আমাদের গ্রামের নরেশ কাকা, গ্রাম্য হাঁতুড়ে ডাক্তার বলতে যেটা বোঝায় উনি সেটাই। বাজারের ফার্মাসির দোকান বন্ধ করে রাত ১১-১২ টার মধ্যে বাসায় আসেন। ঘুমাতে ঘুমাতে ওঁনার কতক্ষন লাগে সে খবর আমার জানা নেই। কিন্তু মাঝরাতে কিংবা শেষ রাতে আমাদের বাড়ির কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা এই নরেশ কাকাকে ফোন করি। উনি হয়তো তখন ঘুমিয়ে পড়েছেন কিংবা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু উঁনি উঁনার ছোট হাতব্যাগ টা নিয়ে চলে আসেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। শহরে নেয়া লাগলে পরামর্শ দেন। কখনো কখনো নিজের ঘুম কে উপেক্ষা করে রোগির সাথে উনিও যান।
আমি শুধু একটা পেশার একটা প্রতীকি নরেশ কাকার কথা বললাম। যুগের পর যুগ আমাদের বাপ-দাদারা আর এই নরেশ কাকারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজকে গড়ে আসছেন, একসাথে চা খেতে খেতে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন। এখনো ঢাকা থেকে দুএক দিনের জন্য বাড়ীতে গেলে নরেশ কাকার দোকানে বসে চা খাওয়া হয়।
আমার বন্ধু রুবেল চন্দ্র কুরী আমাদের প্রায় বলে " বন্ধু তোরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে আমার খুব ভালো লাগে"। আজানের সময় কেউ লাউডলি কথা বললে ও মনে করিয়ে দেয়, আজান হচ্ছে, নয়েজ বন্ধ। ঢাকা থেকে বাড়ী গিয়ে ক্রোশমুন্সি বাজারে পা দিলেই সাইফুল, জুয়েলদের কথা যেমন মনে পড়ে আমার বন্ধু রনজিত শীলের কথাও মনে পড়ে।
এই নরেশ কাকারা, রুবেলরা, রমজিতরা যখন বলে "তোরা আমাদের কে কি দেশে থাকতে দিবি না"। তখন আমার লজ্জা হয়, কষ্ট হয়। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় যখন এদের মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেয়, তখনো আমার লজ্জা হয়, কষ্ট হয়।
আচ্ছা এই দেশে আমার যতটুকু অধিকার আছে, তাদেরও ততটুকু অধিকার আছে! নাকি?
তারাতো আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের দয়ায় বেঁচে নাই! দেশের সকল টেক্স দিয়ে নিজেরা ইনকাম করে বেঁচে আছে যোগ্য নাগরিকের মতই।
সেই ১৯৪৭ কিংবা তারও আগের সেই সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষকে শিকড়সহ সহ উপড়ে ফেলতে আমাদের আর কত সময় লাগবে?
আমি যদি আমার এই শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে না পারি, তাহলে মাঝরাতে নরেশ কাকাকে ডাকার অধিকারও আমার নাই।
হোক প্রতিবাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৮