আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলো: 'এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল:
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।'
'এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?'
মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।
সময়ের অবিরল শাদা আর কালো
বনানীর বুক থেকে এসে
মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক - তবু চোখ ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।
[সে - জীবনানন্দ দাস]
কার্তিকের ৫ তারিখ ছিল প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ এর মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য, রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত।
খুব অবাক লাগে এই ভেবে যে, কবি জীবনানন্দ দাশ যে সময় ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তখন পর্যন্ত একশত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র একটিই– সেটা কবি জীবনানন্দ দাশ।
জানা যায়, সেই সময় ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন কবি।
দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে গৃহে ফেরার সড়কে ওঠার জন্য ট্রাম লাইন পার হবার সময়েই ঘটে এই দুর্ঘটনা।
গুরুতর-ভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল
এবং অন্যান্যরা তাঁকে উদ্ধার করে।
পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয়নি।
কবি মারা যান ২৩ শে অক্টোবর। এ সময় কবির স্ত্রী লাবণ্য দাশকে খুব কমই কবির পাশে দেখা গিয়েছিল। জানা যায় তিনি তখন টালিগঞ্জে সিনেমার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
কি অবাক!! কবি তখন অর্থকষ্টে ছিলেন।
হায় কবি!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