একালের হ্যাংআউটের লোগো!
হ্যাং আউটের দিকে চোখ রেখে অস্থির হয়ে থাকা আবিদুর রহমান, নিজেকে সামলে নিচ্ছেন। সামলে নিতে হবে, এটাই নিয়ম, এটা নিশ্চিত-তাও জানে আবিদুর রহমান।
মেয়েটি সে কখনো দেখেনি, অথবা মহিলাটি তাকে। আসলে সে কি মেয়ে না, মহিলা সেটিও তার আন্দাজ। তবে বয়স্ক হোক আর ছুঁড়ি- তাতে আবিদুরের মেন কিছু যায় আসেনা।
কাম, যৌনাবেগ- জাতীয় শব্দমালা বা বাসনাকে পেছনে ফেলে মেয়েটির সাথে অথবা মহিলাটির সাথে সে কথা বলত হ্যাং আউটে।
ডাগর চোখ, হরিণী মায়া আর রোদ্দুরে বিকালের গল্প। সে গল্প এক দুই তিন করে শতকে পৌছে যায়! তবুও যেন কিছু একটা বলা বাকি ছিল।
রোসি যখন ঢাকায় থাকত, সেময়কার গল্প করতো- তার মানে সে এখন ঢাকায় থাকে না। বরফের কোন একটা দেশে থাকে-- যেখানে সকালে উঠে বরফ সাফ করাটাও তার কাজ; সে গল্প করতো। দেশে থাকতে জল, জলাবদ্ধতা আর সাপের ভয়, বিদেশে বরফ, এনিয়ে আলোচনা। তারপর আলোচ্যসূচিতে থাকত-; প্রকৃতি-প্রেম-গান আর কবিতামালা।
নিঃসঙ্গ একটা মানুষ রোসি। পড়াশোনা বা পারিবারিক ঝামেলা চুকাতে বিদেশে থাকে! বিদেশে- ইউরোপে সম্ভবত একা একটা মেয়ের জীবনে ঝামেলাহীন। তাই সে, সেখানে থাকে। বায়োরিয়ারি পণ্যের একটা দোকান একাই চালায়। স্বামী হারিয়েছে মেয়েটি, স্বামীর প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা, তাই বিয়ে থা করবে না বলে এস্তেমাল করার পর বিদেশই তার গাছে উৎকৃষ্ট গন্ব্য মনে হলো।
যেহেতু রোসি দেশের বাইরে থকে, তাই তার প্রতি বহু চোখও তার অন্তরালে তার পেছনে থাকে। গান শুনতে, কবিতা পড়তে পছন্দ করলেও প্রতিদিনকার ব্যস্ততা তাকে মনে করিয়ে দেয়, এই বেঁচে থাকা!
বছর ১৩ কি চৌদ্দ। আবিদুর আর রোসির যোগাযোগ। এর ফাঁকে কোনদিন আবিদুর বলেননি- রোসিকে তার ভালোলাগে, মানে ভালোবাসা, ইটিশ পিটিশ জাতীয় ভালোবাসার কথা দু'জনের কারো বয়ানে নেই।
গুগল মেইলে ঢুকলে দু'জনেই আনমনে হ্যাং আউটে চলে যায়! এটাতে অভ্যস্ততা হিসাবে দেখে আবিদুর রহমান। রোসি কি হিসাবে দেখে, সেটা বলাটা কঠিন!
হ্যাং আউটটা আবিদুর চিনতেন না। চেনার কথাও না। বেসিক মেইলেই অনভ্যস্ত আবিদুর , সেখানে হ্যাং আউট! রোসি তাঁকে চিনিয়েছে হ্যাং আউট ব্যবহার। বিদেশে থাকলে সাশ্রীয় যোগাযোগের অনেক উপায়-অভ্যস্ত হতে হয়! রোসিও হয়েছে। কাছের মানুষদের সে তাও শিখিয়েছে।
লম্বা আলাপে আবিদুর কখনো খারাপ বা কটু কথা বলেনি রোসিকে। রোসিও না। এমন একটা সম্পর্ক, তাও আবার রোমান্টিক ধাঁচের , যেটি টিকে ছিল বছর ১৫! এখনো যে নেই তা বলা যাবে না!
এটা কীভাবে সম্ভব হলো, তা নিয়েও বিস্ময় আছে আবিদুরের মনে।
মাঝখানে দেশে দু'বার এসেছিল রোসি। এটা আবিদুর জানে। একবার দেখা করবে বলেছিল, রোসি। আবিদুর দেখা করতে পারেনি।
দেখা না হওয়ার পেছনের কারণ কি দু'জনেই এটা ব্যাখ্যা করতে পারবে না। সময় হয়নি, নাকি অন্য কোন কারণ, সেটিও অজানা।
রাষ্ট্র-দার্শনিক রুশো যখন পরিচারক হিসাবে তার জীবন শুরু করেছিলেন, সে সময় একই মনিবের কাজ করাতার একজন পরিচারিকাকে তার পছন্দ হতো। তার মন পেতে বা তার প্রতি ভালোবাসা আদায়ে রুশো একটি ফন্দি করেছিল, তাতে কাজে হয়নি। সে ফন্দি যে ভুল ছিল তাও রুশো শিকার করেছেন।
আবিদুর রহমান ভাবছেন, তিনি কোন ফিকির করলে তাদের দেখা হতো! তিনি রুশোর মত হতেন না। রুশোকে কেন তিনি এখানে ডেকে আনছেন। সেটিও তার জানা নেই। সম্ভবত সম্প্রতি তিনি রুশোর জীবন নিয়ে ফের পড়ছেন বলে এটা কতার বেশি মনে পড়ছে।
বছর খানেক আগে ফেসবুকের পাতায় রোসিকে আবিষ্কার করেন আবিদুর রহমান। সাথে সঙ্গীয় পুরুষ। মহিলামত বয়স। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে রোসি। মৃত স্বামীর ছবিটাও দেয়ালে টাঙ্গানো।
আবিদুর নিজেকে প্রশ্ন করলো? কি হিংসে হয়! আবিদুরের ভেতরের মন বলল- না! ... আমি রোসিকে নিঃসঙ্গ সময়ে নিঃস্বার্থ সময় দিয়েছি। আমি চাইনি কিছুই। তাহলে হিংসে? হিংসে হবে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩১