মেয়েটা ছিলো আমার ফ্রেন্ডের পরিচিত বড়বোন। আমার ফ্রেন্ডস অপ ফ্রেন্ড বলা যায়। খুবই মিশুক আর খোলামনের। আমরা দুজনই বাংলা সিনেমা ও খাঁসির কাচ্চি পছন্দ করতাম, সেই সুবাধে সখ্যতা বেড়ে গেছে। ভালো কোন বাংলা সিনেমা রিলিজ হলে আমরা সিনেমাটা দেখা, আলোচনা-সমালোচনা করতাম ও কাচ্চি খেতাম। প্রথম প্রথম মুলত আমার ফ্রেন্ডের সুবাধে তার সাথে দেখা হলেও ধীরে ধীরে আমাদের সখ্যতা বাড়তে লাগলো। ফ্রেন্ড ছাড়াও আমরা প্রায়ই দেখা করতাম, আড্ডা দিতাম, সিনেমা দেখতাম।
একটা সময় আড্ডা, সিনেমার বাইরেও আমরা জাগতিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতাম। সময়ে, অসময়ে দেখা করা, রাত জেগে কথা বলা এইসব আমাদের দিনে দিনে বাড়তে লাগলো। একেবারে সোজা বাংলার প্রেম কাহিনীর মতো এভাবে একসময় আমরা দুজনে আবিষ্কার করলাম আমরা প্রেমে পড়েছি। এবং অঘোষিতভাবে দুজন এটা মনে মনে মেনেও নিলাম। আনুষ্ঠানিক প্রেম নিবেদন না করলেও আমরা প্রায় প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই আচরণ করতে শুরু করলাম। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করা।
এমন একটা পরিস্থিতিতে সে একরাতে আমাকে তাদের বাসায় নিমন্ত্রণ করলো। বলা বাহুল্য বাসা খালিই ছিলো। বাসায় গিয়ে দেখি সে প্রচুর সেজেছে। একদম ভয়াবহ রকমের সুন্দরী লাগছিলো মেয়েটাকে। বাসায় মোমবাতিটাতি জ্বালিয়ে একাকার অবস্থা। একটা আলোছায়ার মতো অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করেছে মেয়েটা। তার রুমের বিছানায় ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রেখেছিলো।
সে জানালো আমার জন্য নাকি সারপ্রাইজ আছে আজকে, এত কিছুর পর আবার কি সারপ্রাইজ থাকতে পারে ভেবে পাচ্ছিলাম না আমি, অপেক্ষা করতে লাগলাম। সে তাদের বাসার সবকিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালো, কিছুক্ষণ ছাদে গিয়ে বসলাম দুজন। কিন্তু আমার মন পড়ে ছিলো আসল কাজে, সারপ্রাইজটা কি সেটা উশখুশ করছিলো মনের মধ্যে। সময় নষ্ট আমার সহ্য হচ্ছিলো না।
শেষ পর্যন্ত আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমার সামনে উন্মোচন হলো রাতের সারপ্রাইজ। শুধু আমি আর সে। আমি কোন ভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। তারও চোখ ঝলঝল করছিলো এবং একসময় সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম। পুরো সময় জুড়ে আমিই ডমিনেটিং থাকলেও দুজনেই নিজেদের ভেতরে একটা রাক্ষোস আবিষ্কার করলাম। আমার যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিলো সেটা আমি বেমালুম ভুলে গেলাম। ভেতরের সকল জড়তা, লজ্জা সবকিছুকে ছুড়ে ফেলে আমরা সম্পন্ন করলাম পরম তৃপ্তিময় কিছু সময়। তৃপ্তিভরে এক পাতিল খাঁসির কাচ্ছির দুই-তৃতীয়াংশ একা খেয়ে ফেলার ফলে আমার রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলো। আমি কোনভাবে স্বাভাবিক থাকতে না পেরে একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ওকে খুব অস্বাভাবিক ভাবে আবিষ্কার করলাম। সারারাত জেগে থাকার ফলে চোখ লাল। আমার সাথে কোন কথা বলছিলো না। শুধু বলেছিলো কোন কথা না বলে যেনো বাসা থেকে বের হয়ে যাই। আমিও তার কথা মতো বের হয়ে আসলাম।
বাসায় এসে ঠিক করলাম বাকি জীবন এই মেয়ের সাথেই কাটিয়ে দিবো। যেই মেয়ে এত আয়োজন করে খাঁসির কাচ্ছি খাওয়ায় তাকে বিয়ে না করলে জীবনের ষোল আনাই বৃথা। কিন্তু ওইদিনের পর তার কোন খোঁজখবর পাচ্ছিলাম না।
প্রায় চারদিন পরে আমার ফোনে "যে ছেলে ছোট সারপ্রাইজ পেয়ে বড় সারপ্রাইজের কথা ভুলে যায় তার সাথে রিলেশন রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না, আল্লায় তোরে বাকি জীবন ছাগলের সাথে সংসার করার তৌফিক দিক। যে ছেলে খাঁসির, কাচ্ছির মানুষের সাথে তার হয় নারে প্রেম" লেখা একটা মেসেজ আসলো।
#অনুগল্প
#সারপ্রাইজ
#আমারকেনোপ্রেমহয়না
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৯