টুনটুনির কাছে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর মফিজের খুব মন খারাপ। খাওয়ায় মন নেই , পড়ায় মন নেই , গোসল করেছে সেই দশ দিন আগে। তবে সেদিন শার্লক হোমস মুভিটা দেখার পর মফিজ মনে মনে সংকল্প করলো , আর মেয়েদের পিছনে ঘোরা নয় , এবার মফিজ হবে দেশ বিখ্যাত সেলিব্রেটি গোয়েন্দা , আর মেয়েরা তার পিছনে পিছনে ঘুরবে , কিন্তু মফিজ মোটেও তাদের পাত্তা দিবে না , এটা ভেবেই মফিজ মনে মনে চরম পুলক অনুভব করলো।
যেই ভাবা সেই কাজ। মফিজের মনে প্ল্যান কষা হয়ে গেছে , এখন প্ল্যান মত কাজ করে পত্রিকার হেডলাইন হওয়াটাই শুধু বাকি! সারা বাংলাদেশের মেয়েরা মফিজকে পাবার জন্য ছুটোছুটি করবে! আহ্ ,আনন্দের চোটে রাতে মফিজের ঘুমই আসে না!
প্ল্যান করার পরদিন মফিজ লুঙ্গি পড়ে শার্লক হোমসের মুখোশ পরে গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে রওনা হলো। লুঙ্গি পড়া মফিজের প্যাশন। অফিসে ঢুকবে , তখনই গোয়েন্দা অফিসের সব দারোয়ান মফিজকে দেখেই বুটের খট্ খট্ শব্দ তুলে স্যালুট দেয়া শুরু করলো! মফিজ তো অবাক! বোকাগুলো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। যাকগে , সে শিরদাড়া টান টান করে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের রুমে চলে গেলো।
রুমে ঢোকার সাথে সাথে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও সটান হয়ে দাড়িয়ে পড়লেন।
- আরে স্যার , আপনি এখানে!! বসুন স্যার , প্লিজ।
মফিজ তো খুশি , প্ল্যান তাহলে ঠিক মতোই আগাচ্ছে। মুখে গোয়েন্দাসুলভ কঠোরতা এনে মফিজ বললো ,
- বসার সময় নেই , মিস্টার?
- গুরুপদ, স্যার , গুরুপদ তিহারী
- গরুপদ তেহারী!!
- গরুপদ না স্যার , গুরুপদ , গুরুপদ তিহারী ।
- ওকে , মিস্টার গুরুপদ, আপনাদের হাতে এমন কোন কেইস আছে , যে সমাধান করতে পারেন নি?
- আজ্ঞে স্যার্।
অত:পর মফিজ একটা চুরি যাওয়া হীরকখন্ড উদ্ধারের দায়িত্ব নিলো। হীরেটা আছে একটা দূতাবাসের ভেতরে। ওখানে ঢুকে নিয়ে আসতে হবে সেটা। মফিজ মনে মনে প্ল্যান করে ফেলল।
সেদিন রাতে মফিজ খুব টাইট করে লুঙ্গি পড়ল , আর লুঙ্গির গিট্টুর ফাঁকে দুটো ওয়ালথার পিপিকে রিভলবার্ গুঁজে নিল , চোখে কালো সানগ্লাস , পায়ে কালো শো , মোজা ছাড়া। সেই লাগতেছে।
সেদিন রাতে খুব ঝড় উঠেছে। এর মাঝেই মফিজ ট্যাক্সি চড়ে দূতাবাসের গেটের সামনে এসে দাড়াল। গেটে কেউ নেই। মফিজের ঠোটে তখন বিচক্ষণতার হাসি। চোখে লাগানো সানগ্লাস দিয়ে লেজার ফেলে লোহার গেইটে চৌকো করে একটা ছিদ্র করল। যেই ওটা দিয়ে ভিতরে ঢুকল , অমনি পুরো এলাকা কাঁপিয়ে এলার্ম বেজে উঠল!
কিন্তু মফিজের কোন কিছুতেই পরোয়া নেই। লুঙ্গির ভেতর হাত দিয়ে রিভলবার দুটো হাতে নিলো সে। সামনে , ৮ জন গার্ড ., সশস্ত্র। সবাই গুলি করছে,সবার হাতে সাবমেশিনগান। মফিজ গুনে গুনে আটটা গুলি করলো , তারপর , পুরো এলাকা নিরব। মফিজের মুখে তখন ক্রুর হাসি। হলরুমের দিকে এগুলো সে। হীরেটা ওখানেই আছে।
হলরুমের ঠিক মাঝে হীরে রাখার বাক্সটা পরে আছে। মফিজ আস্তে আস্তে রুমে ঢুকলো , ঢুকেই দেখলো , একটা যুবতী মেয়ে চেয়ারে বাঁধা। মফিজ তাড়াতাড়ি বাঁধন খুলে মেয়েটাকে ছাড়াল। তারপর , হীরের বাক্সটা নিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে হলরুম ছেড়ে গেইটের দিকে দৌড়ে গেল। পুলিশ এসে পড়বে।
মেয়েটাকে উদ্ধার করার সমস্ত ক্রেডিট যেন নিজের , সেই মার্কা একটা হাসি দিয়ে মফিজ মেয়েটার দিকে জেমস বন্ড স্টাইলে তাকালো , অমনি ঝড়ো দমকা বাতাসে মফিজের লুঙ্গি উড়ে গেল!
মেয়েটা চোখ বড় বড় করে হাঁ করে মফিজের নিচের দিকে তাকালো। মফিজ লজ্জায় দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললো। কিন্তু পরক্ষনেই চালাকি হাসি দিলো , কারণ , অত বোকা মফিজ নয়! সে নিচে একটা নেংটি পড়ে আছে ,ভাগ্যিস! কিন্তু মফিজের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। মেয়েটার সামনে পুরো ইজ্জত পাংচার!
পরদিন।
সব টিভি চ্যানেল আর সংবাদপত্রের শিরোনাম " মফিজের সাহসীকতায় ঐতিহ্যবাহী হীরা পুনরুদ্ধার!" মানুষের ভালোবাসা যেন লাগামছাড়া! সবাই মফিজকে দেখতে আসছে। মেয়েরা অটোগ্রাফের জন্য বাড়ির বাইরে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মফিজের স্বপ্ন সার্থক।
মফিজ অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য যেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো , অমনি সমস্ত মেয়েরা চুমু দেয়ার জন্য দৌড়ে এলো মফিজের দিকে। মফিজ আনন্দে গদগদ হয়ে চুমু খাবার জন্য চোখ বন্ধ করে ফেলল!
অমনি……
মফিজের মা মফিজের পশ্চাদদেশে লাঠি দিয়ে সপাং সপাং করে দু ঘা দিলেন।
- ওরে হারামজাদা , সকাল হইছে, দেখছ না? এখনো ঘুমাইতাছত! ওঠ!