বাংলা বিষয়ক কয়েকটি অভিজ্ঞতা বা কিভাবে পড়া উচিত কি কি বিষয় থাকে এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করছি। সাধারণত আমরা বাংলা বিষয়টাকেই সব সময়ই কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি! আপনাদের কথা জানি না। আমি তো সেই স্কুল কলেজে সব সময়ই পরীক্ষার আগের দিন রাতে বাংলা পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। ভাবখানা এমন যে আগেরদিন পড়লেই যথেস্ট। কিন্তু বিষয়টা আসলে এমন না। আগেরদিন পড়ে বা কোনও রকম প্ল্যান ছাড়া পড়লে হয়তো পাশ নম্বর তোলা যাবে কিন্তু রিজনেবল / ফাইট করার মত নম্বর পাওয়া যাবে না। আর তাই অন্যান্য বিষয়ের মত বাংলাতেও অনুগ্রহ করে সময় দিন।
আমরা বাংলার পেছনে একটুও সময় ব্যয় করিনা।শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাংলায় ৬০% নম্বর একটু কস্ট করলেই পাওয়া যায়! একটু বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটির সত্যতা টের পাবেন।বাংলা প্রথম পত্রে ব্যাকরণে ৩০ এর ভেতরে ৩০, সাহিত্যে ৩০ এর মধ্যে ২০-২৫, ভাব সম্প্রসারণে ২০ এর ভেতরে ১০ এবং সারমর্মে ২০ এর ভেতরে ১০,সব মিলিয়ে ১০০ তে প্রায় ৭০ নম্বর পাওয়া(একেবারে কম করে ধরে) খুবই সম্ভব যদি আপনি ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ১০০ তে যদি খুব খারাপ করে আপনি মাত্র ৫০ পান,তাহলে দুই পত্র মিলিয়ে আপনার নম্বর আসবে (৭০+৫০) অর্থাৎ ১২০-গড়ে ৬০% নম্বর। বাংলা পরীক্ষায় ৬০% নম্বর একজন সাধারণ মানের পরীক্ষার্থীর পক্ষেও তোলা সম্ভব যদি সে সঠিকভাবে পরিশ্রম করে। আর ৬০% নিঃসন্দেহে বাংলা পরীক্ষায় খুবই ভালো নম্বর যা বিসিএস পরীক্ষায় গড় পরীক্ষার্থীদের চাইতে আপনাকে অন্ততঃ কম করে হলেও ১০ নম্বর এগিয়ে দেবে। এর বেশিও পেতে পারেন তবে তার জন্য চাই এফোর্ট!
বাংলা প্রথম পত্রঃ
বাংলা প্রথম পত্রের নম্বর বন্টনে আমরা দেখতে পাই ৩০ নম্বর আসে সাহিত্য থেকে,৩০ নম্বর আসে ব্যাকরণ থেকে, ২০ নম্বর আসে ভাব-সম্প্রসারণে এবং ২০ নম্বর আসে সারমর্মে। নিচে উল্লেখিত বইগুলো বেশ উল্লেখযোগ্য
১। মাধ্যমিক বাংলা ব্যকরণ বোর্ডের বই
২। সৌমিত্র শেখরের বাংলা প্রিলিমিনারি (সাহিত্য অংশের জন্য)
৩। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস – মাহবুবুল আলম (সাহিত্যের জন্য)
৪। সৌমিত্র শেখরের বাংল দর্পণ (লিখিত দরখাস্ত, সারাংশ, ভাবসম্প্রসারণ এর জন্য)
৫। উচ্চমাধ্যমিক বাংলা -হায়াত মাহমুদ (ব্যকরণ অংশের জন্য)
সাহিত্য-৩০ নম্বর
যদিও পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাসে মাত্র অল্প কয়েকজন লেখক সম্পর্কে পড়তে বলা হয়েছে কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্নে প্রায় প্রতিবারই দেখা গিয়েছে যে এই লেখকদের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের নানা অংশ থেকে প্রশ্ন আসছে। এ কারণে লিখিত পরীক্ষায় সাহিত্য প্রস্তুতিতে আপনার পড়াশোনা ঠিক তেমনটিই হবে যেমনটি আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় নিয়েছিলেন। সন,তারিখ,বিখ্যাত বই,প্রথম প্রকাশিত রচনা ইত্যাদি প্রশ্নের পাশাপাশি চিন্তাভিত্তিক ছোট ছোট প্রশ্ন আসতে দেখা গিয়েছে বিগত পরীক্ষাগুলোতে-তাই পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো অবশ্যই দেখে নেবেন।বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে “কনসেপ্ট” পরিষ্কার করতে মাহবুবুল আলমের বইটির সম্ভবত বিকল্প নেই।আর বিভিন্ন লেখক সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্যে সৌমিত্র শেখরের বইটি তো আছেই।প্রিলিমিনারিতে যেহেতু পড়েছেন,সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিতে আপনার খুব বেশি কষ্ট হবার কথা না।
