ইবলিশ শয়তানের কাজ হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা। সে যেভাবে পারা যায়। এই বিভ্রান্ত করার কাজে সে কোরআন হাদিস কেও ব্যবহার করার চেষ্টা করে। যে আয়াত গুলো ব্যাখ্যামুলক, সাধারণত সেগুলো দিয়েই ইবলিশ মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কোরআনের কিছু আয়াত আছে যেগুলো ভাবার্থে নাজিল হয়েছে। এই আয়াত গুলো বোঝার জন্য ব্যাখ্যা, প্রেক্ষাপট জানতে হয়।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। আমার ছোট বোন আর আমার বড় বোনের ছেলে এক বয়সী। একই এলাকায় আমাদের বাড়ি ছিল। একদিন এই দুইজনের ভিতর মারামারি হওয়ায় আমার বোনের ছেলে আমার ছোট বোনকে বলল- “আশিস আমাদের বাসায়, আমার আব্বু যে কলা কিনে এনেছে সেটা তোরে খাওয়ায় দিব। একথা শুনে আমার ছোট বোন কান্না শুরু করে দিল, আমাকে কলা দিবেনা আমাকে কলা দিবেনা এই বলে। এখন পাঠক বলেন, এখানে আমার বোনের ছেলে কোথাও কি বলেছে তাকে কলা দেবেনা, তাহলে কান্না করলো কেন? তাঁরমানে কথার টন, আবেগ, পরিবেশের জন্য অনেক ভাষার অর্থ সরাসরি বোঝা যায় না। এর জন্যই দরকার ব্যাখ্যার। আর এখানেই সুযোগটা নেয় ইবলিশ।এ কারনেই আমি ব্যাখ্যামূলক আয়াত বা হাদিস নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না। যেটা যেটা সরাসরি স্পষ্টভাবে বলা আছে। আমাদের বাসায় আসলে তোকে কলা খেতে দিবনা এমন সরাসরি কথাগুলো নিয়ে কথা হবে।
যাদের আমার লেখা পড়ে চুলকানি হবে তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে কোরআন হাদিসের স্পষ্ট দলিল ছাড়া এখানে কেউ চুলকাইতে আসবেন না। আমিও এখানে স্পষ্ট দলীল ছাড়া কিছু লিখবোনা।
আল্লাহ্পাক রাসুল (সাঃ) উদ্দেশ্য করে বলছেনঃ
১- “বলুন, "আমিও তোমাদের মতই মানুষ , ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ । সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”। (সূরা হামীম সিজদাহঃ ০৬)
২- “বলুন, "আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ; [কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ । সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে কাউকে শরীক না করে” (সূরা কাহফঃ ১১০)
উপরের আয়াতগুলোর মত অনেক আয়াতে আল্লহপাক নবী (সাঃ) কে নির্দেশ দিচ্ছেন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেবার জন্য যে, তিনিও একজন মানুষ। অন্যদের সাথে পার্থক্য এই যে উনার ওপর অহী নাজিল হয়েছে।
এই বিতর্ক ইবলিশ আজকের থেকে চালু করেনি। সেই নবী (সাঃ) এর সময় থেকেই চেষ্টা করেছে মানুষের ঈমান নষ্ট করতে। আরবের কাফেররা বলাবলি করতো, আরে সে যদি রাসুল হয় তাহলে মানুষ হয় কিভাবে। আমাদের কাছেতো ফেরেশতা আসেনা, সে মানুষ হলে তাঁর কাছে আসে কিভাবে?এটাতো খুবই আশ্চর্য বিষয়। এই কথার জবাব দিতেই আল্লাহ্ ঘোষণা করেনঃ
১- “এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি ওহী প্রেরণ করেছি তাদেরই মধ্য থেকে একজনের নিকট যেন তিনি মানুষকে সতর্ক করেন ” (সূরা ইউনুসঃ ০২)
১- “তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, "এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার !” -সূরা কাফঃ ০২
২- “এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে," এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে” -সূরা ছোয়াদঃ ০৪
৩- “তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ করেছিলাম মানুষকে, যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম” -সূরা ইউসুফঃ ১০৯
৫- “তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, তোমাদের পরিশুদ্ধ করে, এবং তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং নূতন জ্ঞান শিক্ষা দেয়” -সূরা বাকারাঃ ১৫১
ভাইরে এর থেকেও পরিষ্কার ভাবে বলা লাগবে রাসুল (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন? এরপর আল্লাহপাক আরো ঘোষণা করলেন পূর্ববর্তী নবী রাসুলগনের সম্পর্কেঃ
১. “তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই ছিলো মানুষ যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো । বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন” -সূরা ফুরকানঃ ২০
২- “তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে” -সূরা আম্বিয়াঃ ০৭
৩- “তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও প্রজ্ঞা । যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে” -সূরা জুমুয়াহঃ ২
৪- হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন- যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন (সুরা বাক্বারা-১২৯)
৫- তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসুলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর (সুরা মু’মিনুন-৩২)
৬- তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন। (সুরা ইবরাহীম-১১)
কোরআনের আলোকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রাসুল (সাঃ) সহ যত নবী রাসুল আল্লহ পৃথিবীতে প্রেরন করেছিলেন সবাই মানুষ ছিলেন। এবার দেখি হাদিসে কি আছেঃ
১. নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আরআদম মাটি থেকে সৃষ্টি
(বায্ যার প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)
২- ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে।
(বুখারী, ছালাত অধ্যায়-৮ , হা/৩৯৪, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
৩- ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে, সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক
(বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, হা/২২৭৮)
৪- ‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন
(আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
বাবারা এর পরও কি আপনাদের সন্দেহ আছে রাসুল (সাঃ) মানুষ ছিলেন না?? এইবার কইবেন বুঝলাম তিনি মানুষ ছিল, তাতে কি? যদি মানুষও হয়ে থাকেন তারপরও তিনি নুরেরই তৈরি। আসেন ব্রাদারেরা, মানুষের সৃষ্টি রহস্য আল কোরআনের আলোকে দেখিঃ
১- যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। (ছোয়াদ-৭১)
২- আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব। (হিজর-২৮)
৩- আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন। (নূহ্-১৭)
৪- তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। (আর রাহ্মান-১৪)
৫- আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। (হিজর-২৬)
৬- এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
৭- আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময় । এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে। ( সুরা মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
৮- আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে। (সুরা দাহ্র-২)
৯- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। (সুরা আলাক-১)
এছাড়া স্বয়ং নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী। (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়, হা/৫৩৪)
এই আয়াত ও হাদিসের আলোকে স্পষ্ট বোঝা যায় সকল মানুষকে আল্লাহপাক মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। এতে কোন প্রকার সন্দেহ আল্লহ তাঁর রাসুল (সাঃ) রাখেননি। আর আগেই আমরা দেখেছি রাসুল (সাঃ) নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। সুতরাং তিনি মাটিরই তৈরি।
চুলকানি ভায়াদের যে আয়াত নিয়ে বেশি চুলকানি মানে যে আয়াতের জন্য তাঁরা এমন কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান সেটি হলোঃ
১- মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’ (সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি। আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
১- এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে ।(সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬)
নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট
১- এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)
২- অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম। (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ?
একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে কেউ কেউ নিচের হাদিসটা বলার চেষ্টা করেনঃ
“আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন”।
অন্য শব্দে এসেছে,
হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।
একই অর্থে এবং বিভিন্ন শব্দে সুফীদের কিতাবসমূহে সনদ বিহীন এই বানোয়াট হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে। মুসান্নাফে আব্দু রাজ্জাকে হাদীছটি থাকলেও লেখক কোন নির্ভরযোগ্য সনদ উল্লেখ করেন নি। এই মর্মে যত হাদীছ বর্ণিত হাদীছ তার সবই বাতিল। মুহাদ্দিছগণ এই হাদীছকে মাওযু বলেছেন। ইমাম সুয়ুতী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছের কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই। সুতরাং হাদীছটি মুনকার ও বানোয়াট। হাদীছের কোন কিতাবে এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুনঃ হাভী ১/৩২৫) ইমাম সাগানীও হাদীছটিকে মাওযু বলেছেন। (দেখুনঃ الموضوعات للصغاني ) ইমাম আলবানী (রঃ) বলেনঃ এটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ একটি বাতিল হাদীছ। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৪৫৮)।
১- হাদীছঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আরআদম মাটি থেকে সৃষ্টি
(বায্ যার প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)
৩- ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে।
(বুখারী, ছালাত অধ্যায়-৮ , হা/৩৯৪, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
৪- ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে, সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক
(বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, হা/২২৭৮)
৫- ‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন
(আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার)
বাবারা এর পরও কি আপনাদের সন্দেহ আছে রাসুল (সাঃ) মানুষ ছিলেন না?? এইবার কইবেন বুঝলাম তিনি মানুষ ছিল, তাতে কি? যদি মানুষও হয়ে থাকেন তারপরও তিনি নুরেরই তৈরি। আসেন ব্রাদারেরা, মানুষের সৃষ্টি রহস্য আল কোরআনের আলোকে দেখিঃ
১- যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। (ছোয়াদ-৭১)
২- আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব। (হিজর-২৮)
৩- আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন। (নূহ্-১৭)
৪- তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। (আর রাহ্মান-১৪)
৫- আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। (হিজর-২৬)
৬- এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব। (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
৭- আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময় । এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে। ( সুরা মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
৮- আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে। (সুরা দাহ্র-২)
৯- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। (সুরা আলাক-১)
এছাড়া স্বয়ং নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী। (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়, হা/৫৩৪)
এই আয়াত ও হাদিসের আলোকে স্পষ্ট বোঝা যায় সকল মানুষকে আল্লাহপাক মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। এতে কোন প্রকার সন্দেহ আল্লহ তাঁর রাসুল (সাঃ) রাখেননি। আর আগেই আমরা দেখেছি রাসুল (সাঃ) নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। সুতরাং তিনি মাটিরই তৈরি।
চুলকানি ভায়াদের যে আয়াত নিয়ে বেশি চুলকানি মানে যে আয়াতের জন্য তাঁরা এমন কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান সেটি হলোঃ
১- মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’ (সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি। আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
১- এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে ।(সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬)
নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট
১- এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)
২- অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম। (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ?
একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে কেউ কেউ নিচের হাদিসটা বলার চেষ্টা করেনঃ
“আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন”।
অন্য শব্দে এসেছে,
হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।
একই অর্থে এবং বিভিন্ন শব্দে সুফীদের কিতাবসমূহে সনদ বিহীন এই বানোয়াট হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে। মুসান্নাফে আব্দু রাজ্জাকে হাদীছটি থাকলেও লেখক কোন নির্ভরযোগ্য সনদ উল্লেখ করেন নি। এই মর্মে যত হাদীছ বর্ণিত হাদীছ তার সবই বাতিল। মুহাদ্দিছগণ এই হাদীছকে মাওযু বলেছেন। ইমাম সুয়ুতী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছের কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই। সুতরাং হাদীছটি মুনকার ও বানোয়াট। হাদীছের কোন কিতাবে এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুনঃ হাভী ১/৩২৫) ইমাম সাগানীও হাদীছটিকে মাওযু বলেছেন। (দেখুনঃ الموضوعات للصغاني ) ইমাম আলবানী (রঃ) বলেনঃ এটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ একটি বাতিল হাদীছ। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৪৫৮)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৭