বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদছিল অর্থি। হঠাৎ পাশে রাখা সেল ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে শুভ্র ফোন দিয়েছে। অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে বসে থাকে অর্থি। শুভ্রও চুপ।
কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে শুভ্রের কন্ঠ ভেসে আসে -
- বাবু?
- হুম!
- বাবুউউ?
- হুম?
- বাবু!
- আরে বলবা তো কি হইছে
- স্যরি! ( মন খারাপ করে)
- হুহ ,লাগবেনা কিছু আমার , তুমি থাকো তোমার মতো।
বলেই ফোনটা কেটে দেয় অর্থি। ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়েছে তার আজকে। একটু মন খারাপ ও। শুভ্র ছেলেটা যে কি! আজ সারাদিন ছেলেটার কোন পাত্তাই নেই!
একে তো সারাদিন একটা ফোনও রিসিভ করেনি আবার আজ বিকেলে দেখা করার কথা ছিলো, তাও করেনি। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর তার বার্থডে অথচ শুভ্র এ নিয়ে কিছুই বললোনা! বোধহয় ভুলেই বসে আছে সে। মনটা ভীষণ খারাপ অর্থির্। ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না আসছে তার অভিমানে।
বিছানার পাশে রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠেছে বিশেষ রিংটোনে। শুভ্র ফোন দিলে ওটা বাজে। অর্থি ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে চুপ করে শুনে -
এবার আর ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ নেই। শুভ্র চুপ করে আছে। অর্থিও চুপ।
দু মিনিট ধরে কোন সাড়াশব্দ নেই দুপাশ থেকে। একদম নিশ্চুপ।
কিছুক্ষণ পর শুভ্রই ফোনটা কেটে দিলো। শুভ্র নিজে ফোনটা কেটে দেয়াতে অর্থির মুখটা কেমন হয়েছে ওটা ভেবেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল সে।
আর ওদিকে , অর্থি ভেবেছিলো শুভ্র হয়তো এবার ওর বার্থডের কথা বলবে। কিন্তু কই! ফোন দিয়ে কথা না বলে টুস্ করে কেটে দিলো ফোন! প্রচন্ড অভিমানে অর্থি একসময় না পেরে হাপুস করে ঠোঁট বাকিয়ে কেঁদে দিলো।
আর মাত্র ১৫ মিনিট পর অর্থির জন্মদিন। অর্থি ভাবছে , লাগবে না আর ওর বার্থডে সেলিব্রেট করা। অর্থি লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে কান্নাভেজা চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।
বাইরে তখন অঝোর শ্রাবণ। ঝমঝম শব্দ তুলে ভীষণ বৃষ্টি ঝরছে সেই কখন থেকে। সাথে প্রচন্ড বাতাস। বৃষ্টির চাদরের ফাঁক দিয়ে একটুখানি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কেমন মন খারাপ করা একটা রাত। অথচ কত্তো সুন্দর হতে পারতো আজ রাতটা! এটা ভেবেই অর্থি আবার ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে।
ঘরের দেয়াল ঘড়িটা ১২ টা বাজার সাথে সাথে ঢং ঢং শব্দ তুলে সময় জানান দিলো। আজ অর্থির বার্থডে।
হঠাৎ করে অর্থির ফোনটা আবার বেজে উঠল। অর্থি অভিমান করে ফোনটা রিসিভ করলো না। দ্বিতীয়বার ফোন বেজে ওঠাতে অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করে কান পাতল। শুভ্র বলছে -
- হ্যালো!
- (অর্থি চুপ)
- অর্থি!
- বলো (কান্না ভেজা কন্ঠে)
- কি ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে দেখেছ!
- হু ( কেঁদে)
- ভিজবা?
- না ( কেঁদে)
- ওকে , একটা কাজ করো। জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখো , একটা ভূত!
- দুষ্টুমি করবা না একদম। তুমি আর আমার সাথে কথা বলবা না। তুমি একটা পচা , খুব পচা। ( কান্নাভেজা কন্ঠে)
- প্লিজ তাকাও ই না! প্লিজ বাবুটা।
- হু
অর্থি জানালার ফোকর দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে আসলেই কে যেন নিচে দাড়িয়ে আছে! ফোনটা কানে ধরে এক দৌড়ে সে বারান্দার দরজা খুলে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল এত্তোগুলো ফুল নিয়ে, বিশাল এক কাগজে "শুভ জন্মদিন বাবুটা!" লিখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে শুভ্র নিচে দাড়িয়ে আছে।
অর্থিকে দেখামাত্রই বাচ্চা ছেলেদের মতো লাফিয়ে শুভ্র চিৎকার করে বলতে লাগল -
- হ্যাপি বার্থডে অর্থি!!! বাবুটা!! ^_^
ফোনটা তখনো অর্থির কানে। অর্থি ডান হাতের তর্জনীটা ঠোঁটের সামনে এনে শুভ্রকে ' শশশ করে চুপ করতে বলল। পাশের রুমে ওর বাবা মা ঘুমুচ্ছে।
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে অর্থির্ , আবার কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ করে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কোণ থেকে।
কান্নাভেজা কন্ঠে বললো -
- তুমি একটা পচা। খুউউব পচা!
আবার কাঁদছে অর্থি , তবে এ কান্নায় কোন অভিমান নেই , আছে একটুকরো অকৃত্রিম পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ।
<3 <3