somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্নাটকায় ৪৫ দিন...

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কর্নাটকায় ৪৫ দিন…..
২৮/০৩/২০১৫

কর্নাটকায় এসেছি এর্ন্টানশিপ করার জন্য। মাইরাডা নামের একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে…। ৪৫ দিনের জন্য। ইতিমধ্যে ২৭ দিন অতিবাহিত করেছি। আর সপ্তাহ দুয়েকের মতো এখানে আছি। তারপর আবার ফিরে যাবো হায়দারাবাদে…।
এখানকার দিনগুলো ভালই কাটছে…। হায়দারাবাদে এসি রুমের টানা ক্লাস ছেড়ে, এখানে এসে ইন্ডিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের অভিঙ্গতা নিচ্ছি…। প্রকৃতি এবং দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়, তাই শিখছি। জীবন এখানে সহজ নয়…।
যেখানে আছি সেটা একটা ড্রাই এরিয়া। বছরে অল্প সময়ের জন্য এখানে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। এখানকার কৃষকেরা সারাবছর সেই বৃষ্টিটুকুর জন্যই অপেক্ষা করে থাকে…। বছরে একটি মাত্র ফসল হয়। এখানকার ৯০ ভাগ কৃষক ভূট্রা চাষ করে জীবনধারন করে…
যেখানে আছি…
কর্নাটকা স্টেট এর মোট ৩০টি জেলা। ৩০ জেলার একটি চিত্রাদূর্গা। এখানকার বাস কন্ট্রাকটররা সংক্ষেপে যাকে ডাকে দূর্গা বলে…। এই চিত্রাদূর্গা জেলার একটি তালুকের নাম হচ্ছে হলালকেরি। আমরা আছি হলালকেরিতে। কাজের প্রয়োজনে এখান থেকে প্রায়ই চিত্রাদূর্গায় যেতে হয়। হলালকেরি থেকে চিত্রাদূর্গার দূরত্ব ৩০ কি:মি:।
মাইরাডার অনেকগুলো প্রজেক্ট…। সেই অনেকগুলো প্রজেক্ট এর একটি হচ্ছে ট্রেনিং প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট এর আওতায় বিভিন্ন এসএইচজি(সেল্ফ হেল্ফ গ্রুপ) ও এনজিও কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ট্রেনিং দেওয়া হয়। শুধু ট্রেনিং দেওয়ার জন্য মাইরাডার প্রায় ৯টি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। হলালকেরিতে অবস্থিত এরকম একটি ট্রেনিংসেন্টারেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
ট্রেনিং সেন্টারের নাম মাই সিডর মাইরাডা ট্রেনিং সেন্টার। প্রায় দশ একর জায়গার ওপর ট্রেনিং সেন্টারটি । বেশ কয়েকটি একতলা-দোতলা বিল্ডিং। আর বেশ কিছু টালির ছোট-ছোট কটেজ। আমরা সেরকমই একটি কটেজে থাকি।
ট্রেনিং সেন্টারটির আশেপাশে দু কি:মি: এর মধ্যে আর কোন জনবসতি নেই। আমাদের কটেজ ট্রেনিং সেন্টারটির একটা পাশে পড়েছে। আমাদের কটেজের পেছনে ধু-ধু শুকনো ফাঁকা মাঠ। অনেক দূরে পাথরের ছোট-ছোট পাহাড়। সেই পাহাড়ের ঢাল ঘেষে নারিকেল ও সুপারির ঘন লম্বা বাগানের সবুজ সারি নেমে গেছে…।
কটেজের সামনে দিয়ে একটি পাঁকা সড়ক চলে গেছে ….। অনেকক্ষন পর-পর দু’একটি গাড়ি কিংবা অটো যাওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। সেই পাকা রাস্তা পাড় হলে ওপারে দীর্ঘ নারিকেল ও সুপারির বাগান। সেই নারিকেল ও সুপারির বাগান পাড় হয়ে গেলে নিচু এলাকা। সেখানে পানি জমে বিশাল একটা লেকের আকার ধারন করেছে। লেকের মধ্যে আমাদের দেশের বাবলা গাছের মতো ছোট-ছোট গাছ সবুজ গাছ। সকালে ও বিকালে সেখানে অসংখ্য পাখির মেলা বসে। বিশেষ করে সাদা বক ও কালো পানকৌড়ির দৌড়ঝাপ দেখতে অসাধারণ লাগে। একদিন বেশ কয়েকটি ডাহুক পাখিরও দেখা মিলল… সেই লেক পাড় হলে আবার নারিকেল ও সুপারি গাছের সাড়ি…তারপর আবার পাথরের পাহাড়…
রোদের বাড়াবাড়ি….
এখানে সূর্য মামার বেশ বাড়াবাড়ি…সারাদিন কঠিন রকমের তির্যক কিরন দিয়ে যায়। সেই তির্যক রশ্মি এতই প্রখর যে ঘর থেকে বের হওয়াই দুস্কর। তির্যক কিরন থেকে বাঁচার জন্য এখানকার পুরুষ মানুষেরা সেলাই বিহীন সাদা লুঙ্গি ও সাদা রংয়ের সার্ট পরিধান করে …।
সূর্যের তাপের কারনে সকাল-সকাল প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে অপেক্ষায় থাকি কখন বিকাল হবে। কখন সূর্যের তাপ কমবে আর ওই খোলা আকাশের নিচে গিয়ে বসব। বিকেল বেলার এই সময়টুকুর জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে থাকি…
খাবার-দাবার…
এখানকার খাবার-দাবার যা..তা… রকমের। এই খেয়ে এখানকার মানুষ কিভাবে জীবন ধারন করে এটাই আমার কাছে বিস্ময় । চাপাতি(রুটি), ভাত, ডাল আর সাম্বার(লাল রংয়ের একরকম তরল পদার্থ)। মাঝে-মধ্যে সামান্য সবজির দেখা মেলে। মাছ আর মাংস এখানে গল্পের মতো। বেশিরভাগ মানুষ ভেজিটারিয়ান… সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যেখানে থাকি সেখান থেকে নিকটবর্তী মার্কেটের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। তাই তিন বেলা ট্রেনিং সেন্টারের ছাত্রদের সাথে ভাত,ডাল,চাপাতি আর সাম্বার গলাধাকরন ছাড়া আর কোন উপায় নেই….
মি: অ্যালেক্স:
এখানে আসার পর সাউথ সুদানের একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। নাম অ্যালেক্স। বয়স ৩৬। ছেলেটি অসাধারণ। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সাথে বেশ একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। অ্যালেক্সের কথা বলার ধরনটি বেশ অদ্ভুত। বেশ ধীরে-ধীরে গুছিয়ে ইংরেজীতে কথা বলে। কোন প্রশ্ন করলে, প্রথমেই বলবে, ওকে মাই ফ্রেন্ড, দেন বাকি উত্তরটি গুছিয়ে বলবে।
অ্যালেক্স এখানে এসেছে এক বছরের জন্য। ইন্ডিয়াডাতে মাইরাডা কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে, সেটা হাতে-কলমে শেখার জন্য। নরওয়েজিয়ান ফান্ডে এখানে সে এসেছে।আমার মতো সেও তার পরিবারকে খুব মিস করছে…
আসামের দিপান্তর, আমি আর অ্যালেক্স এখন তিন বন্ধু… যেখানেই যাই তিনজন একসাথে যাই। এরমধ্যে ইন্ডিয়ার অন্যতম টুরিস্ট স্পট হোসপেট ও হাম্পিতে ঘুড়তে গিয়েছিলাম একসাথে… সে অভিঙ্গতার কথা শোনাবো আর একদিন…
জ্বোস্না রাতের অভিঙ্গতা…
ছুটির দিন। কোন কাজ ছিল না। সারাদিন কটেজের মধ্যে থেকে-থেকে বিরক্ত জমে গেছে।বাইরে বের হওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে আছি। অপেক্ষা করছি কখন রোদ কমবে…
সবেমাত্র রোদের তাপ কমতে শুরু করেছে। দূরে লাল সূর্য ডুবছে…। আমি, অ্যালেক্স আর দিপান্তর বেড়িয়ে পড়েছি। কটেজ থেকে বের হয়ে ট্রেনিং সেন্টারের গেট অতিক্রম করে পাকা সড়ক পাড় হলাম। সড়ক পাড় হয়ে ঢুকে পড়লাম নাড়িকেল ও সুপারির বাগানে। একপাশে নারিকেল বাগান ও অন্যপাশে সুপারির বাগান। মাঝখান দিয়ে পায়ে হাটা পথ। আমার হেটে চলেছি। সূর্য এখনও ডোবেনি। কিন্তু এরই মধ্যে সুপারির বাগান থেকে ঝি-ঝি পোকা ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন গভীর রাত…
আমরা পায়ে হাটার পথ ধরে হেটে-হেটে নারিকেল সুপারির বাগান পাড় হয়ে লেকের পাড়ে চলে আসলাম। আশে-পাশে জনমানবের কোন গন্ধ নেই। লেকের পানির মধ্যে ছোটছোট সবুজ গাছে সাদা বকের ঝাঁক…। ধ্যান ধরে বসে আছে। সুযোগ মতো মাছ ধরে খাচ্ছে।আশেপাশে অন্য বেশ কিছু পাখির কিচির-মিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমরা পানি ঘেষে সবুজ ঘাসের ওপড় পা ছড়িয়ে বসে আছি… পাথরের পাহাড়, নারকেল-সুপারির বাগান, ফাঁকা মাঠ, লেকের কিছুটা অংশ পাড় হয়ে কোমল, শীতল, ঝির-ঝির টুকরো-টুকরো বাতাস গায়ে এসে লাগছে… বাতাসের শীতল স্পর্শে খুব ভালো লাগছে…
সূর্য ডুবে এরই মধ্যে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে…। জ্বোস্নার আলোতে চরাচর ছেয়ে গেছে… চোখ বুজে উপভোগ করছি…প্রকৃতির এই কোমলতা। আমার পাশে বসে আছে, দিপান্তর,তার পাশে অ্যালেক্স। কারও মুখে কোন কথা নেই। কোথাও কোন শব্দ নেই। সবাই প্রকৃতির সহজ-সরল সৌন্দর্য সবটুকু উপভোগ করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছিল সারারাত এই ভাগে কাটিয়ে দেই…


১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×