somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সেই আতেল মামা!

২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি বছর স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার পর আমি অপেক্ষায় থাকতাম রেজাল্টের। তখন একটা কনফিডেন্স ছিলো যে আমি পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় হবো। আর রেজাল্ট বের হলেই কিছু গিফট পাওয়া যায়।



সব থেকে বেশি গিফট দিতেন আমার এক মামা। তিনি আম্মার চাচাতো ভাই। নিজে লেখাপড়া বেশীদূর করেন নি। কিন্তু আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউ একটু ভালো রেজাল্ট করলে তিনি খুব খুশি হন, গিফট দেন।

আমার মা-খালা-মামারা মোট ১০ ভাই বোন। মামারা ৪জন, বাকি ৬জন আমার মা ও খালা। মজার বিষয় হচ্ছে, আমি ক্লাস ৭এ পড়া পর্যন্ত একজন মামার নামও জানতাম না। আম্মার সাথে কথা বলতে হলে এভাবে বলতাম, ঐযে লম্বা মত যেই মাম; ঐ যে মোটা মত যেই মামা; ঐ যে ব্যাংকে চাকরী করে যেই মামা; ঐযে সবার ছোট জন! কিন্তু যে মামা গিফট দিতেন, তার নাম জানতাম। মনে হয় এটাই স্বাভাবিক।

১.
তো একবার পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়ে মামা বাড়ি হাজির, গিফটের আশায়। গিয়ে দেখি সেই গিফট দেওয়া মামা নাই। এই মামার বাড়ির কাউতে তেমন চিনি না, তাই পাশেই নিজের মামা বাড়ি গেলাম। নানীর সাথে দেখা ও অন্য সবার সাথে গল্প গুজব করা শেষে মামা বাড়ির উঠানে বসে আছি, এর মধ্যে ঐযে ব্যাংকে চাকরী করে যেই মামা, তিনি আসলেন। আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে কেন এসেছি।

মনের ভিতরে তখন আনন্দ, আমি ক্লাসে প্রথম হয়েছি, এক্সাইটমেন্টে মামাকে বলে ফেললাম। তখন ক্লাস ৫ পাশ করেছি, এক্সাইটমেন্টে তাকে এটাও বলে ফেললাম যে ঐ মামা আমাকে গিফট দিবেন, সেই আশাতে এসেছি।

এ কথা শুনে আমার ব্যাংকার মামা আমাকে ডেকে দোতলায় নিয়ে গেলেন। বললেন একটা গিফট দিবেন। আমিতো সেই মাপের আনন্দে হেলতেদুলতে লাগলাম।

দোতলায় গিয়ে বেশ খানিক্ষণ বসিয়ে রাখার পর মামা হাতে করে একটা লাল কালির পেন নিয়ে এলেন, ইকোনো কম্পানির পেন। পেন ট্রান্সপারেন্ট হওয়ায় দেখা গেলো যে কালি প্রায় শেষের পর্যায়ে। পেন এর ক্যাপও নাই! উনি আমাকে ওটা দিয়ে বের হয়ে গেলেন, কিছু বললেন না।

বেশ অপমান মাথায় করে বাড়ি ফিরলাম। রাত্রে গিফট দেন যে মামা, তিনি হাজির হলেন একটা ছোট্ট বিমান নিয়ে। এটা টেনে পিছনে নিয়ে ছেড়ে দিলে সামনের দিকে দৌড়ায়, আর দৌড়াতে দৌড়াতে বিমানের মাথা উঁচু হয়, মনে হয় এক্ষুনি বুঝি উড়াল দিবে।

২.
এই ব্যাংকার মামা এক সময় মেহেরপুর থাকতেন। ওখানেই মূলত উনি চাকরী জীবন শুরু করেছিলেন। ঈদে-ঈদে বাড়ি আসতেন।

আমাদের বাড়িতে বিশাল খানাদানার আয়োজন হতো প্রতি ঈদেই। সেই খানাদানায় মামা বাড়ির সবাই আসতো, খালারাও অনেকেই আসতেন। তো ঐ ব্যাংকার মামাও সে বছর এসেছিলেন। এসে আমাকে কাছে ডাকলেন, ধরিয়ে দিলেন ২৫ পয়সার একটা কয়েন। তখন খুলনায় ৫টাকা মোটামুটি একটা স্ট্যান্ডার্ড ঈদ-খরচ; সেখানে ২৫ পয়সা আমাকে বাকরূদ্ধ করে ফেললো। কিছু সময় তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

মামা আমার মনের অবস্থা বুঝলেন খুব সম্ভবত। পকেট থকে একটা কাগজ আর কলম বের করলেন, কিছু একটা লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন, সামনের ঈদে এই কাগজ দেখাতে পারলে আরও ২৫ পয়সা দিবেন!

আমার সব মান-অভিমান-দুঃখের কথা বলার একমাত্র মানুষ ছিলেন আমার আম্মা। আমি তাকে সব বলে পুরা দিনের জন্য হাওয়া হয়ে গেলাম। ঐ রকম রাগ আমার জীবনে খুব কম দিনই হয়েছিলো।

৩.
আর এক ঈদের ঘটনা। বিকালের দিকে সব খালা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দাওয়াত ছিলো মামা বাড়ি। আমরা সব কাজিনেরা তো সেই মাপের খুশি। একসাথে খেলা করছি, দৌড়াচ্ছি আর মাঝে মধ্যে চকলেট বোম ফাটাচ্ছি।

ঐ ব্যাংকার মামা এসে সবাইকে ডাকলেন। বললেন আমাদের সবাইকে সেভেনআপ খাওয়ানো হবে। আমরাতো অবাক! তিনি সত্যিই অনেক গুলি সেভেনআপ এর বোতল নিয়ে হাজির। একে একে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন।

বোতল মুখে দিয়ে চুমুক দিতেই আমরা বিরক্ত, লবন মেশানো পানি! সবাই থুথু করে পানি ফেলে দিলো। আমি একটা আকাজ করে ফেললাম, আছাড় দিয়ে বোতল ভেংগে ফেললাম। বোতল ফেরৎ না দিতে পারার কারণে তাকে দোকানে জরিমানা দিতে হয়েছিলো।

--------------

মামার উপরে আমরা প্রায় সবাই বিরক্ত ছিলাম পুরা জীবন। কিন্তু এতগুলি বছর পর এসে বুঝি, ঐ মামাই আমাদের বেষ্ট মামা। কারণ অন্য কোন মামা আমাদের সাথে জীবনে কোন মজা করেছেন বলে আমাদের মনে পড়ে না। এমনকি অন্য সব মামারা মিলে আমাদের সব খালার জমি মেরে দেওয়ার চেষ্টা চালালেও এই মামাই একমাত্র মানুষ যিনি এখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে খালারা সবাই তাদের অধিকার বুঝে পান।

Photo by GR Stocks on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত ইসরায়েল ও ভারতের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত

লিখেছেন ঊণকৌটী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৩


উভয় বাজারে নেতৃস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটছে। এটি ইসরায়েলকে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করছে, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের যুদ্ধে সমস্যাযুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×