জমিদার বাড়ীর কথা শুনলে চোখের সামনে ভেসে্ উঠে ঢাল তলোয়ার ও দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা যার পরতে পরতে লেগে থাকে হাজার বছরের ইহিহাস ও এতিহ্যের ছোঁয়া। সেই সময়ের রাজকীয় বিলাসিতা আর শক্তি সামর্থ্যের অনন্য দৃর্শ্যপট। যা দেখে শুধু নয়ন জুড়ায় না, ইতিহাস সর্ম্পকে জ্ঞানের পরিধিও সমৃদ্ধ করে। ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছার রাজবাড়ীর অবস্থান।
জমিদার আচার্য চৌধুরী বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন । আচার্য চৌধুরী বংশ শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরম্নষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবসত্ম নিয়েছিলেন। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে মুক্তাগাছা শহরসহ মুক্তাগাছা উপজেলার বেশিরভাগই ছিল আলাপসিং পরগণার আওতার্ভূক্ত।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর ৪ ছেলে বগুড়া থেকে আলাপসিং এস বসবাসের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর এই ৪ ছেলে হচ্ছে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম। বসতি স্থাপনের আগে তারা এ পরগণার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ফিরে দেখেন এবং বর্তমান মুক্তাগাছা এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য মনস্থির করেন।
◊ অবহেলায় সংস্কারহীন অবস্থায় ধুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকা টিন শেডের জমিদার বাড়ীর সামনে ◊
◊ জমিদার বাড়ীর দেয়াল খসে আস্তর পড়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ◊
সে সময়ে আলাপসিং পরগণায় খুব একটা জনবসতি ছিলনা। চারদিকে ছিলো অরণ্য আর জলাভূমি। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্যের ৪ছেলে ব্রহ্মপূত্র নদের শাখা নদী আয়মানের তীরবর্তী স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন। জমিদারদের পরিত্যক্ত সেই বাড়ীটি সহজেই পর্যটকদের নজর কাড়ে।
◊ দেরীতে হলেও কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজ শুরু করেছে। পিছনের দেয়ালটি সংস্কার প্রায় শেষের দিকে। ◊
◊ উন্নয়নের ছোঁয়ায় জমিদার বাড়ী পর্যায়ক্রমে তার হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে ◊
◊ ঠিক দুপুর বেলার খাড়া রোদের তীব্র গরম উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি সংস্কার কাজ চলমান জমিদার বাড়ীর সামনের অংশে ◊
◊ বসে আছি ক্লান্ত দেহে জমিদার বাড়ীর পেছনের অংশ, টিনশেডে নির্মিত দু’তলা ঘর যা জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে ◊
◊ টিনশেড পেরিয়ে তার পিছনের জমিদার বাড়ীর শেষ অংশ যা দীর্ঘদিনের অযত্ন অবহেলায় শ্যাওলা, লতা-গুল্ম জন্মে পুরা অবকাঠামো ধ্বংসের পথে ◊
◊ জমিদার বাড়ী শেষ সীমানা দেখে বের হওয়ার সময় ◊
⌂ মুক্তাগাছার মণ্ডা বাংলাদেশের ঐতিহ্য
এদেশে মিষ্টির ঘরানা তৈরি হয়েছে যুগ যুগ ধরে। মিষ্টি শিল্পের ঐতিহ্য লালিত হচ্ছে বংশ বংশানুক্রমে। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, নেত্রকোনার বালিশ, পোড়াবাড়ীর চমচমের মতোই মুক্তাগাছার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে মুক্তাগাছার গোপালপালের মণ্ডা।
◊ মুক্তাগাছার গোপালপালের মণ্ডার দোখানের বর্তমান অবস্থা ◊
◊ মুক্তাগাছার গোপালপালের মণ্ডার দোখানের পূর্বের অবস্থা ◊
