ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি আকসুর এক দূর্ধর্ষ আন্ডারকাভার গোয়েন্দা অফিসার ছিলো মিস্টার আল হাসান। বিশ্ব ক্রিকেটের মঙ্গলের স্বার্থে অনেক দিন ধরেই সে ক্রিকেট জুয়াড়ি ধরার একটা বিশেষ গোপন মিশনে কাজ করছে। এই মিশনে তার কাজ ছিলো, টপ টপ জুয়াড়িদের ফাঁদে ফেলে তাদের মাধ্যমে অন্যান্য জুয়াড়িদের আস্তানা ধ্বংস করে দেয়া।
তার প্রথম টোপ গিলেছে ভারতীয় জুয়াড়ি আগারওয়াল। আইপিএল এর কারণে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে জুয়াড়িদের রিচ করা ছিলো মোটামুটি সহজ। ফলে ভারতিয় বোর্ডের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে আকসু জুয়াড়ি আগারওয়ালকে আল হাসানকে দিয়ে ম্যাচ পাতানো যাবে এমন একটা ভূয়া নিউজ পাঠায়। এই ভূয়া নিউজ পেয়েই আগারওয়াল আল হাসানের সাথে যোগাযোগ শুরু করে ও নানাভাবে ম্যাচ ফিক্সিং করতে বলে। আল হাসান তার কথায় সাড়া দেয় না। কিন্তু মিশন সাকসেসফুল করার জন্য তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যায়। কারণ আল হাসানের টার্গেটতো ম্যাচ ফিক্সিং না। আল হাসানের টার্গেট হলো আগারওয়ালের মাধ্যমে বিশ্বের সকল জুয়াড়িদের ধরে সান্ডে মান্ডে ক্লোজ করে দেয়া।
একে একে তিনটি ম্যাচ ফিক্সিং এর প্রস্তাব দেয়া হয় আল হাসানকে। আল হাসান সেসব তার আকসুর গোয়েন্দা ভচকে জানায়। ভচ তাকে বলে বিষয়টা আরো গোপন রাখো, কারণ আকসুর ভেতরেও কিছু অসাধু অফিসার আছে যারা জুয়াড়িদের সাথে যোগাযোগ রাখে। তারা জেনে গেলে জুয়াড়িদেরকে সব তথ্য জানিয়ে দিবে। জুয়াড়িরা সাবধান হয়ে যাবে। আল হাসানও আর কাউকে জানায় না। চুপচাপ বিশ্ব ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ করে যায় সে।
এরপর এক বছর এই মিশনের আওতায় জুয়াড়ি আগারওয়ালে সাথে টানা যোগাযোগের পর একদিন আগারওয়াল আল হাসানের ডলার একাউন্ট, বিটকয়েন ইত্যাদি হেনতেন জানতে চায়। আল হাসান ভাবে, এই সুযোগ। এবার জুয়াড়ির সাথে দেখা করে আরো কিছু জুয়াড়িকে চিনে নেয়া যাবে। আকসুতে তার ভচকেও সে বিষয়টি জানায়। কিন্তু কোন এক অনির্দিষ্ট কারণে ভচ তাকে মিশন আপাতত স্থগিত করতে বলে।
সাকিবও মিশন স্থগিত করে আবার শুধু ক্রিকেট খেলা শুরু করে।
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে দাবী দাওয়া পেশ করার জন্য ও তা আদায় করার জন্য আল হাসান ক্রিকেটার ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়। বিশ্ব ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ করা ক্রিকেটার যদি দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ না করে তাহলে কীভাবে হবে। আন্দোলনের ফলে আল হাসানদের ক্রিকেট বোর্ডের তার উপর ক্ষেপে যায়।
এদিকে অন্য আরেকটি ঘটনা ঘটতে থাকে ভারতে। বাংলাদেশের সাথে একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ সিরিজে হেরে গিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় ভারতিয় ক্রিকেট বোর্ড। বোর্ড কর্মকর্তারা সহ সবাই এই আশু বিপর্যয় মোকাবেলায় বিশেষ সভায় বসে। সভার মূল প্রতিপাদ্য ছিলো “বাংলাদেশকে কীভাবে আটকানো যায়”। সিদ্ধান্ত হয় , কেবল আল হাসানকে সাইজ করে দিতে পারলেই বাংলাদেশ শেষ। কিন্তু ভারতিয় ক্রিকেট বোর্ড মাঠে আল হাসানকে আটকানোর চেয়ে মাঠের বাইরে আটকে দিতে চায়। এই সময়ে আল হাসানকে জুয়াড়ি আগারওয়ালের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সেই ভারতিয় বোর্ড কর্মকর্তা এবার নিজ দেশের স্বার্থে নতুন ফাঁদ পাতে।
আল হাসানের উপর বোর্ড প্রেসিডেন্টের সম্প্রতি ক্ষোভের বিষয়টিকে ভারতিয় সেই বোর্ড কর্মকর্তা হাতিয়ার হিসেবে নেয়। বোর্ড প্রেসিডেন্টকে জানিয়ে দেয় আকসুর গোপন মিশনে আল হাসানের সম্পৃক্ত থাকার খবর।
এরপর বোর্ড প্রেসিডেন্ট সকল তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে আল হাসানকে ফাঁসাতে নেমে পড়ে। আল হাসানকে একটা শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আকসুর গোপন মিশনে থাকা আল হাসানের সেই ভচকে কিনে ফেলে। আকসুর গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে কিনে ফেলার মাধ্যমে আল হাসানের সেই গোপন মিশনের সকল নথিপত্র আকসু থেকে চিরতরে ডিলেট করে দেয়।
এরপর তদন্ত শুরু হয়। গঠন করা হয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। সেই স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল তিনদিনেই সকল প্রমাণাদি জোগাড় করে ফেলে। আসলে প্রমাণাদিতো আগেই ছিলো আকসুর সেই অফিসারের কাছে। ওইগুলাকে জাস্ট আইওয়াশ করার জন্য সবার সামনে নিয়ে আসে। এরপর প্রহসনের রায় দেয়া হয় আল হাসানের বিরুদ্ধে।
এর মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে যোগ হয় এক কালো অধ্যায়ের। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ক্রিকেটে থেকে জুয়াড়ি নির্মুলে কাজ করা আকসুর স্পেশাল গোয়েন্দা অফিসার সাকিব আল হাসান ফেঁসে যায় ষড়যন্ত্রের জালে। ক্রিকেটকে সারা জীবন এই কলংক বয়ে বেড়াতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:২০