কোথাও একটা লেখা পড়েছিলাম যেটা কিছুটা এমন, মানুষ কথা বলা শিখতে সময় নেয় ২-৪ বছর। কিন্তু কোনটা বলা উচিত নয় সেটা সারা জীবনেও শিখে শেষ করতে পারে না।
ভদ্র পরিবেশে কথা বলার নানান শিষ্টাচার আছে। এই শিষ্টাচার গুলি যারা মেনে চলেন, তারা ধীরে ধীরে মানুষের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেন। আর যারা মানেন না, তাদের অনেককেই কেউ কোন কারণে সম্মান দেখালেও মূলত পিছনে প্রচন্ড অপছন্দ করে থাকেন।
সেই শিষ্টাচার গুলির মধ্যে একটি নিয়ে আজকে লিখবো।
আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে কিছু মানুষ আছে, যারা কেউ একটা কথা শুরু করলে তাকে শেষ করতে না দিয়ে নিজেই বলা শুরু করে। অনেক সময় দেখা যায় আপনি একটা কথা বলছেন, এমন ভাবে কেউ কথা কেড়ে নিলে আপনার কথার খেই হারিয়ে যায়।
এইটা ভদ্র সমাজে চরম একটা বেয়াদবি হিসাবে দেখা হয়। যদিও, আমাদের অনেকেই এই বিষয়টি জানিই না; বা খেয়ালই করি না।
ছোট থাকতে দেখেছি আমার আব্বার কথার মধ্যে কেউ কথা বললে আব্বা প্রচন্ড রেগে যেতেন। এটাও খেয়াল করেছি যে তিনি কখনই কারও কথার মধ্যে কথা বলতেন না। এবং অন্যের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। তাদের কথা শেষ হলে তখন আব্বা বলেই নিতেন যে এত সময় আপনার কথা শুনলাম, এবার আমার কথা শুনেন।
এই জিনিষটি আমার মধ্যে এসেছে, আমিও কথার মধ্যে কেউ কথা বললে সহ্য করতে পারি না। চরম বিরক্তির সৃষ্টি হয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমার বউ এই কাজটি করে না। করলে আমার খবর ছিলো! সারাদিনই হয়ত মেজাজ গরম থাকতো।
অফিসে এই বিষয়টি ফেস করেছি প্রচুর। আগে যে দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি, তার সব গুলিই ছিলো বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান। এখানে মানুষকে বলেও থামানো যেতো না! একটা কথা পড়ার আগে উত্তর দেওয়া শুরু হয়ে যেতো।
বর্তমানে যেখানে আছি, সেখানে প্রথম থেকেই এই বিষয়ে আমি খুব স্ট্রিক্ট। মিটিং এর ভিতরে কেউ যদি আমার কথার ভিতরে কথা শুরুও করে বেশ গম্ভীর ভাবেই আমি বলে বসি, you didn't let me finish.
প্রথম প্রথম বড় বড় কর্মকর্তারা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেতেন। এমনকি একবার একজন আমার বিরুদ্ধে এইচআর এ অভিযোগও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি নাকি মিটিং এর মধ্যে তাকে সবার সামনে অপমান করেছি! এইচআর থেকে সব কিছু শুনে তাকে উল্টা ওয়ার্নিং ইস্যু করেছে যেন সে মানুষের নামে হুদা কামে অভিযোগ না আনে।
এখন অবশ্য অফিসের সবাই আমার এ বিষয়টি মেনে নিয়েছে। এবং আমি কথা বলার সময় সাধারণত কেউ আমাকে থামায় না।
কোন কারণে যদি আপনাকে কথার মধ্যে কথা বলতেই হয়, তাহলে sorry to cut you off বলে থামিয়ে তারপর কথা বলা উচিত।
বিশ্বাস করেন, আপনাকে যদি কেউ এমন কথা কাটার জন্য একটা কথা শুনিয়ে দেয়, মনে হবে যেন পিছের কাপড় খুলে নিছে!
তাই, ভাবিয়া করিয়েন কাজ, করিয়া ভাবিয়েন না!