মুক্তাগাছার মণ্ডা কেন বিখ্যাত- এ ধরনের প্রশ্ন করা নিরর্থক। মিষ্টির জগতে মণ্ডার অবস্থান কিংবদন্তিতুল্য। বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশের ভোজনবিলাসী বিশেষ করে মিষ্টির প্রতি দুর্বল মানুষের কাঙ্ক্ষিত বস্তু মুক্তাগাছার মণ্ডা। জমিদার বাড়ি দেখতে এসে এই মণ্ডার স্বাদ না নিয়ে গেলে যেন ভ্রমণটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এখানে এসেছেন অথচ প্রিয়জনদের জন্য মণ্ডা নিয়ে যাননি এমন লোক খোঁজে পাওয়া খুব কঠিন।
ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে মুক্তাগাছার গোপাল পালের মণ্ডা। যুগ যুগ ধরে এর ঐতিহ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে এর সুনাম। ভোজনবিলাসী বিশেষ করে মিষ্টির প্রতি দুর্বল মানুষের কাঙ্ক্ষিত বস্তুর নাম মুক্তাগাছার মণ্ডা। মিষ্টির জগতে এটি এক অনন্য। একবার না খেলে বোঝা যাবে না এর কী স্বাদ। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিষ্টিপাগল শত শত মানুষ ছুটে আসে মুক্তাগাছায় মণ্ডার স্বাদ নিতে। স্থানীয়ভাবে বিয়ে, জন্মদিন, অতিথি আপ্যায়নে গোপাল পালের মণ্ডা নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নামিদামি অনুষ্ঠানেও নেওয়া হয় মুক্তাগাছার মণ্ডা।
◊ মণ্ডা নিয়ে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত বিশেষ পাতা ◊
□ মণ্ডা তৈরীর প্রক্রিয়া ও উপাদানঃ
কড়া আগুনে গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে প্রথমে তৈরি করা হয় ছানা। একটি কাঠের পাত্রে রেখে গরম এ ছানা ঠাণ্ডা করা হয়। পানি ঝরে যাবার পর ছানার সঙ্গে পরিমাণমত চিনির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে হাতে চ্যাপ্টা করে তৈরি করা হয় বিশেষ এক মিষ্টি। নাম মণ্ডা। প্রক্রিয়াজাত করার পর দানাদার ও সামান্য আঠালো এ মণ্ডা মোড়ানো হয় ওয়েল পেপারে। এরপর বিক্রির উদ্দেশ্যে ট্রেতে সাজিয়ে ও কার্টুনে ভর্তি করে রাখা হয়।
বাড়ির যে ঘরে মণ্ডা তৈরি করা হয় সেই ঘরে কারো প্রবেশাধিকার নেই। এমনকি বাড়ির কোন নারীও সেই ঘরে প্রবেশ করতে পারেন না। এ বিষয়ে গোপালপালের বর্তমান বংশধররা বলেন, মণ্ডার স্বাদের অক্ষুণ্নতা এবং পবিত্রতা বজায় রাখার জন্যই তারা এই কঠোর নিয়ম অনুসরণ করেন। এ গোপনীয়তা প্রসঙ্গে জানা যায় যে, পূর্বপুরুষের নির্দেশক্রমেই দীর্ঘকাল ধরেই এই নিয়ম পালন করা হয়। এমনকি গোপাল পালের সেই আসল উনুন বাদ দিয়ে জমিদার আমলে একবার মণ্ডা তৈরি করা হলেও সেই প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়নি।
দুধের সর আর চিনি দিয়ে তৈরি সাদা নরম কাগজে মোড়ানো প্রতি মণ্ডার দাম ২০ টাকা এবং ২০টিতে এক কেজি। এক কেজি মণ্ডার দাম ৪০০ টাকা। স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত রাখা যায় এ মণ্ডা। স্বাদও অপরিবর্তিত থাকে। ফ্রিজে রাখা যায় দীর্ঘদিন। মণ্ডা যারা বিদেশ নিতে চান তারা স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারবেন। স্থানীয়দের মতে, প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ কেজি মণ্ডা তৈরি হয় এ কারখানায়।
◊ কাচের কারুকার্য সোকেচে কাঠ দিয়ে তৈরি মণ্ডার প্রতিষ্ঠাতা গোপালপালের আবক্ষ মূর্তি সযত্নে রাখা আছে এখনো ◊
প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে গোপালপালের মণ্ডার দোকান খোলা থাকে। আর দেরি কেন, আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডা খেতে আজই চলে আসুন মুক্তাগাছায়!
□ চলুন জেনে নিই মণ্ডা তৈরির পেছনে চমৎকার একটি ইতিহাসঃ
মণ্ডার প্রতিষ্ঠাতা গোপাল পালের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৮২৫ সাল। গোপাল পালের বয়স তখন ২৫ বছর। মণ্ডার আবিষ্কারক গোপাল পাল এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে এ মণ্ডা তৈরির নির্দেশনা ও ফর্মুলা পেয়েছিলেন। মিষ্টি বানানোর কৌশল শেখানোর ফাঁকে ওই সন্ন্যাসী তাকে বলেছিলেন, একদিন এ মিষ্টি জগতে খ্যাতি ছড়াবে। এরপর থেকে গোপাল পাল মিষ্টি বানানোর কাজ শুরু করেন। অন্য একদিন এক সন্ন্যাসী এসে তাকে চুলা বানিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, যুগের পর যুগ ওই চুলাতেই মিষ্টি তৈরি করতে হবে। এর বাইরে মিষ্টি তৈরি করতে গেলে মিষ্টির স্বাদ থাকবে না। এখনও ওই চুলাতেই মণ্ডা বানানো হচ্ছে।
পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায় তার উত্তরসূরীরা মণ্ডা তৈরিকে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে নেন। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ওই সময়ে গোপাল পালের বানানো এ মণ্ডা খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।
মুক্তাগাছার মণ্ডা এক প্রকার সন্দেশ। চ্যাপ্টা আকৃতির এ মণ্ডা তৈরির ফর্মুলা এখন পর্যন্ত ওই পরিবারটির বাইরে যায়নি। এ মিষ্টান্ন তৈরির কৌশলও বেশ গোপনীয়। বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র ও চমকপ্রদ। একেবারেই নরম এ মণ্ডা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।
এ মিষ্টির মূল কারিগর গোপাল পালের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বংশধর পুত্র রাধানাথ পাল, তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পাল, চতুর্থ বংশধর দ্বারিনাথ পাল মণ্ডা তৈরি করেন। বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্ম চলছে। পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পালও মণ্ডা তৈরিতে কৌশল সীমাবদ্ধ রাখেন। তার মৃত্যুর পর ভাই রবীন্দ্র নাথ পাল পারিবারিক এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
মুক্তাগাছার শেষ জমিদার শ্রী জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী তার ‘আমি’ বইটির প্রথম খণ্ডের ২৩ ও ২৪ নম্বর পাতায় লিখেছেন, মুক্তাগাছার মণ্ডা প্রসিদ্ধ। মণ্ডা এক প্রকারের সন্দেশ। কেবল ছানা ও চিনি দ্বারা প্রস্তুত হয়। তবে ইহার ‘পাকের’ ভিতর এমনই একটি বৈশিষ্ট্য আছে যাহা অন্য কোথাও হয় না। মণ্ডার দোকানের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল পাল।
গোপাল পালের পঞ্চম বংশধর প্রয়াত শ্রী রমেন্দ্র নাথ পাল মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মণ্ডা নিয়ে তাদের প্রকাশিত এক আলেখ্যে মণ্ডার বর্ণনা করেন এভাবে, মণ্ডা মিঠাই, মিষ্টান্ন, মিষ্টি যে নামেই বলি তা শুধু খাদ্যদ্রব্য হিসেবেই নয়, বরং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি হিসেবেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
□ দেশবিদেশে প্রশংসা প্রাপ্তি ও সুনাম অর্জনঃ
রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, ১৯৫৩ সালে মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীতেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরীর নিজস্ব প্যাডে তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পালকে লেখা প্রশংসাপত্রটি সহ রূপার প্লেটে খোদাই করা রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দেয়া প্রশংসাপত্রসহ আরো অনেক প্রশংসাপত্র পাকিস্তান আমল পর্যন্ত দোকানের দেয়ালে টাঙানো ছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্য- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আক্রমণ ও লুটপাটে ওসব প্রশংসাপত্র চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়।
