অফিসের কাজে আমাকে প্রায়সই বিভিন্ন শহরে যেতে হয়। রিয়াদ থেকে ৩০০/৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সাধারণত অফিস থেকে গাড়ি দেয়। আর এর বেশী হলে বিমান টিকিট।
আমি মূলত গাড়িতে যেতেই পছন্দ করি। বেশ কিছু স্বাধীনতা থাকে। ১. নিজের সময় মত বের হওয়া যায়। ২. ইচ্ছা মত দাড়ানো যায়। ৩. ড্রাইভারকে পাশে রেখে দিয়ে নিজে গাড়ি চালানো যায়। ৪. গাড়ির জন্য বসে বসে অপেক্ষা করতে হয় না (যদিও আমি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করতে ভালোবাসি)।
আজকেও তেমন অফিসের কাজে অন্য এক শহরে যেতে হবে। ফ্লাইনাস এর টিকিট। এরা একটু কঞ্জুস টাইপের। এমনিতে পিচ্চি বিমান, তার উপরে বিমানে পানিটুকু পর্যন্ত দেয় না আর প্রায়সই হ্যান্ড ক্যারি ব্যাগ নিয়ে ঝামেলা করে। এই দিক থেকে সৌদীয়া খুবই ভালো। হ্যান্ডক্যারী ব্যাগের সাইজ একটু বড় হলেও সাধারণত কিছু বলে না; আর ওজনতো কখনও চেকই করে না।
আমাকে মাসে প্রায় দুইবার যেতে হয় রিয়াদের বাইরে। এখানে বিমান বন্দরে বিভিন্ন কাজে এসজিএস এর কর্মীরা নিয়োজিত। তাদের একজনের সামনে কয়েকবারই পড়া লেগেছে। এই লোক যেদিন সুপারভাইজার হিসাবে থাকে, সেদিন যাত্রীদের বেশ ভোগান্তিতে ফেলে। অন্যরা ততোটা গায়ে বাঁধায় না।
এই লোক কাউকেই দুইটা হ্যান্ডক্যারী ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয় না। সাধারণত প্রায় মানুষই একটা হ্যান্ডক্যারী লাগাজ ও একটা কাঁধের ব্যাগ নিয়ে যায়। এই লোক তা এলাউ করে না।
আমিও এভাবেই গিয়েছি। দূর থেকে দেখি ঐ লোক। আমি তার সামনে গিয়েই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার হ্যান্ডক্যারী লাগেজের চেন খোলা শুরু করলাম। সে জিজ্ঞাসা করলো কি করো? আমি বললাম তুমিতো দুইটা ব্যাগ নিতে দিবা না, তাই আমি আমার কাঁধের ব্যাগ লাগেজে ঢুকাই। সে নিশ্চুপ।
আমার কাজ শেষ হতেই সে আমার ব্যাগ ম্যাশিনে ঢুকাতে বললো। এটায় ব্যাগের সাইজ মাপা হয়। একটা নির্দিষ্ট সাইজের বড় ব্যাগ হলে আর ঢুকে না। আর মাপা হয় ওজন। এলাউড ওজন ৭কেজি। আমার ব্যাগ ৭.৩ কেজি হয়ে গেলো। ব্যাটার চোখে মুখে সে কি এক খুশির আবহাওয়া! সে আমাকে কোন ভাবেই ৩০০ গ্রাম বেশী নিয়ে ঢুকতে দিবে না। আমাকে বলে ওজন কমিয়ে আসো!
আমিও কথা না বাড়িয়ে আবার তার সামনে লাগেজ খোলা শুরু করলাম। সে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কি জামা-কাপড় বের করে ডাবল ডাবল পরবা? আমি উত্তর করলাম, আমাকে কি জোকার মনে হয়?
আমি কিছু না বলে ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে হাতে নিলাম। বেচারার মুখ আবার চুপসে গেলো। আমার ল্যাপটপের ওজন প্রায় ১.৫ কেজি। সে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি লাগেজ আটকে আবার ম্যাশিনে চড়ালাম। সে তাকিয়েও দেখলো না। আমার একটু মেজাজ খারাপ হলো বৈকি। সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাটার মাথায় রাগ চড়াতে হবে!
বোর্ডিং পাস স্ক্যান করে গেটের ভিতরে ঢুকেই আবার লাগেজ খুললাম, ল্যাপটপের ব্যাগ বের করে তাতে ল্যাপটপ রেখে আবার কাঁধে নিলাম। ব্যাটা কটমট করে আমার দিকে তাকালো; আমিও ব্যাগ কাঁধ থেকে নামালাম।
সে খুব টের পেয়ে গেছে যে আমাকে সে কিছু বলার আগেই আমি আবার ব্যাগ লাগেজে ঢুকায় ফেলবো। সে বেশ চটে গিয়ে তার এক সহকর্মীকে ডেকে রাগী গলায় "খাল্লিবাল্লি" বলে বললো যে সবাইকে ঢুকতে দাও। আর চেক করার দরকার নাই।
আর এদিকে আমি ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে গেলাম স্ক্যানিং এর জন্য। মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি কাজ করছিলো ব্যাটাকে চটাতে পেরে। সাধারণত কেউ ১/২ কেজির জন্য যেখানে সমস্যা করে না, সেখানে সে ৩০০ গ্রামের জন্য সমস্যা করেছে দেখে আমার মেজাজ বেশ চড়েছিলো। সেটা ঠান্ডা হলো।
আচ্ছা, আমি আগে ২/৩বার তার সামনে পড়ে তাকে মনে রেখেছি; সেও কি আমাকে মনে রাখবে? পরের বার কি সমস্যা করবে? কারণ মাঝে মধ্যেই আমার ৭কেজির বেশী নিয়ে যাওয়া লাগে!
ছবিঃ unsplash.com