প্রায় ১৬ বছর পর ক্লাসমেট তপুর সাথে কথা। আমাদের বাড়ি পাশাপাশি এলাকাতে হলেও আমার ঢাকায় থাকা আর সৌদীতে থাকার ফলে বহু বছর দেখা হয়নি। খোঁজ খবরও তেমন রাখা হয়নি।
সম্প্রতি তার সাথে যোগাযোগ করেছি। শুধু তার সাথে না, ক্লাসমেট অনেকের সাথেই যোগাযোগ করেছি এবং করছি। বেশ কাঠ খড় পুড়িয়েই যোগাযোগ করে যাচ্ছি। সবাইকে ধীরে ধীরে একটা ফেসবুক গ্রুপে আনছি, ফোন নম্বর যোগাড় করছি, কল করে কথা বলছি। কিন্তু কেন এত সব করছি কোন ধারণা নাই। কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে এতে নামিনি। হয়ত কিছুদিন পর এটা বন্ধ হয়ে যাবে; অথবা যাবে না।
যার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি, তাদের সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে আগে থেকে একটু ধারণা নিয়ে রাখছি। যাতে কথা বলতে গিয়ে একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মত কিছু না ঘটে।
তপুর বিয়ে হয়েছিলো আমি ঢাকায় থাকতেই। আমাদেরই এক বান্ধবীর সাথে। ২০২০ এ করনার আগে আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। সেই মেয়ে আবার বিয়ে করেছে। মেয়ের শশুর বাড়ি আবার তপুদের এলাকাতেই। দিনে রাতে দু-একবার দেখা হয়ে যাওয়া খুব অসম্ভব কিছু না। এগুলি আমি ভালো করে জানি কারণ তপুর বাড়ি আর ঐ মেয়ের শশুর বাড়ির ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় আমার শশুর বাড়ি। আমার শালাই আমাকে সব জানিয়েছে।
তপুকে ফোন দিয়েছিলাম সেদিন, আমি তার বিয়ে কিংবা বিচ্ছেদ বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু তপুই জোর করে তুললো। তপুর ছোট ভাই আমার ছাত্র ছিলো। বললো যে তোর ছাত্র তো বিয়ে করে একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছে। খুব সুখে আছে। আর আমি এখনও প্রেম করছি, বিয়েটা করা হলো না। এখনও আমি ভার্জিন!
শেষ কথাটা দ্বারা তপু এমন একটা ভাব নিতে চেষ্টা করেছে যে সে যেন কখনোই বিয়ে করে নি। আমি ধীরে সেটাকে ইগনোর করে গিয়েছি।
-------------
গত প্রায় এক মাস আমি প্রায় সব কিছু থেকে ডিসকানেক্টেড। নতুন একটা উদ্যোগ শুরু করেছি। সংসার-চাকরী-উদ্যোগ-ঘোরাঘুরি, এই নিয়ে এত ব্যস্ত যে ফেসবুক, রেডিট কিংবা ব্লগ, কোথাও সময় দিতে পারিনি। গতকাল হঠাৎই একটু সময় নিয়ে ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম, বেশ কিছু ভিডিও সামনে আসলো। মোস্তাক-তিশা, ফারুকী-তিশা আরও কি কি যেন।
দুই দম্পতিই দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টায় আছে যে তারা সুখে আছে। মোস্তাক-তিশা সুখের জোয়ারে বই লিখে ফেলেছেন, একটা কিংবা দুইটা, লিখেছেন এটাই বড় কথা। অপর দিকে ফারুকী-তিশা দিয়েছেন ইন্টারভিউ বা আড্ডা। মানুষকে মোস্তাক-তিশাকে নিয়েই বেশী ব্যস্ত দেখা গেলো। অনেকই অনেক আজেবাজে কথা বলছেন। এই যে জনগন, তারাও কোন না কোন ভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করছে, 'আমরা না খুব সুখে আছি'।
------------
ক্লাসমেট রুবায়েত বিয়ে করেছিলো সিন্থিয়াকে। তাদের চাকরী ও চাকরীতে পাওয়া বেতন আর তাদের খরচের হাত আমি জানি। বিয়ের পরপর তাদের একেরপর এক দেশ-বিদেশ ট্যুর দেখে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম বৈকি। ৯/১০ মাসের মাথায় রুবায়েত হঠাৎ এদিন ফোন দিলো, লাখ দুয়েক টাকা ধার দরকার, ক্রেডিট কার্ডের সুদ টানতে টানতে তার দফারফা। ধানমন্ডির ফ্লাট ছেড়ে উঠেছে মিরপুরে, ভাড়া কমানোর জন্য। সিএনজি ছেড়ে তারা যাতায়াত করে লোকাল বাসে।
টাকা ধার দেওয়া সময় কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে এই দশা কেমন করে হলো। সিন্থিয়া বললো, তার বড় বোন বিয়ে করে ঘুরছে। সে যদি এখানে ওখানে ঘুরে ফেসবুকে ছবি দিয়ে প্রমান করতে পারে যে "আমরা না খুব সুখে আছি" তাহলেই তাদের মান ইজ্জত বাঁচে; নয়ত লজ্জা।
যদ্দুর জানি রুবায়েত-সিন্থিয়া সুখে আছে। রুবায়েতের পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির একটা অংশ বিক্রি করে তাদের সব দেনা (আমারটার আর্ধেক বাদে) শোধ হয়েছে। এখন তারা দেশ বিদেশে ঘুরে না, বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে ঘুরে ছবি দিয়ে প্রমান করে "আমরা না খুব সুখে আছি"।
------------
আইয়ুব বাচ্চুর সুখেরই পৃথীবি গানটার গভীরের অর্থ এখন বুঝতে পারি।
Photo by NEOM on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৪০