স্বপ্নপ্রাপ্ত এই মণ্ডা খেয়ে লিখিত ও অলিখিত হাজারও প্রশংসায় ধন্য হয় গোঁপাল পাল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক আলোচনা ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজে এ জমিদার বাড়িতে আগত ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গ গোঁপাল পালের এই মণ্ডা খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। এদের মধ্যে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বিখ্যাত চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ও নেতাজী সুভাষ বসুর নাম উল্লেখ করা যায়।
এরমধ্যে রাজা শ্রীকান্ত আচার্য চৌধুরী একবার রাশিয়ার বিপ্লবী নেতা স্ট্যালিনের জন্য মণ্ডা পাঠালে মণ্ডা খেয়ে স্ট্যালিনও রাজা শশীকান্তের কাছে গোঁপাল পালের মণ্ডার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাপত্র পাঠান।
অপরদিকে পাকিস্তান আমলে মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চীন সফরকালে মুক্তাগাছার মণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন আরেক বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের জন্য।
জানা যায়, মাও সেতুংও এই মণ্ডার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। এভাবে জীবদ্দশাতেই বিরল এই মণ্ডার আবিষ্কারকের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারত উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে। পরবর্তীতে এ তালিকায় আরও যুক্ত হন তৎকালীন ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরো অনেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও গোঁপাল পালের মণ্ডার দোকানে এসেছিলেন। মণ্ডা খেয়ে তিনিও এর প্রশংসা করে গেছেন বলে জানান রবীন্দ্রনাথ পাল। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানের কথাও যুক্ত করেন তিনি।
এছাড়াও চলচ্চিত্র জগতের নায়ক রাজ রাজ্জাক, কবরী, ববিতা, শাবানা, সংগীত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদ, আবুল খাঁয়ের, আসাদুজ্জামান নূর, বুলবুল আহমেদ, অমল বোস, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন দূরদূরান্ত থেকে এসে গোঁপাল পালের মণ্ডা খেয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান হাসিমুখে।
Ω এখানে বলে রাখা ভালঃ
মুক্তাগাছার মণ্ডার ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে এক শ্রেণীর অসাধু মিষ্টি ব্যবসায়ী গোপালের ভাণ্ডার, গোপালের মণ্ডাসহ নানা নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ভোজন রসিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এতে মণ্ডার ঐতিহ্য ম্লান হচ্ছে দুর দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ও মণ্ডার আসল স্বাধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গোপালপালের মণ্ডার স্বত্বাধিকারীরা জানান, গোপাল পালের আদি ও অকৃত্রিম প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকানের দালানে খোদাই করে লেখা রয়েছে, ট্রেডমার্কটি দেখে মণ্ডা কিনুন। মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ দেশের কোথাও তাদের কোন শাখা, এজেন্ট ও শো রুম নাই, কিংবা বংশধর ছাড়া কোনো উত্তরাধিকার নেই। তারা পাইকারি বা খুচরা কোনো দোকানদারকে মণ্ডা সরবরাহ করেন না।
