সারা পৃথীবিতে এখন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে দ্রুততার সাথে বাড়ছে ৬০ বছরের বেশী বয়সী মানুষের সংখ্যা। ১৯৫০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬০০ মিলিয়ন হয়ে গেছে। বর্তমানে তা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন, আর ধারণা করা হয় ২০৫০ সালের মধ্যে তা ২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।
ছবিটি ইউনাইটে নেশনের World Population Ageing 2015: Highlights ডকুমেন্ট থেকে নেওয়া।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বয়স্ক জনগন বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় নতুন করে ভোগা শুরু করেন। এর মধ্যে অনেক কিছুই পড়ে, তবে সব থেকে ভয়ানক ধরা হয় আচরণ ও পারসোনালিটিতে পরিবর্তন সমস্যাকে।
ষাটোর্ধে মানুষেরা হঠাৎই তাদের আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসেন, যা মূলত তারা বুঝতে না পারলেও তাদের আশেপাশে থাকা মানুষেরা বুঝতে পারে। এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমনঃ
১. ঔষধের সাইড ইফেক্ট
২. মানসিক সমস্যা
৩. এলকোহল বা ড্রাগ এবিউজ
৪. বিভিন্ন রোগের প্রভাব
এ সময়টাতে মানুষ সাধারণত একাকিত্ব অনুভব করে। তাছাড়া এমন বয়সে যারা পৌঁছে তারা সাধারণত একেরপর এক আত্মীয়স্বজন সহ বিভিন্ন মানুষের মৃত্যু দেখে একপ্রকার ভয়ে থাকেন। যেটি থেকে বের হয়ে আসতে তারা নিজেদের জন্যই মনের অজান্তে একটা বলয় তৈরী করে ফেলেন। সেই বলয়ের বাইরে যাই ঘটে, তা তারা সহ্য করতে পারেন না।
ধরেন একজন পিতা ধরে নিলেন তার সন্তানেরা তাকে এড়িয়ে চলছে। এমন অবস্থায় তার কোন সন্তান যদি এক-দুইদিন তাকে ফোন না দেয়, বা খবর না নেয়, তাহলে তিনি মনে করেই নেন যে এই সন্তান আসলেই তাকে এড়িয়ে চলছে। এবং স্বাভাবিক কারণে তিনি সন্তানের উপর নারাজ হয়ে পড়েন।
এগুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের মধ্যে রাগ বিরাজ করে এবং সেটা প্রকাশে অনেকেই রাখ-ঢাকের প্রয়োজন মনে করেন না; অন্য দিকে অনেকেই একাকিত্বে ভোগা শুরু করেন।
অন্যের ভূল ধরা, যখন তখন যার তার সাথে ঝগড়া শুরু করা, কারও সম্পর্কে কিছু ধারণা করে বসে থাকা ইত্যাদি তখন নিত্যনৈমত্তিক বিয়ষ হয়ে দাড়ায়।
আমাদের যা করা উচিৎ
প্রথমত আমাদের বুঝতে হবে যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন স্বাভাবিক। আমি আপনি পাঁচ বছর বয়সে যেমন চিন্তা করতাম, ১৫, ২৫, ৩৫, ৪৫ কিংবা ৫৫ বছর বয়সে ঠিক সেই ভাবে চিন্তা করবো না। ঠিক সেই ভাবেই ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের চিন্তা চেতনা কম বয়সী একজনের মত হবে না।
আর এই বয়সে এসে যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই একাকিত্ব অনুভব করে, তাই, তাদের সাথে সময় দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া তাদের রাগের বিপরীতে রেগে না গিয়ে তাদের সাথে সদাচারণ করাটাই উচিৎ। কারণ তাদের রাগের উপরে রাগ দেখাতে গেলে অধিকাংশ সময়েই তারা অসুস্থ হয়ে পড়া সহ তাদের মনের বদ্ধমূল খারাপ ধারণা গুলি তাদের কাছেই বাস্তব মনে হতে থাকে।
একটা ঘটনা বলি, ১৯৯৭/৯৮ এর কথা, একবার এক বইয়ের দোকানে বই কিনতে গিয়েছি। তিন-চারটা বই দেখেছি। আর একটা বই দেখতে চাইতেই দোকানী (তার বয়স ৭০ এর বেশী হবে) খুব চিৎকার চেচামেচি শুরু করলেন। পারলে আমাকে মারেন এমন অবস্থা! আমি উনার দোকানে শুধু নিয়মিত তাই নই, বরং উনাদের সাথে পারিবারিক ভাবেও আমাদের সম্পর্ক আছে।
উনার এই আচরণে আমি প্রচন্ড বিরক্ত হলাম ও কষ্ট পেলাম। বই নিবো কি নিবো না এমন ভাবছি, এ সময়ে পিছন থেকে তার বড় ছেলে এসে আমাকে ডেকে পাশের রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। সিঙ্গাড়ার ওয়ার্ডার করলো। বললো, "আব্বার বয়স হয়েছে, হঠাৎই রেগে যান। তুমি যখন আসো, এমন করলে রাগ করো না।"
উনার কথার যে ওজন, সেটা বহু পরে বুঝেছি। সন্তান হিসাবে আমরা অধিকাংশ সময়ই পিতা মাতার বয়স হয়ে যাওয়ার পরের পরিস্থিতি আমরা বুঝতে পারি না।
এছাড়া যদি আমাদের মনে হয় যে তাদের চিকিৎসা করানোর দরকার, সেটির জন্যও আমাদের পিছ পা হওয়া উচিৎ নয়। অনেকেই আমরা মনে করি যে মানসিক ডাক্তার দেখানো মানেই যেন রোগী পাগল হয়ে গেছেন।
বরং সত্যটা হচ্ছে, আমরা সবাই কম বেশী মানসিক রোগী। কারও প্রকোপ কম, কারও বেশী। আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা একটু বাড়বে তা স্বাভাবিকই।
------------------------------------------------------------------
অফিসের কাজের বাইরে আমাদের মাঝে মধ্যে ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করা লাগে। গত কয়েক মাস থেকে আমি 'মেন্টাল হেল্থ' রিলেটেড বিভিন্ন বিষয়ে ভলেন্টিয়ার হিসাবে কাজ করছি।
নিজের পছন্দের সাবজেক্টের বাইরে গিয়ে অনেক পড়তে হচ্ছে। ভাবছি কিছু কিছু বিষয় নিয়ে লিখবোও। গতকাল লিখেছিলাম "স্ট্রেস - বালতির ভিতর যত চিন্তা ও সমাধান!" টাইটেলে একটি লেখা। ভাবনার বাইরে ক্লিক পড়েছে, তবে পুরা লেখা খুব কম মানুষই পড়েছেন বলে মনে হয়েছে।
মেন্টাল হেল্থ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমাদের দেশে এ বিষয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
তাছাড়া পৃথীবির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের এ বিষয় গুলিতে আরও বেশী নজর দেওয়া উচিৎ।