নোকিয়া তাদের প্রথম দিককার স্মার্ট ফোনে নিয়ে এসেছিলো সিম্বিয়ান এস৪০, এবং পরে সিম্বিয়ান এস৬০ অপারেটিং সিষ্টেম। তখনই মূলত বৈপ্লবিক ভাবে মোবাইলে বাড়তি এ্যাপ্লিকেশন বা এ্যাপস ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। এরপর আইফোন ও এন্ড্রয়েডের হাত ধরে তা এখন মোটামুটি মোবাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রচুর পরিমানে এ্যাপ পাওয়া যায় বর্তমানে। যার কোনটি চরম কাজের, কোনটি চরম আকাজের, কোনটি আপনকে একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে, কোনটি আপনাকে ভালো থেকে খারাপের পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
সাধারণত এই ধরণের পোষ্ট গুলিতে লেখকেরা এমন কোন এ্যাপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যা ব্যবহারে আপনি নানান ভাবে আপনার দিনকে সাজাতে পারবেন। নোট নিতে পারবেন। কাজের সিডিউল করতে পারবেন। অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি উল্টাটা করতে এসেছি। আমি এমন একটি বা একাধিক এ্যাপের বিষয়ে কথা বলতে এসেছি, যেটা বা যেগুলি আপনার কাছে যদি ইতিমধ্যে ইন্সটল করা থাকে, তাহলে ডিলিট করতে বলছি!
জ্বী, ঠিক পড়েছেন। এ্যাপ ব্যবহার না করার কথা বলছি, এবং সেটই আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে।
এ্যাপের নাম বলার আগে আর একটু প্যাঁচাই!
ঘটনা ৫মাস আগের। অফিসের এক ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো, উনি বলছিলেন উনি বই পড়ার জন্য সময় করতে পারেন না! সময় কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে যায়! উনাকে বললাম ঐ এ্যাপের কথা। ওটা ডিলিট করলে সময় বাঁচবে প্রচুর।
উনি বললেন যে উনি নাকি ঐটা ব্যবহারই করেন না তেমন। মাঝে মধ্যে দেখেন। আমি বললাম দিনের অন্তত ৬-৮ ভাগের এক ভাগ উনি ঐ এ্যাপে সময় কাটান। উনি বেশ জোরেশোরেই মাথা ঝাঁকালেন। উনি স্যামসং এর বেশ হাই এন্ড মোবাইল ব্যবহার করেন। উনার হাত থেকে ফোনটি নিয়ে Digital Wellbeing এ্যাপটি চালিয়ে উনার হাতে দিতেই উনি স্তব্ধ। উনি দিনে প্রায় ৮ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করেন, যার মধ্যে আর্ধেকই উনি ঐ এ্যাপে সময় দেন! অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ঘন্টা! বাকি ৪ঘন্টাও একই ধরণের এ্যাপের ব্যবহার করেন।
ঠিক এই একই কাজ আরও কয়েকজনের সাথে করেছি। সবারই এখন একটু হলেও দিন বদল হয়েছে। একটু হলেও অন্য কাজে সময় পাচ্ছেন।
এ্যাপটি হচ্ছে ফেসবুক। আপনি ফেসবুকের ব্যবহারকারী না হয়ে টিকটক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির ব্যবহারকারীও হতে পারেন। এবং এই এ্যাপ গুলি আপনার দৈনন্দিন জীবন থেকে যে কি পরিমানে সময় নষ্ট করে তা বলার বাইরে।
সৌদী আরবে হোয়াটসএ্যাপ এর ব্যবহার প্রচুর। আপনি একজনের ফোনকল মিস করেন, ১০টা ম্যাসেজ মিস করেন, কেউ কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু হোয়াটসএ্যাপের ম্যাসেজ সাথে সাথে না দেখলে খুব অপরাধ করে ফেলেছেন এমন মনে হয়! এমাজন সহ বিভিন্ন ইকমার্সের ডেলিভারী পারসনরাও হোয়াটসএ্যাপে ম্যাসেজ দেয়, আর উত্তর দিতে দেরী হলে প্যাকেজ ডেলিভারী না করে চলে যায়!
আমার প্রায় সব কমিউনিকেশন (কল ও এসএমএস বাদে) এ্যপ গুলির নোটিফিকেশন বন্ধ করা। অফিসের প্রয়োজনে যে হোয়াটসএ্যাপ ব্যবহার করা হয়, সেটা অফিসের সময়েই নোটিফেকেশন চালু থাকে।
২০১৯ সালে আমার এভারেজ ফোন ব্যবহারের সময় ছিলো দিনে প্রায় ৯ঘন্টা। সেটা এখন তিন ঘন্টার কাছাকাছি। যদি দেশে আব্বা-আম্মার সাথে কথা বলার সময় বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ২ঘন্টারও নিচে চলে আসে।
আপনি আপনার সকল ম্যাসেজ দেখার জন্য দিনের মধ্যে এক বা একাধিক সময় রাখতে পারেন। কিন্তু মোবাইল টুং করে শব্দ করলো, আর আপনি ঝাপিয়ে পড়লেন, এভাবে আসলে আপনি আপনার ক্ষতিই করবেন। দিনের ভিতরে একটা নির্দিষ্ট সময় রাখুন, সেই সময়ে নোটিফিকেশন চেক করুন, আপনার ম্যাসেজ চেক করুন, ফেসবুক ওয়াল ঘুরুন। দেখবেন, বেঁচে যাওয়া সময়টাতে অন্য কিছু করতে পারবেন। এবং জীবন একটু হলেও স্বাছ্যন্দের হবে।
Photo by NordWood Themes on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৪