এরাসমুস পোলাপানের জ্বালায় আর বুঝি থাকা গেলনা।এরা পড়তে আসে না পার্টি করতে আসে?বহুদিন এ প্রশ্ন করেছি অনেক কে।সবচে ভালো জবাব দিলো মরিসিও-তার দেশের লোকজন বলে, এরাসমুস =অর্গাসমুস। মানে এসব পোলাপান ৬ মাসের জন্য পার্টি আর জৈবিক আনন্দের সন্দ্ধানে ইউরোপে আসে,বেশির ভাগ ইউরোপীয় আবার ।কথা শুনে বললুম,তা তুই নিজেও তো exchange student, বেটা তার তেলতেলে হাসি দি্য়ে বলে,তাতে কি?আমি কি আর মেয়ে দের পিছনে ঘুরি?আমি বললাম,মেয়ে রা তোকে পুছেনা সেটা কি আর আমরা জানিনা?নুরিয়ার পিছে তো কম ঘুরলিনা?
আরে ধুর ,ওতো দেমাগ যার...
আংগুর ফল টক এরেই ক্য়।
নুরিয়ার বেপারটা কি?পুরা ডর্মেটরি সরব,এক ঝাককাস স্প্যানিশ সুন্দরীর আগমনে ২৬ টা হাউসের সব ছেলের রাতের ঘুম হারাম,আর সব মেয়ে ভাবছে কে এই নুরি্য়া,কেন পোলারা তাকে দেখে ঘুরিয়া ঘুরিয়া?প্রথমে আমি বিশেষ পাত্তা দিতাম না এসব ,কিন্তু মরিসিও র মুখে ,'that spanish girl....so hot...' শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হবার জোগাড়।আর বেচারা মরিসিওকে দোষ দি কিভাবে?বেটার ইংরেজী মোটামুটি,জার্মান সবে শিখছে,ও দিয়ে কোন জার্মান মেয়ের সুনজরে পড়া কঠিন।জন্মভূমি চিলি:শত শত বছর স্পেনের বাশঁ খেয়ে সুডামেরিকার এই দেশের মানুষের এখন মাতৃভাষা স্প্যানিশ।তাই নুরি্যার আগমনে তার খুশি হবার কারণ আছে বৈকি।কিন্তু প্রতিযোগিতা চরম-কোন পার্টিতে নুরিয়ার পাশে ঘেষা মুসকিল।২০ -৩০ টা ছেলে হা করে তাকিয়ে থাকে তার একটু হাসির জন্য।
তখনও মেয়ে টা কে দেখিনি,একদিন মরিচ মি্য়া দৌড়ে এসে আমাকে বলে,তোমার জানালা খুলে দেখ,নুরিয়া কে দেখবে।দেখলাম,এবং বুজলাম কেনো মেয়েরা শপিং করছে এত।
সরেজমিনে দেখলাম কিছুদিন পর-
আমি সচরাচর পার্টি যাইনা।একবার নিতান্ত বাধ্য হলাম।আমাদের ফ্লোরে ৩টে ব্লক,তার ২টা ব্লকের সদর দরজার অটোলক বন্ধ করে ফ্লোর ওপেন করে সেইন্ট নিকোলাস পার্টি হচ্ছে।অনেকটা প্রি ক্রীসমাস পার্টি বলা চলে।আমার ব্লকের নবযুবাগণ তো রাত ৯টা থেকে সেখানে।আমি ঘরে চুপচাপ বসা।টং লিন তার ঘরে পরীক্ষার পড়ার নামে নবযুবাদের কাছ থেকে ছাড় পেলো।ভারতী্য় শুচী কে কেউ পার্টির কথা বলার সাহস পেলনা।উনি দরজা লাগিয়ে পেটেন্ট আইন মুখস্থ করতে বসলেন।রাতের ১১টার দিকে হৈচৈ শুনে বুজলাম,আমার ব্লকের পোলাপান ফিরে এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে,সবার মাথায় মাল চড়েছে।আমার ঘরে এসে আমার বিছানা টেনে কিচেনে নি্য়ে আসলো,আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাবার ভান করেও রেহাই পেলামনা।কান্ড দেখে শুচী হা:মাতালের সাথে তর্ক চলেনা সেটা বুজলাম উনার অবস্থা দেখে,কারণ উনিও রাজি হলেন যেতে,আমাকে আবার কি ড্রেস পরা যায় সেটাও জানতে চাইলেন।টং লিন সাথে সাথেই মরিচ মিয়ার সাথে হাটা দিল,কিসের পড়ালেখা ফ্রাইডে নাইটে??ফ্লোর এ গিয়ে দেখি চরম অবস্থা,গিজগিজ ভীড়,বীয়ারের বন্যা বইছে,উদ্দাম নাচানাচি। কিছক্ষণ পর আর দাড়িয়ে থাকা গেলনা,মেঝে তে বিয়ারের বোতল পড়ায় নাচা,হাটা কিছুই সম্ভব না,সব ছুটে গেল পাশের ব্লকে।সেখানে দেখি মরিচের কপাল খুলেছে:নুরিয়ার মনোযোগ আজ পুরোপুরি মরিচের দিকে।কিন্তু এত সহজে পোলাপান কি শিকার ছেড়ে দেয় নাকি?আমার ব্লকের লেবানিজ পোলা সামীর-শুচীর মতে যার মত ভদ্র,নম্র পোলা গোটা ডর্মে আর নাই,সেই বেহায়ার মত নুরিয়ার আর মরিচের মাঝখানে ডিসটাব করে।সব দেখে মুচকি হাসি। মরিচের ক্যামেরাটা টং লিন ঘাড়ে ঝুলিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল শুরুতেই।ওর খোজ দ্যা সার্চ পড়ল-দেখি ব্যাটা লাল টুকটুকে এক টুপি মাথায় এক কোরিয়ান মেয়ের গলায় ঝুলে হি হি করে হেসে চলেছে,মুখ চোখ সব বিয়ারের কারণে লাল।
নাহ,সেদিন মরিচের কপালে নুরিয়া জোটেনি,তবে লাল ফুল পাপড়ি মেলতে শুরু করেছিল বৈকি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:১২