আমি কখনো টুপি দাড়িকে অপছন্দ করি না। কিন্তু অহরহ একটি কান্ড দেখে আমি মুমূর্ষ হয়ে পড়ি। দেখি, প্রতারনা, ভন্ডামী আর লাম্পট্যের ঠিক আগে আগেই এই প্রতারক, ভন্ড আর লম্পটগুলো টুপি আর দাড়ির আড়ারে নিজেদের মুখকে ঢেকে নেয় এবং সমাজের নিকট নিজেদের শুভ্র মূর্তি নিয়ে অনবরত মানুষকে ঠকিয়ে যায়। কিছু ঘটনা অনেক দিন যাবত প্রায় ভুলে ছিলাম, আজকে প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট পড়ে সব মনে পড়ে গেল।
লিংক
উপরোক্ত ছবির ভদ্র (?) লোকটি নাম ড. এটিএম ফখরুদ্দীন। পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশের তথাকথিত জঙ্গী উৎপাদনের কারখানা বলে পরিচিত কওমী মাদরাসায়। এবং পরবর্তীতে সরকারী আলীয়া মাধ্যম হয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং আমার জানা মতে ঢাকা ভার্সিটি থেকেই ডক্টরেট করেন। পরবর্তীতে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ মর্যাদাকর শিক্ষাকেন্দ্র ঢাকা ভার্সিটিতেই নিয়োগ পান। এখানেও অনেক ঘাপলার গল্প শোনা যায়। তার নিয়োগ নাকি নিয়মতান্ত্রিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে তিনি একটি চিহ্নিত মহলের সহযোগিতা পেয়েই নিয়োগ পান। সেই চিহ্নিত মহলটি কোন মহল, যারা ইতিমধ্যে প্রথম আলোর রিপোর্টটি পড়েছেন, তারা নিশ্চয় অনুমান করে নিয়েছেন।
ফলত সেই চিহ্নিত মহলটিকে তার সর্বদাই গুরুসেবা করে যেতে হয়েছে। তাদের কথায় নির্দিষ্ট ছাত্রের পরীক্ষার খাতায় কম নম্বার দিতে হয়েছে, কিংবা নিরেট গবেট ছাত্রকে বানিয়ে দিতে হয়েছে ক্লাসের ফাস্ট বয়। এ ক্ষেত্রে সচেতন ছাত্রদেরও বিশেষ কিছু করার ছিল না। কারণ, আমরা জানি, ঢাকা ভার্সিটির এরাবিক বিভাগে তুলনামূলক অথর্ব ছাত্ররাই ভর্তি হয়। যাদের মেরুদন্ড (সবাইকে বলছি না) কেবল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর তল্পিবাহন ছাড়া কিছু নেই।
ইতিমধ্যেই তিনি সোনায় সোহাগা হিসেবে পেয়েছেন আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব (?), জামায়াত বিরোধিতায় (প্রকাশ্যে) মুখে ফেনা তুলে ফেলা ড. এবিএম সিদ্দিকুর রহমান নিজামীকে। তিনি যে জামায়াতের রিক্রুট ছিলেন, তখনকার প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নিকট বিষয়টি মোটেই অস্পষ্ট ছিল না। তারা জেনেও কিছু করতে পারেননি। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন যে সমস্যাটি প্রকট রূপ ধারণ করেছে, তার শুরু কিন্তু তখন থেকেই। বিভিন্ন মহলে জামায়াত তাদের লোকদের রিক্রুট করেছে। তাদের মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান করেছে এবং করছে। এবং আপত্তিকর কিছু ঝায় ঝামেলার উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট দল বা মহলের ঘারে দোষ চাপাতে সাহায্য করেছে। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ বড় ধরনের আক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যতদিন এই ছাত্রলীগকে শিবির রিক্রুট মুক্ত করা না হবে, ততদিন আওয়ামী লীগের মুক্তি নেই_ এটি আমার কথা না, এ দেশের পলিটিক্স বিশেষজ্ঞদের কথা।