□ যাতায়াত ও দুরত্বঃ
ময়মনসিংহ বেড়াতে এলে দিনে এসে রাতেই ফেরা সম্ভব। ঢাকা থেকে সড়ক পথে ১২০ কিলোমিটার ও রেলপথে ১২৩ কিলোমিটার দূরত্ব ময়মনসিংহ জেলা হতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। সারা দেশের সাথে এখানে ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে করে বেড়ানো যায় খুব সহজে।
● বাসে করে-
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ শহরের দুরত্ব প্রায় ১২০ কি.মি বা ৭৫ মাইল। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস আছে। মহাখালী বাস স্টপিচ থেকে এনা বা সৌখিন বাসে করে যেতে পারেন ময়মনসিংহ। ভাড়া পড়বে ১৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টা।
ময়মনসিংহ শহর থেকে মুক্তাগাছা ১৫ কি.মি. বা ৯ মাইল। শহরের টাউন হল মোর থেকে আপনি (সি এন জি) ফোর স্ট্রোক বা অটো রিকশা করে যেতে পারেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ী। যেতে সময় লাগবে ২৫-৩০ মিনিট। খরচ পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা।
● ট্রেনে করে-
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে যেতে পারেন ময়মনসিংহ। যেতে সময় লাগবে প্রায় 3 ঘন্টা। আসন ভেদে ভাড়া পড়বে যথাক্রমে- শোভন, শোভন চেয়ার, প্রথম শ্রেনী,স্নিগ্ধা, এসি সিট ১১০, ১৩০, ১৭৫, ২৪৮, ২৯৯ টাকা।
□ থাকার ব্যবস্থাঃ
ময়মনসিংহ শহর ও আশে-পাশের এলাকায় থাকার জন্য পযাপ্ত হোটেল ও রেস্ট হাউস রযেছে। আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে রুচিসম্মত যেকোন হোটেলে অবকাশ যাপন করতে পারেন।
◊ একটি আধুনিক আবাসিক হোটেল, সিলভার ক্যাসেল ◊
⌂ সরকারীরেষ্ট হাউজ/ডাকবাংলোঃ
»» সার্কিট হাউস, ময়মনসিংহ
পরিচালনাকারী- জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ
»» নজরুল ভিআইপি ডাকবাংলো, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
পরিচালনাকারী- জেলা পরিষদ, ময়মনসিংহ
»» ভালুকা পরিদর্শন বাংলো, ভালুকা, ময়মনসিংহ
পরিচালনাকারী- ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ
»» বিনা গেষ্ট হাউজ এন্ড ডরমিটরী, সদর, ময়মনসিংহ
পরিচালনাকারী- বিনা হেড অফিস, ময়মনসিংহ
»» জিটিআই ডরমিটরী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।ফোনঃ০১৭১৫-৬২৬৮৭২
পরিচালনাকারী- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
◊ সিলভার ক্যাসেল হোটেলের অভ্যান্তরীন সাজসজ্জ্বা ◊
⌂ বেসরকারীহোটেল / গেষ্ট হাউজঃ
»» হোটেল আমিরইন্টারন্যাশনাল
৪৬, ৪৬/এ ষ্টেশন রোড, ময়মনসিংহ
ফোনঃ ০৯১-৫১৫০০, ০৯১-৬৩৩৭৬; ০১৭১১১৬৭৯৪৮
ই-মেইলঃ [email protected]
ওয়েব সাইটঃwww.hotelamirbd.com
»» হোটেল মোস্তাফিজইন্টারন্যাশনাল
৬/বি গঙ্গাদাস গুহরোড, ফায়ার সার্ভিসের পশ্চিম পাশে, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০৯১-৬৩৮৭০, ০৯১-৬৩৮৭১
»» হোটেল হেরা ট্রেড সেন্টার
৩৬/বি টাঙ্কপট্টি, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ০১৫৫২৪৭০৭০০
»» হোটেল খাঁনইন্টারন্যাশনাল
৩৩/এ মহারাজা রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ০৯১-৬৫৯৯৫, ০১৭১৫-২৮১৬৭৮
»» নিরালা রেষ্ট হাউজ
৬৭ ছোট বাজার, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০৯১-৫৪২৮৫
»» ঈশা খাঁ হোটেল
গাঙ্গিনারপাড়, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭২১-১৪৪৯৭৬
»» হোটেল উত্তরা
গাঙ্গিনারপাড়, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০৯১-৬৪১৮৫, ০১৭১১-৫৭৭৭০৭
