কবির মৃত্যু নেই!
তারা রয়ে যান আমাদেরই কাছে। অনুভবে, শব্দে
কবিতায়
চিন্তায়
নিমগ্নতায়
.................................................................
মুনিরা চৌধুরী// গত ১৭ নভেম্বর মুনিরা চৌধুরী তাঁর ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন। সেই পোস্টের প্রথম দুই লাইনে তিনি লিখেছেন, ‘মুনিরাগাছ (১), আত্নহারা আমি- বেঁচে থাকবো না কি মরে যাবো, কে ডাকছে আমায়! তুমি না স্বয়ং ঈশ্বর!’
যুক্তরাজ্যে এক দুর্ঘটনায় নিহত হন কবি মুনিরা। ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মুনিরার ফুপাতো বোন রাশেদা আক্তার। তবে ৩৯ বছর বয়সী এ কবি ঠিক কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন তার যথাযথভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যেও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মুনিরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তর করেন।
তাঁর বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।
ফেসবুকে দেয়া কবি মুনিরা চৌধুরীর সর্বশেষ পোষ্ট
.................................................................
মুনিরাগাছ (১)
আত্নহারা আমি- বেঁচে থাকবো না কি মরে যাবো
কে ডাকছে আমায়! তুমি না সয়ং ঈশ্বর!
পিয়ানোবাদক মঞ্চে এসে বসলেন, একটু কায়দা করে কাশলেন, তারপর একমুহূর্তের জন্য ধ্যানমগ্ন হলেন৷ ঘর আলো করা উজ্জ্বল ঝাড়বাতিটি একসময় ম্লান হয়ে একটা নরম আলোয় এসে থামে৷ আর স্তব্ধতার মধ্য থেকে জেগে ওঠে একটি সুরধ্বনি, ক্রমে যা সংযত ও পরিমিত বিস্তারের সঙ্গে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে৷
"মোৎসার্ট কি?" ভাবি৷ যথারীতি প্রোগ্রামটা চাইতে ভুলে গেছি ৷ "মোৎসার্ট বোধহয়, নাকি স্কারলাট্টি?" গানের ব্যাপার এতো কম জানি! অবশ্য এমন নয় যে গান বুঝি না বা ভালোবাসি না৷ শৈশবে পিয়ানো শিখবার আবদার তো আমি-ই করেছিলাম৷ যে বছর শিখতে শুরু করেছিলাম সে বছরই ছেড়ে দিলাম৷ ছেড়ে দেবার কারণটি যেমন সোজা, তেমনি লজ্জারও৷ কিছুতেই স্বরগ্রামের "মা" ধ্বনিটি শিখে উঠতে পারিনি৷ কিছুতেই না৷ বুঝি না "মা" -এর পর কেন আর কিছুই মনে থাকে না৷ এই দেখে মা এর কি রাগ! না জানি কতটা কষ্ট পেয়েছেন! মেয়েটা অপদার্থ! তাই অপদার্থ হিসেবে দেখাই তার সহজ মনে হয়েছিলো৷ "আমি আর কষ্ট করতে পারি না৷ কোনো লাভ নেই৷ থাকগে ও নিজের মত পড়াশোনা না করলে নাই করুক৷ ওর যদি ভুতের গল্প শুনতেই ভালো লাগে, তাই সই৷ ষোলো বছরেও যদি পুতুল খেলতে চায়, খেলুক ও পুতুল নিয়ে৷" না হলো পুতুল ফেলতে, না হলো পড়াশোনা৷
মূর্খ হওয়ার কী আনন্দ!
চলবে...
.................................................................
একই ফ্রেমে দুই কবি
.................................................................
কবি দেলওয়ার হোসেন মঞ্জু//সামহোয়্যারইন ব্লগের ব্লগার, যিনি গেওর্গে আব্বাস নামেও পরিচিত ছিলেন; তিনি মারা গেছেন নভেম্বরের ১৭ তারিখ।
তাঁর জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর সিলেটে। দুই দশক আগে প্রবাসে পাড়ি জমান তিনি। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০টি। আটটি কাব্যগ্রন্থের সংকলন এক মলাটে ‘বিদ্যুতের বাগান সমগ্র’ ছাড়াও রয়েছে উপন্যাস ‘কাফের’ ও ‘জ্যোৎস্নার বেড়াল’।
তিনি অনিয়মিতভাবে চিন্তা ও চিন্তকের ছোটকাগজ ‘ধীস্বর’ সম্পাদনা করতেন।
ফেসবুকে দেয়া কবি দেলওয়ার হোসেন মঞ্জু’র সর্বশেষ পোষ্ট
.................................................................
চিঠি-02
...আর তুমি তো জানোই দক্ষিণ, লিঙ্গান্তরে মৃত্যু হচ্ছে নারী আর আমার ভাওয়ালী নৌকা নারীত্বে ডুবিয়ে দিয়েছি কতোদিন আগে...
তোমাকে তো বলেছি, ঘাড়-ভাঙা গোলাপসহ অনেক অনেক ভালো আছি, যদিও জন্ম থেকে জানি হাড়ের সঙ্গে মাংস ও মেদের রয়েছে অগাদ শত্রুতা...
তারপরও গর্দভের ঘোড়ায় চড়ে এখনো চলে যেতে পারি পীর, ফকির, আউলিয়ার আখড়ায়। হাড়ের খাঁচা হতে অদৃশ্য কবুতর উড়িয়ে ধূয়ার আড়াল থেকে দেখে নিতে পারি আগুনের আহত মুখ...
ভালো আছি। সাধনার সাত আসমানে বসে কবিতা লেখার কথা ছিলো, বসে আছি বায়তুল মোকাররমের সিঁড়িতে। এখন আর কবিতা লিখে কুকাপণ্ডিত হতে ইচ্ছে করে না দক্ষিণ, কবিতা লিখে গ্রানাড়ার সুলতান হতেও ইচ্ছে করে না। কাব্য বিষয়ক শত পৃষ্টার কূটকথা তাই পুড়িয়ে ফেলেছি
...আর কোনো এক শেষ রাতে জেনে যাই, বাতাসের তাণ্ডবে বৃক্ষ ভেঙে গেলে হা করে বেরিয়ে আসে কাঠের মগজ... বিবিধ প্রযত্নে এ-জীবনে বারবার ভেঙে পড়তে চেয়েছি আমি...
ভেঙে পড়ি, ভেঙে পড়ি
ঝড়ের জননীর বুকের ভেতরে ঘুমিয়ে পড়ি
একপিণ্ড দুধের জটলা..
ওপারে ভালো থাকুক কবিরা!
মঙ্গলম!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৮