে প্রাণে প্রাণে।
ওই পারের বিস্তীর্ণ চরে ফসলের ক্ষেত, স্থানীয়দের বসতি এপার থেকেই অসাধারণ লাগে। ওপারে গেলে তো কথাই নেই। ওখানে অন্য এক সুন্দরের বিস্তার। একেক ঋতুতে একের দৃশ্যের আয়োজনে নতুন করে সেজে উঠে এই নদ। সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে শরৎ ঋতুতে। শরতে এপারে তেমন কাশফুল হয়না। কিন্তু ওপারে দুধসাদা কাশফুলের মনোরম সজ্জ্বায় থৈ-থৈ করে চারপাশ।
◊◊ শিল্পাচার্য জয়নুলের সংগ্রহশালা ◊◊
◊◊ শিল্পাচার্য জয়নুলের প্রতিকৃতি ◊◊
◊ শীত মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় পলি মাটির চর দেখা যাচ্ছে ◊
◊ পার্কের ভিতরে স্মৃতি স্তম্ভ ◊
▪ এক নজরে ময়মনসিংহে অবস্থিত দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
জমিদার বাড়ী ও ছানা-চিনিতে তৈরী দেশসেরা মণ্ডা
কালের সাক্ষী আলেকজান্ডার ক্যাসেল
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক ‘শশী লজ’
বাকৃবি সৌন্দর্য ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৬