- অ্যাই যে! একটু সরে বসুন প্লিজ!
তরুণীর মিষ্টি গলার আওয়াজে একটু নড়েচড়ে বসে শুভ্র।
- থ্যাঙ্কস।
- নো প্রোবলেম
ট্রেনের জানালার ফাঁকে চোখ রাখে শুভ্র। হুইসেল বাজছে , এখুনি ট্রেন ছাড়বে। শুভ্র যাবে চট্টগ্রাম , ওর আপুর বাসায়। শুভ্র চুপ করে নিজের সিটে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর্।
- অ্যাই যে! শুনছেন!
শুভ্র চোখ খুলে দেখে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। পাশে বসা মেয়েটা ডাকছে তাকে।
- হুম , বলুন
- আমাকে একটু জানালার পাশে বসতে দিবেন প্লিজ?
- না
- দিন না প্লিজ? জানালার পাশে বসে মানুষ দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে ^_^
- না ,
- কেমন মানুষ আপনি? সেই কখন থেকে না না করে যাচ্ছেন? ধ্যাত্!
এই বলে মেয়েটা মন খারাপ করে বসে থাকে, শুভ্র নিরুত্তর্। কিছুক্ষণ পর শুভ্রই মেয়েটাকে ডাকে ,
- এই যে?
- কি?
- জানালার পাশে বসবেন?
মেয়েটা ফিক করে হেসে মাথা নাড়ায়। শুভ্র তাকে জানালার পাশের সিটটা ছেড়ে দেয়।
সবুজ মাঠ পেরিয়ে ট্রেন এগিয়ে চলেছে। বিকেলের সোনালী রোদ আছড়ে পড়ছে জানালার ছোট্ট ফাঁক গলে। সেই আলো মেয়েটার ফর্সা গালে পড়ছে। কেমন অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী দেখাচ্ছে মেয়েটার মুখ! শুভ্র মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে। হঠাৎ মেয়েটা অবাক চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে -
- এই দেখুন ,দেখুন!
- কি?
- দুটো হাঁস আর ওদের বাবুগুলো পানিতে ভাসছে! কি কিউট তাই না?
- হ্যা (মুচকি হেসে)
মেয়েটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। পৃথিবীর সবকিছু যেন তাকে অবাক করছে এমনভাবে অবাক হয়ে দেখছে সব।
- আরে! দেখুন দেখুন!
- হুম?
- সূর্যটা পানি বেয়ে বেয়ে আমাদের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে!
- হ্যা ( শুভ্র হেসে দেয় মেয়েটার শিশুসুলভ আচরণে)
- আচ্ছা , আপনি কি হ্যা , না ছাড়া কিছু পারেন না? আরে! আপনার নামটাই তো জানা হলো না! কি নাম আপনার?
- শুভ্র
- আমি নিম্মি। কিসে পড়েন আপনি?
- মেডিকেলে
- ও। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে।
- হুম
- আবার হুম!! (রেগে)
শুভ্র হেসে দেয় মেয়েটার রাগী রাগী মুখ দেখে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। গাল দুটো হালকা লাল হয়ে আছে মেয়েটার্। মেয়েটার প্রতি কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করছে শুভ্রর মাঝে।
শুভ্র জিজ্ঞেস করে -
- কোথায় থাকেন আপনি?
- উত্তরা , আপনি?
- ধানমন্ডি।
- আরে ওখানে তো আমি প্রায়ই যাই। আমার ফ্রেন্ডের বাসা ওখানে। কে কে আছে বাসায়?
- আব্বু ,আম্মু আর ছোটভাই। আপনার?
- আমার বাবা-মা কেউ নেই। ছোটবেলায় বাবা মা দুজনই মারা গিয়েছেন রোড এক্সিডেন্টে । তাই আমি মামার বাসায় থাকি।
মেয়েটার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় শুভ্রর। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিম্মির চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে। শুভ্র দেখছে লক্ষ্য করে মেয়েটা কাঁদো কাঁদো মুখ লুকাতে ঝট করে জানালার দিকে ফিরিয়ে নেয় চোখ।
কিছুক্ষণ পর্ হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে এদিকে ফিরে মেয়েটা বললো
- এই যা! মন খারাপ করে দিলাম আপনার! ( আস্তে করে হেসে)
- না , ঠিক আছে।
- আমি কি বলুনতো! ধ্যাত্!
কিছু না বলে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে শুভ্র।
হঠাৎ ভীষণ জোড়ে হুইসেল বেজে উঠল। ফুলবাড়িয়া স্টেশন এসে গিয়েছে। শুভ্র নামবে এর পরের স্টেশনে। হুইসেল এর শব্দ শুনে নিম্মি হেসে বলে -
- এই রে! এসে পড়লাম , নামতে হবে এখন। ভালো থাকবেন।
- হুম.
শুভ্রর মনটা খারাপ হয়ে যায় আবার্। সে আস্তে করে বিদায়ের হাসি হাসে। নিম্মি ব্যাগ গুছিয়ে নেমে যায় ট্রেন থেকে। নামার সময়ও মেয়েটা মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলে ছিল।
আবার বেজে উঠেছে হুইসেলের শব্দ। ঝকঝক করে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে ট্রেন। প্ল্যাটফর্মের ওই দূরে নিম্মিকে দেখা যাচ্ছে এখনো। শুভ্র ঝাপসা চোখে তাকিয়ে থাকে ওদিকে। ট্রেনের হুইসেলের শব্দ যেন হাহাকারের শব্দ হয়ে বাজছে ওর বুকে।
বুকটা কেন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে শুভ্রর্। কেমন যেন একটা শূন্যতা অনুভব হচ্ছে!