»» রিভার প্যালেস
৩৩৮ তালতলা ডোলাদিয়া, খাগডহর, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০৯১-৬৬১৫০, ০৯১-৬৬১৫১, ০১৭১০৮৫৭০৫৪,
»» তাজমহল
ষ্টেশন রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১৭১৭১৩৩৪
»» হোটেল বনানী আবাসিক
২৭/এ ছোট বাজার, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭২৭-৮০৮৬৪৫, ০১৯১২-৭৫৭৩৯১
»» হোটেল হিলটন আবাসিক
৩১৯ চরপাড়া, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১০৩৬৮৫০৯
»» হোটেল নাইট ষ্টারআবাসিক
১৩/এ পুরোহিত পাড়া, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ০১৭১১৯৩১৮৩৫, ০১১৯১৩৩০১৭২
»» নিদমহল রেষ্ট হাউজ
৮ দূর্গাবাড়ী রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭৩৫২১৪৪৭০
»» মমতা রেষ্ট হাউজ
৫০ ছোট বাজার, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭২৫৭০৩৩২১
»» আজগর রেষ্ট হা্উজ আবাসিক
৬২ রামবাবু রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১১১৪২০৬৩
»» হোটেল প্রগতি আবাসিক
জেসি গুহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১৯৬৪৬৮৭০
»» প্রিন্স রেষ্ট হাউজআবাসিক
২১ হেজবুল্লাহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১১৯০৯৯৯৩
»» হোটেল শরীফ আবাসিক
১/এ জেসি গুহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭২৪৭৫৪৯৮৪
»» উজালা রেষ্ট হাউজ
১৭ হেজবুল্লাহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ৫২৩৫৫, ০১১৯০৭৯৫৫১৯
»» দি মোমেনশাহী বোর্ডিংআবাসিক
১৯৮/এ কালীবাড়ী রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১১৪৭৯৮৯০
»» নাজমা বোর্ডিং আবাসিক
২৪ এবি গুহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭১২৫৭৯৮৬১
»» তরুন বোর্ডিং
২৭ দূর্গাবাড়ী রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৭২৪৯০২৪৯৫
»» ঝর্ণা রেষ্ট হাউজআবাসিক
১৪ যাদব লাহিড়ী রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১৫৫৮৩০১৯৪৮
»» নিউ জাহাঙ্গীর গেষ্টহাউজ আবাসিক
৬২ রামবাবু রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ০১১৯০২৭৬০২৭
»» হোটেল অবকাশ আবাসিক
এবি গুহ রোড, ময়মনসিংহ।
ফোনঃ ৫৩৮৫৯
◊ খরচাপাতিঃ◊
ময়মনসিংহ শহরের থাকার মতো উন্নতমানে হোটেল হচ্ছে হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল আল হেরা, হোটেল মোস্তাফিজ, সিলভার ক্যাসেল, রিভার প্যালেস।
আমির ইন্টারন্যাশনালে এক্সজিকিউটিভ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকা, এসি ডাবল রোম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা, ননএসি ডাবল ১ হাজার ১১৩ টাকা, সিঙ্গেল ৮৬১টাকা। হোটেল আল হেরা এসি ডাবল রোম ১২শত থেকে ১৬ টাকা, সিঙ্গেল ১২শত টাকা, ননএসি ডাবল ৮০০ টাকা, সিঙ্গেল ৫০০ টাকা।
হোটেল মোস্তাফিজে এসি ডিলাক্স ২ হাজার ৫০০ শত টাকা, এসি ডাবল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সেমি ডাবল ১ হাজার ৪৫০ টাকা, সিঙ্গেল ১ হাজার টাকা, ননএসি ডাবল ১ হাজার ১০০ শত টাকা, সিঙ্গেল ৫০০ টাকা। তবে ডাবল রোমে ১৫%, সিঙ্গেল রোমে ১০% ডিসকান্ট রয়েছে। আরো কম টাকায় থাকতে চাইলে হোটেল আসাদ, ঈশা খা, নিরালায় যেতে পারেন।
▪ এক নজরে ময়মনসিংহে অবস্থিত দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান ও সংগ্রহশালা
কালের সাক্ষী আলেকজান্ডার ক্যাসেল
ময়মনসিংহ শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘শশী লজ’
বাকৃবি সৌন্দর্য ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৮