ব্যাকরণ-৩০ নম্বর
বাক্য পরিবর্তন, প্রবাদ-প্রবচন,পরিভাষা যা যা (পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাসে আছে) ইত্যাদি সম্বলিত ব্যাকরণ অংশের জন্যে যে কোন ভালো ব্যাকরণ বই পড়তে পারেন।হায়াৎ মামুদের উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণের বইটি খুবই ভালো বলে মনে হয়েছে। নবম-দশম শ্রেনীর বাংলা ব্যাকরণ বইটিও জরুরী।পিএসসির সিলেবাসের বাইরে কারক-সমাস,সন্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো এই বই থেকে দেখে যাওয়া অনেকটাই নিরাপদ।
ভাব সম্প্রসারণঃ২০ নম্বর
বিসিএস পরীক্ষায় ভাব সম্প্রসারণ হিসেবে যা আসে তা আমরা নবম-দশম শ্রেনীতে ইতোমধ্যেই চর্চা করেছি।কিন্তু মুশকিল হচ্ছে,বিসিএস পরীক্ষাটা হয় স্নাতকদের মধ্যে সুতরাং নবম-দশম শ্রেনীর মানের খুব ভালো লেখা লিখলেও নম্বর খুব একটা তোলা সাধারণত কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি একজন স্নাতক / স্নাতকোত্তর, কাজেই পরীক্ষক আপনার কাছে সেই মানের লেখাই প্রত্যাশা করবেন।
সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পন বইটা প্রাথমিক ধারণার জন্যে বেশ ভালো-তবে হুবহু কোন বই থেকে না তুলে নিজের ভাষায় লেখাটাই সর্বোত্তম বলে আমি মনে করি।ভাব সম্প্রসারণ আমি তিনটি অংশে বিভক্ত করে লিখতামঃ মূলভাব(অল্প এক-দু লাইনের ভেতরে প্রদত্ত অংশের ব্যাখ্যা), সম্প্রসারিত ভাব এবং উপসংহার(নিজের ভাষায় অল্প-এক দুলাইন মন্তব্য)।এছাড়া সম্প্রসারিত অংশে প্রদত্ত কাব্য/গদ্যাংশের সাথে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি ব্যবহার করেও ভাল নম্বর তোলা যায়।
এছাড়া যে কোন শিরোনাম/ উদ্ধৃতি উজ্জ্বল নীল কালিতে এবং বাকি লেখা কালো কালিতে লিখলে পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়-এ জাতীয় কৌশলগুলো তো আমরা সেই স্কুল থেকেই জানি।অতিরিক্ত খাতায় না হোক, মূল খাতায় অবশ্যই মার্জিন করবেন।একটি মার্জিন করা পরিচ্ছন্ন খাতা সাহিত্য জাতীয় পরীক্ষায় বেশ কিছু “ইমপ্রেশন মার্কস” অনায়াসেই বয়ে আনে। এই অল্প এক-দু নম্বরই কিন্তু দিনশেষে আপনার অবস্থান নির্ধারণ করে দিতে যথেষ্ট-এটা মাথায় রাখবেন।
সারাংশ/সারমর্মঃ২০ নম্বর
সারাংশ/সারমর্ম দুটোর মধ্যে একটি লিখতে হলে কাব্যাংশের সারমর্ম লেখাটাই ভালো কারণ সবাই সাধারণত গদ্যাংশের সারমর্ম লেখে,যেটি অপেক্ষাকৃত সহজ।অবশ্য কাব্যাংশের অর্থ যদি একেবারেই না বোঝেন তাহলে সহজটি উত্তর করাই যুক্তিযুক্ত। সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পন/হায়াৎ মামুদের উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা অথবা যে কোন ভালো বাংলা ব্যাকরণ বইয়ে সারাংশ লেখার নিয়ম বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।