যাই হোক, ফিরে আসি ড. এটিএম ফখরুদ্দীনের প্রসঙ্গে। যখন বিএনপি ক্ষমতায় এলো, তখন তার প্রতাপের চোট সবার গায়েই কম বেশি লেগেছিল। বিপুল অংকের অর্থনৈতিক প্রতারণার ফলে তাকে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা সত্বেও দেশ ছাড়তে হয়েছিল। দীর্ঘদিন তাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল সৌদি আরবে। পরবর্তী আবার দেশে ফিরে একই কান্ড। এ আমলেই তিনি একাধিক বার পাকিস্তানে গমন করেন, সেটি কী কারণে, আমারা কাছের কেউ কখনো তা জানতে পারিনি।
ড. এটিএম ফখরুদ্দনের সাথে যারা পরিচিত, তারা সকলে একবাক্যে একটি কথা স্বীকার করবেন, তিনি আপন পরিবার সম্পর্কে অভদ্রপূর্ণ এমনকি অশ্লীল প্রসঙ্গ টেনে আলোচনা করতেও ছাড়েন না। অবশ্য দীর্ঘদিন পড়ে আমাদের কাছে এ অশ্লীল আলোচনার অবতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কিছু দিন আগে শুনেছি, তিনি নাকি আপাতত ধান্ধার ডেরা পেতেছেন ঢাকার উত্তরায়। সেখানে তার মতই আরো কয়েকজন দাড়ি টুপি পড়া ভদ্রলোক (?) জুটেছেন। নতুন একটি বিয়ে করে সেখানে সংসার পেতেছেন। এইটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। পরে আরো যে ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি, সেটি শুনে নির্বাক হয়ে পড়েছি। তিনি নাকি ইতি পূর্বে আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন। (প্রথমটি ছাড়া) তারা ইতিমধ্যে তাকে ত্যাগ করেছে। তার অত্যাচারে, মিথ্যা প্রলোভনের প্রমাণ পেয়ে, অমানুষিক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে কোনো মতে পালিয়ে বেচেছে। এখন যাকে বিয়ে করেছে, সে তার মতো পদাধিকারী ব্যক্তির জন্য মোটেও শোভন ছিল না। সে নাকি তার বাড়ীর কাজের মেয়ে ছিল। জানি না, বিষয়টি সত্য কি-না। হলেও হতে পারে। তিনি হয়তো একেই নিরাপদ মনে করেছেন। তাকে যদি কেও একাধিক বিয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাহলে তিনি এন্তার কোরান হাদিস উদ্ধৃত করে দেন। এবং যারা এ বিষয়টিকে মন্দ বলেন, তাদের ইসলাম নিয়ে তার নাকি সন্দেহ রয়েছে।
তার প্রথম স্ত্রী, যিনি নিজ কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত, তিনি এসব দেখে আগে প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু এখন তিনি নির্বাক। লজ্জায় কারো কাছে বিষয়গুলো খুলেও বলতে পারেন না। ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে, তারাও বাবার এসব কর্মকান্ডে চরম ব্যথিত ও মর্মাহত।
আজ প্রথম আলোর রিপোর্টটি পড়ে আমার অনেক দিনের পুরোনো চেনা এই লোকটির কথা মনে পড়ল। যারা তাকে ফলো করেন, তাদের কাছ থেকে তার একান্ত এই তথ্যগুলো নিয়েছি। এবং যাচাই করে দেখেছি মোটামুটি সবগুলোই ঠিক আছে। তার একান্ত বন্ধুরাই এসমস্ত কর্মকান্ডের সাক্ষী। শিবিরের কর্মীদের খাতায় অধিক নাম্বার দেয়া এবং অন্যান্যদেরকে বঞ্চিত করা, এটি তার জন্য নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার ছিল। তিনি যে জামায়াতের রিক্রুট, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বিএনপির আমলে জামায়াত তাকে ওলামা দলে নিয়োগ দিয়েছিল, দিয়ে কী ভুল করেছিল, সেটি বিএনপি সংশ্লিষ্ট লোক মাত্রই জানেন।
যাই হোক, ঢাকা ভার্সিটির বন্ধুদের প্রতি আমার আবেদন, এই লোকটির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন। চিনে রাখুন একে।
ঢাকা ভার্সিটির জনৈক প্রফেসরকে নিয়ে কিঞ্চিৎ, আজকের প্রথম আলোর রিপোর্ট সামনে রেখে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন