মফস্বল আমার পছন্দ হয়না মাত্র একটা কারণে, হ্যাঁ মাত্র একটা কারণ। সেটা হচ্ছে মফস্বল গুলিতে সবাই সবাইকে চিনে, এবং এখানে কিছু মানুষ থাকে যারা একজনের কথা কালেক্ট করে অন্যদের বলে বেড়ায়। এই কথা লাগা-লাগি আমার চরম অপছন্দের।
কথা লাগা-লাগির ফলে পরের ধাপে আসে মানুষকে অপমান-অপদস্থ করবার স্টেপ।
একবারের কথা বলি, খুব সম্ভবত তখন ক্লাস ৮/৯ এ পড়ি। বিকাল বেলায় রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আছি স্কুলের কিছু বন্ধুর সাথে, কোন একটা বিষয় আলোচনা করছি। আমাদের পাশের বাড়ির এক আন্টি হঠাৎ গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এই, তোর বোনকে যে তোর বড় ভাই আজকে বকা দিলো, কি জন্য? কোন ছেলের সাথে দেখে ফেলেছে? সাথে সাথে আন্টির মুখে দেখা গেলো এক তুচ্ছ তাচ্ছিল্লের হাসি!
আমার বোন ঐ দিন আসলে ভাইয়ার একটা জিনিষ নষ্ট করে ফেলেছিলো, তাই ভাইয়া রেগে গিয়ে তাকে বকাঝকা করেছিলেন। কিন্তু ঐ আন্টি বা খালাম্মা মূলত আমাকে আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে একটু অপমান করতেই এই ধরণের কথা বলা। এই খালাম্মার মূল কাজই হচ্ছে মানুষের কথা কালেক্ট করে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় বের হয়ে অন্য বাড়ির খালাম্মাদের কাছে বলে বেড়ানো।
যাই হোক, খালাম্মার এই কাজের প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা সাথে সাথেই উদ্রক হলো, আর আমি খালাম্মাকে জিজ্ঞাসা করে বসলাম আর একটা কথা, যার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বর যে গতকাল আপনাকে পিটাতে পিটাকে বেশ্যা-মাগী বলে গালি দিলো, আমি কি জিজ্ঞাসা করতে গেছি যে কার সাথে বেশ্যাগিরী করলেন যে এমন পেটালো?
--------
আমি মিডিয়ার মানুষদের খুব সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলি। কেন এড়িয়ে চলি সেটা বললে গফুকাকা মাইন্ড খাইতে পারে, তাই বললাম না।
এনাদের এড়িয়ে চললেও এনাদের নানান কর্মকান্ড সামনে আসে। আমি সেগুলিও এভয়েড করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেদিন হঠাৎ একটা ভিডিও সামনে আসলো, যা আমি মাথা থেকে সহজে সরাতে পারছি না। ভিডিওটি দেশ টিভি এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটা পেজ থেকে পোষ্ট করা হয়েছে; এটা খুব সম্ভবত একটা টিভি চ্যানেল।
ভিডিওটি জায়েদ খান নামক একজন অভিনেতাকে একটা ইন্টারভিউ বা টকশো এর; টাইটেলঃ রেগে কেন অনুষ্ঠান থেকে উঠে গেলেন জায়েদ খান
যেহেতু ভিডিওটা স্ক্রোল করতে করতে এসে গেছে, এবং শুরুর সেকেন্ডেই বলা লাইনটা চরম মাত্রায় বেয়াদবীতে ভরা, আমাকে বাধ্য হয়ে কয়েক সেকেন্ড দেখতেই হয়েছে।
প্রথম সেকেন্ডেই জায়েদ খানকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, "তো আপনারতো কোন সিনেমার কাজ নেই, আপনার এই অর্থের যোগানটা কোত্থেকে আসে? কোন অবৈধ্য ভাবে আসে?"
কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথায় প্রশ্ন চক্কর দিলো, এইগুলান কোনতর বেয়াদব? আমাকে কেউ এই ধরণের প্রশ্ন করলে আমি খুব সম্ভবত যে চেয়ারে বসে ছিলাম সেটা দিয়েই তাকে বাড়ি দিয়ে শোয়ায় ফেলতাম।
যদ্দুর জানি জায়েদ খানকে নিয়ে নানান ট্রোল ও মজা করে মানুষ কামাই করছে বর্তমানে, তিনিও নানান কর্মকান্ড ও কথাবার্তা বলে তাদের সঙ্গই দিচ্ছেন বলা চলে। কিন্তু এই যে প্রশ্ন করা হলো, এটা কোন মাপের বেয়াদবী সেটা বুঝতে হলে আপনাকে প্রথম ভদ্র হতে হবে, ভদ্র সমাজে বসবাস শিখতে হবে।
ভিডিওতে ৩লক্ষ ৩৭ হাজারেরও বেশী মানুষ হাহা রিয়্যাক্ট দিয়েছেন। এদের নিয়ে আমার বলার কিচ্ছু নাই। এরা সব বলদ। কিন্তু যেই উপস্থাপক এই আকাজটি করেছেন, তিনি কোন মানষিকতার মানুষ? আজকে যদি কোর্টে কাউকে তার অর্থের উৎসের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাও তো এত বাজে ভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে না।
আজকে সকালে একটা ভিডিও দেখছিলাম, একজন ট্রাভেল ভ্লগার তার ঘোরাঘুরির টাকা কিভাবে আসে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। তার ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণও হচ্ছে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে। তার কিছু ভিডিও দেখলাম, সবাই প্রশ্ন করেছে ভদ্র ভাবে। কিন্তু ঐ উপস্থাপক করলেনটা কি?
চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় যে মূলত জায়েদ খানকে এই ধরণের প্রশ্ন করলে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই এই কাজ করা হয়েছে। কিভাবে পারে এরা? ভিডিওটি খুব বেশীদূর দেখার রুচি হয়নি। আমার বিশ্বাস এমন বাজে প্রশ্ন আরও করা হয়েছে!
Photo by Donald Giannatti on Unsplash