যদি সংক্ষেপে বলতে যাই তাহলে হবে ১) কোন অবস্থাতেই সারাংশের দৈর্ঘ্য প্রদত্ত গদ্য/পদ্যাংশের ১/৩ ভাগের বেশি হবেনা ২)সম্পূর্ণ নিজের ভাষা ব্যবহার করতে হবে,কোনভাবেই প্রদত্ত অংশের কোন লাইন হুবহু তুলে দেয়া যাবেনা এবং ৩ )কোন উপমা ব্যবহার করা যাবেনা, সহজ সরল ভাষায় মূলভাবটি অতি সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে। সারাংশ লেখার আগে অবশ্যই সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পুরোটি বার বার পড়ে চিন্তা করার পর তবেই লিখবেন-মনে রাখবেন,লেখা অল্প হলেও নম্বর কিন্তু ২০-কাজেই লেখার মান অবশ্যই ভালো হতে হবে।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রঃ
১) রচনাঃ ৪০+৪০=৮০
১০০ এর ভেতরে আশি নম্বর যেহেতু রচনায় কাজেই এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মনে হয় কাউকেই মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়বেনা।বিগত বৎসরের প্রশ্নাবলী এবং বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আসতে পারে এরকম ১০-১৫টি রচনা এমনভাবে পড়ুন যেন এর যে কোন একটি এলে আপনি সারা বিসিএসে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে পারেন। ম্যাপ, ছক, পরিসংখ্যান যত বেশি ব্যবহার করবেন তত বেশি নম্বর পাবেন এবং আপনার সময়ও কম লাগবে।সুযোগ থাকলে সাহিত্যমূলক না লিখে তথ্যমূলক রচনা লেখাই ভালো। পরিসংখ্যান মুখস্ত করা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, একেবারে হুবহু পরিসংখ্যান আপনাকে মুখস্ত করতে হবেনা। যে পরিসংখ্যানটি পরিক্ষায় ব্যবহার করবেন সেটি ৪-৫ বার পড়ুন, মোটামুটি কাছাকাছি একটি ধারণা নিন এবং সেই কাছাকাছি ধারণার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষার খাতায় সেটি তুলে দিন।প্রতিটি পরিসংখ্যানে অবশ্যই উৎস দেবেন,এমনকী বানিয়ে হলেও।বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক-ইত্যাদি বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ব্যবহৃত বেশ “জনপ্রিয়” উৎস!
সাধারণত সাহিত্যমূলক একটি রচনা আপনাকে লিখতে হতে পারে-সেজন্যে আগে থেকেই বানিয়ে লেখার অভ্যাস করুন।যে কোন বিষয়ের উপর পৃষ্ঠাখানেক লিখে বাংলায় ভালো এমন কাউকে দেখিয়ে নিজের ভাষাগত দিকগুলো ঠিক করে নিন/আর উন্নত করুন।ভালো লেখার অন্যতম পূর্বশর্ত ভালো বই পড়া-কাজেই জোর করে হলেও প্রতিদিন ভালো কোন লেখকের বই পড়ুন।
২)মানপত্র/চিঠি/ব্যবসায়িক পত্র/মেমো/দাপ্তরিক পত্রঃ ২০
মানপত্র বা ব্যক্তিগত চিঠি উত্তর না করাটাই ভালো কেননা এতে খুব ভালো লিখলেও সাহিত্য বিচারে খুব বেশি নম্বর পাওয়া যায়না বললেই চলে।যে কোন ভালো বই থেকে সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পনে দেয়া পত্রগুলোর ছক মোটামুটি ভালো। আনুষ্ঠানিক চিঠিপত্রের “ফরম্যাট” দেখে নিন এবং পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের উত্তর নিজের মত তৈরি করে অনুশীলন করুন।একটি ভালো আনুষ্ঠানিক পত্রে ২০ এ ১৬+ দেয়াটা এই গোল্ডেন জিপিএ এর যুগে অসম্বব নয় মোটেই।
শেষে বলতে চাই বাংলা যেমন সহজ বিষয় আবার কঠিন বিষয়ও! তাই মোটামুটি ধারনা এবং টেকনিক এপ্ল্যাই করলে নাম্বার পাওয়া কঠিন কিছু নয়! বিভিন্ন সিনিয়রদের সাথে জেনে এইগুলো জেনেছি! আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম! ভুল হলে ক্ষমা করবেন! সবাই ভালো ভাবে পড়াশুনা করেন! ভালো করেন! শুভ কামনা!
পরবর্তী লেখা থাকবে ইংরেজী বিষয়ের উপর
Find / Follow me on Facebook
https://www.facebook.com/neelchy