বাংলাদেশের কোন এক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সাব্বির্। তার বাবা সরকারী চাকুরে আর মা স্বাভাবিকভাবেই , গৃহিনী। নিতান্ত আটপৌরে জীবনযাপন তাদের্। ছোট ছোট স্বপ্নপূরণ তাদের যুদ্ধজয়ের আনন্দ যোগায়। সাব্বির ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালো ছাত্র এবং বুদ্ধিমান। সে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।
অন্যদিকে , বুদ্ধিমতী ও লাজুক স্বভাবের মেয়ে, মৌমিতা। সাব্বিরদের বাসার পাশেই ওরা থাকে। ওদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস উচ্চ মধ্যবিত্ত। তার মানে , ওরা ছোটছোট স্বপ্নগুলো পূরণ করার পাশাপাশি কিছু বড় স্বপ্ন দেখার যোগ্যতা রাখে। মৌমিতা কিন্তু বেশ ভালো মেয়ে এবং সুন্দরীও বটে।
সাব্বির এবং মৌমিতা। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে ওরা। সেই প্রাইমারী স্কুল থেকে হাই স্কুল পর্যন্ত। একসাথে খেলাধুলা , ঝগড়াঝাটি , খুনসুটি , মারামারি , দুষ্টুমির সাথে সাথে ওদের বন্ধুত্ব যে কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে, জানেই না ওরা। ছোটবয়সী ভালোবাসাগুলো পবিত্র হয়।
সাব্বির যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে , ওদের স্কুলের সামনে এক ফেরীওয়ালার কাছ থেকে দশ টাকা দিয়ে একজোড়া কমদামী চুলের ফিতা কিনে মৌমিতাকে দিয়েছিলো। এটা পেয়ে মৌমিতা কি যে খুশি হয়েছিলো! মৌমিতার মুখের টোল পড়া হাসি দিকে সাব্বির চেয়েছিলো অপলক। সে দৃষ্টিতে কোন কাম' ছিলো না , ছিলো না কোন স্পর্শকাতর ইচ্ছা , ওই দৃষ্টিতে ছিলো কিছু নিষ্পাপ ভালোলাগা , হৃদয় ছুঁয়ে যায় এমন।
একদিনের ঘটনা। সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। মৌমিতা ওর কলেজের গেইটের সামনে দাড়িয়ে। আশেপাশে আর কেউ নেই। মৌমিতা দূরে তাকিয়ে দেখে সাব্বির ছাতা মাথায় দৌড়ে আসছে এদিকে। এসেই মৌমিতার মাথার ওপর ছাতা ধরে বললো ,
- একা একা দাড়িয়ে আছিস কেন?
- তুই আসবি তাই
- আমি আসবো তুই জানলি কি করে? ( অবাক হয়ে)
- বা রে! আপনি যে রোজ কলেজ ছুটির পর আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করেন , আমি ঠিক জানি , হুম!
- হুহ! তোকে দেখতে আমার বয়েই গেছে! কি বিদঘুটে দেখতে তুই! (হেসে)
- ইশশ! এখন ভদ্র সাজা হচ্ছে! আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস একবার! জিরাফ একটা।
সাব্বির হেসে দিলো। বললো ,
- চল্, হাঁটা শুরু করি। বৃষ্টি পড়ছে ভীষণ , তোর ঠান্ডা লেগে যাবে।
সাব্বির আর মৌমিতা পাশাপাশি হাঁটছে । সাব্বিরের এক হাত দিয়ে মৌমিতার মাথার ওপর্। সে হাতে ছাতা ধরে আছে সে।
- মৌমি?
- কি ?
- একটা কথা বলি?
- বল!
- থাক , আজ না আরেকদিন বলবো ( মন খারাপ করে)
- আচ্ছা। (অবাক হয়ে)
কিছুক্ষণ পর্।
- মৌমি?
- হুম?
- ওইইইই
- কি হইছে?
- একটা কথা বলি?
- না!
- বলি না প্লিজ???
- ন্যাকা!! সোজাসুজি বলতে পারিস না?
- আমি না তোকে ভালোবাসি! ( একটানে) ,
- ( মৌমিতা অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়ল , ওর মেরুদন্ড বেয়ে মৃদু শিহরণ বয়ে গেলো উপর থেকে নিচে, কিছু বলতে যাবে এমন সময় ……)
- দাড়া! একটা জিনিস দেখাচ্ছি!
এই বলে সাব্বির ওর প্যান্টের পকেট হাতড়ে একটা দুমড়ানো মোচড়ানো লাল গোলাপ বের করলো। মোটে পাঁচটা পাপড়ি অবশিষ্ট আছে তাতে। বের করেই মৌমিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
- ভালোবাসি তোকে মৌমি!
ফুলের অবস্থা দেখে মৌমিতা হেসেই কুল পাচ্ছেনা। মৌমিতার হাসি দেখে সাব্বির ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে রইলো হা করে। মৌমিতা হেসেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর্।
ভীষণ বৃষ্টির মাঝে দুটো ছাতা পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে। তার নিচে মানবের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে মানবী, ছুটে যায় যদি? ছাতার ফাঁক গলিয়ে বেড়িয়ে আসা মৌমিতার হাসি জলতরঙ্গের মত শোনাচ্ছে দূর থেকে , পবিত্র সে হাসি।