ভেতরে প্রায় মাইলখানে পথ পাড়ি দিয়ে নেমে আসা ঝরণাটার নাম শৈল প্রপাত। এখানকার একটা বৈশিস্ট্য হলো ১২ মাস পানি মিলে। ফারুক পাড়া ও এর আশপাশের মানুষ এখানে জড়ো হন। তখনো আমাদের নাফাখুম যাওয়া হয়নি- যাওয়া হয়নি বলতে সাহসে কুলায়নি। তাই শৈল প্রপাতেই বসে কাটাতাম বিকাল- দুপ্পুন কিম্বা সকাল।
পাহাড়ে আমার বর্ষাকালেই বেশি ভালো লাগে। ছুটে চলা দুরন্ত কিশোরীর মতই চঞ্চল থাকে জলের ধারা। কৈশোরে স্কুল পালানোর কিশোরের মতই নেমে যাওয়া জলের সাথেই ভরতে থাকে খাল- সেখান থেকে ছুটে যায় দূর গ্রাম বেয়ে নদীতে। সাধারণত কিছু পাহাড়ি ঝরণা বরষায় ঘোলা জলে মোহ ভাঙ্গে। শৈল প্রপাত তার ব্যাতিক্রম।
২০০৫ সালের চোত মাসের এক দুপুরের আমরা সেখানে। অররা ক'জন। খাঁ খাঁ রোদ্দুরেও শৈলপ্রাতের ঠান্ডা জলে ভিজে যাচ্ছিলাম- পুরোটা দুপুর। জলে ভেজা, জল গড়িয়ে পড়ার স্থান ধরে নিচে নেমে ফারুক পাড়ার মাথা পর্যন্ত ঘুরে এসে ক্লান্ত আমরা। পাহাড়ি কলা- আর পেপে খেয়ে সবাই এনার্জির ফিরে পেতে শুর হলো কেনাকাটা। সে সময় বাঁশের বানানো ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি হতো সেখানে- বান্দরবান শহরে এর দাম ছিল বেশি। শৈল প্রাতের পাশে মালিক দেওয়ানের বাড়ির আঙিনায় বেশ কয়েকটি দোকানে এর দাম তুলনামূলক কম। এশার মায়ের সাথে চা খাচ্ছি। মানিক বাবু বিশাল এক শূকুরের মাথা নিয়ে আসলেন- চর্বি চক চক করছে। বললেন- 'তারক দা' আজকে কিন্তু খেয়ে যেতে হবে। আমি হেসে বল্লাম চান্দের গাড়ি টাইম শেষ। আমরা ছুটবো।
চা বিস্কুট খেয়েই ফিরছি। চান্দের গাড়ি চোত মাসের রোদে পুড়ে চলা পাহাড়ের খাঁজে কিম্বা ভাজে ঘুরছে। বিকালের দিকে শহরের এসে মনে হলো- একটু রিস্ট চাই। আবার চাই না। তাই দু মুঠো পেটে দিয়ে সবাই গেলাম স্বর্ণ মন্দির। তখনো এর নির্মান কাজ চলছিল। মন্দিরে উপরে একটা বিশাল ঘণ্টি- সে ঘণ্টি বাজিয়ে দিলো আমাদের একজন। ভান্তে ছুটে আসেন- 'আরে তারেক ভাই পোলপাইন সামলান।' ভান্তেরা সাধারণত খিটখিটে মেজাজের হন। তবে অজানা কোনো এক কারণে স্বর্ণ মন্দিরে ভান্তে অধম বান্দাকে পছন্দ করেন জানি না।
নিজেদের সামলে নেমে এসে দেবতার পুকুরে বসে আছি। সন্ধ্যা নেমে এল পাহােড়েরর চূড়া থেকে নামতে নামতে হলো- এ জীবন পূর্ণ হলো- এ জীবন ধন্য হলো এ জীবন অনন্ত আনন্দ জড়িয়ে নিলো-
এখন সে সব স্মৃতি! ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে সময়- আর রাজনীতি কেড়ে নিয়েছে নিরাপত্তা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৫