২০১৭ সালটা আমার জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরই আমি আমার ব্যবসা ছেড়ে সৌদী আরব যাই। সৌদী আরব যাওয়ার আগে পরে অনেক ঘটনা স্মৃতি হয়ে আছে। তার কিছু আনন্দের, কিছু দুঃখের, কিছু মজার আর কিছু বিরক্তিকর।
কাঁঠাল নিয়ে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা আমাকে আজও হাসায়। ব্লগার ফ্রেটবোর্ড কিছু সময় আগে কতো কিছু দেখার বাঁকি শিরোনামে একটা লেখা পোষ্ট করেছেন। সেটার ছবি দেখেই মনে হলো ঘটনাটা শেয়ার করি।
আমি যখন সৌদী যাই, তখন রমজানের একেবারে শেষের দিক। ঈদের আগেই সৌদী থাকবো। আমার ফ্লাইট ভোর ৫:৩০ এর দিকে। ঢাকা তখন প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। সবাই ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ছুটছে। আমি আমার বোনের বাসায় উঠলাম ব্যাগ-বোচকা সহ। বোন আগেই খুলনায় চলে গেছে, তার স্বামী ছিলো, আমাকে বিদায় জানিয়েই সেও খুলনায় রওনা হবে।
রাত বেশী গভীর হলে এয়ারপোর্টে যাওয়া সমস্যার হতে পারে চিন্তা করে আগে আগেই চলে এলাম। রাত ১১টার মত বাজে। আমার সাথে বড় একটা লাগেজ, আর একটা কাঁধের ব্যাগ। ব্যাগটাকে বুকে রেখে, আর লাগেজটাকে পায়ের নিচে রেখে একটা চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে গেলাম।
কিছু সময় পর স্বপ্ন দেখছি আমি সাঁতার কাটছি, কাঁঠালের সমুদ্রে! কাঁঠালের জুসের মধ্যে সাঁতরে বেড়াচ্ছি, মাঝে মধ্যে কাঁঠালের কিছু রোয়া আমার গায়ে গুতা দিচ্ছে। দূরে একটা জাহাজ চলে যাচ্ছে, সেটাও কাঁঠালের কোয়ার রঙয়ের।
এমন কিছু অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে নড়ে চড়ে উঠে বসলাম। ঘুম শেষ হলেও কাঁঠালের রেশ শেষ হলো না। নাকে কাঁঠালের গন্ধ লেগে আছে। বিষয়টা আমার কাছে একটু অবাকই লাগলো। আমি মূলত কাঁঠালের ভক্ত নই। খাজা কাঁঠাল নামে যে শক্ত প্রজাতির কাঁঠাল আছে, ওটা একটু আধটু খাই। যেগুলি গলে যায় সেগুলি খাই না বা পছন্দ করি না। সেই আমি কাঁঠাল নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখবো তার কোন মানে হয় না।
আশেপাশে একটু তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলাম। এত সময়ে কাঁঠালের গন্ধ কমে এসেছিলো মনে হচ্ছিলো। হঠাৎই আবার গন্ধটা বেড়ে গেলো। মনে হতে লাগলো সত্যিই কাঁঠাল ধারে কাছে আছে। চোখ খুলতেই দেখি এক বান্দা আমার সামনে দাড়িয়ে। হাতে তার ভাংগা কাঁঠাল। আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ভাইজান কাঁঠাল খান।
জীবনে বহুবার বহু মানুষ আমাকে খাবার সেধেছে, তবে এমন অবাক আমাকে কখনও হতে হয় নি। বিষয়টা আমার কাছে মোটেও স্বাভাবিক মনে না হওয়াতে উনাকে প্রশ্ন করলাম, কাঁঠাল কোথায় পেলেন?
উনি যা বর্ণনা দিলেন তা কিছুটা এমন। মিডিলইষ্টে প্রায় সব ধরণের ফল-ফলাদি জন্ম এবং ইম্পোর্ট হয়। কিন্তু কাঁঠাল তেমন ইম্পোর্ট হয় না। কাঁঠালের দামও অভাবনিয় ভাবে বেশী। তাই উনি কাঁঠাল সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন। লাগেজে ওজন বেশী হওয়ায় একটা কাঁঠাল ভেংগে সবাইকে খাওয়াচ্ছেন!
তখন একটু খেয়াল করে দেখলাম শুধু উনি একাই না, আরও জনা তিনেক মানুষ এই কাঁঠাল খাওয়ানোর প্রতিযোগীতায় নেমেছেন।
----------------
ভারতীয় সুপারশপ লুলুতে প্রায়ই কাঁঠালের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া দানিউবেও দেখেছি। কদিন আগে দেখলাম কাঁঠালের দাম কেজিতে ২৩ রিয়ালের মত। বাংলাদেশী টাকায় তা মোটামুটি ৬৯০ টাকার মত, প্রতি কেজি। আমার স্ত্রী কাঁঠালের ইচড় (কাঁচা কাঠাল) পছন্দ করে। সে ১২ রিয়ালে এক কেজি পেয়ে ৬০০ গ্রামের মত কিনে আনলো।
---------------
কাঁঠালপ্রেমী আমি অনেক দেখেছি। সৌদী আরবে এসে অনেক বেশী দেখেছি। বিশেষত কুমিল্লার মানুষেরা প্রচুর কাঁঠালের ভক্ত। গরমের সময়টাতে তারা দেশে ঘুরতে গেলে সাধারণত কাঁঠাল নিয়ে ফিরে। তাদের ঘিরে তখন অন্যদের উত্তেজনা দেখার মত।
এক শহরে থাকতাম, ওখানে জহির নামে আমাদের এক ভাই ছিলো। উনি বিশেষ সমস্যার মানুষ হলেও মানুষ তাকে তোয়াজ করে চলতো। কারণ উনি যে বাসায় থাকেন, সেখানে একটা কাঁঠাল গাছ আছে। প্রতি বছরে বেশ ভালোই কাঁঠাল হয় ওটায়। কেউ মনে হয় ঐ কাঁঠাল মিস করতে চায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১:৫০