বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা । ঈশ্বর বাবাকে এমন বীজ দিয়েছেন, যা দিয়ে বাবা পৃথিবীর আলো-বাতাসে সন্তানকে নিয়ে আসেন । কৃতজ্ঞতা, বাবা ! ভালো থেকো !
বাবাকে নিয়ে কবিতা-গান, গল্প আছে অনেক । সংগ্রহে রাখার মতন ক'টি কবিতা গান এখানে একত্র করবার প্রয়াস পেলাম । কবিতায় কবির বানানরীতি অটুট রাখা হয়েছে ।
কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ'য়ে আছে ?
শামসুর রাহমান
কোন্ দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ'য়ে আছে
এখনো আমার মনে ? দেখেছিতো গাছে
সোনালি বুকের পাখি, পুকুরের জলে
শাদা হাঁস । দেখেছি পার্কের ঝলমলে
রোদ্দুরে শিশুর ছুটোছুটি কিংবা কোনো
যুগলের ব'সে থাকা আঁধারে কখনো ।
দেশে কি বিদেশে ঢের প্রাকৃতিক শোভা
বুলিয়েছে প্রীত আভা মনে, কখনো-বা
চিত্রকরদের সৃষ্টির সান্নিধ্যে খুব
হয়েছি সমৃদ্ধ আর নিঃসঙ্গতায় ডুব
দিয়ে করি প্রশ্ন : এখনো আমার কাছে
কোন্ দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ'য়ে আছে ?
যেদিন গেলেন পিতা, দেখলাম মা'কে--
জননী আমার নির্দ্বিধায় শান্ত তাঁকে
নিলেন প্রবল টেনে বুকে, রাখলেন
মুখে মুখ ; যেন প্রিয় ব'লে ডাকবেন
বাসরের স্বরে । এখনো আমার কাছে
সেই দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ'য়ে আছে !
.........
চামেলী হাতে নিম্ন মানের মানুষ
আবুল হাসান
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক,পুলিশ বিভাগে চাকরি কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো,হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেরার মতোন তিনি
আস্তে কেন চাকরবাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী ,পুলিশ সেপাই অধীনস্থ কনেস্টবল
সবার তিনি একবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।
মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থপ্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে।
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভঅলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় কোরে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বোলছেন,এই দ্যাখোতো
জলের রং এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবেনা?
আমি যখন মায়ের মুখে লজ্জা ব্রীড়া,ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম,বাবা তখন কাব্যি কোরতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোপায়।
মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্তলোক দ্যাখোনা?
ঘুষ খাচ্ছে,জমি কিনছে,শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে,
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে,
তুমি এসব লোক দ্যাখোনা?
বাবা তখন হাতের বোনা চাদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীড়ে সামান্য লোক,শিশিরগুলি চোখে মাখাতেন।
এখন তিনি পরাজিত,কেউ দ্যাখেনা একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন,বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণব্যর্থচিবুক বিষন্নলাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দুচোখ ভাসান তিনিই জানেন।
একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন,কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন,বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ,নিম্নমানের মানুষ।
............
পাপাকংগোস-এর কবিতা
(দৈনিক আজাদী পত্রিকা থেকে সংগৃহীত )
গাথা
আর চাষার ছেলে প্রশ্ন করল তার বাবাকে
বাবা, কবিতা কী?
বীজ বোনা আর ফসল কাটা!
উত্তর দিল চাষা।
দর্জির ছেলে প্রশ্ন করল
বাবা, কবিতা কী?
গরম, মজবুত পোশাক তৈরি করা!
উত্তর দিল দর্জি।
সেনাধ্যক্ষের ছেলে প্রশ্ন করল
বাবা, কবিতা কী?
গেরিলাদের বিরুদ্ধে
বুর্জোয়াদের সৈন্য পরিচালনা করা!
উত্তর দিলেন সেনাধ্যক্ষ।
কবির ছেলে প্রশ্ন করল
কবিতা কী, বাবা?
জানি না! উত্তর দিলেন কবি।
কিন্তু বাছা,
কবিতা লেখা মানেই কবিতা নয়।
..................................
'বাবা'-জেমস এর গান
সবশেষে একখানা মজার কবিতা "বাবা শাহ্ জালাল (রঃ) ক্ষমা করো" ! যদিও এইখানা ঠিক সেই অর্থে কবিতা হয়ে ওঠেছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে ! কবিতাটি লিখেছেন, জনৈক কালাম এ. মীর !
বাবা শাহ্ জালাল (রাঃ) ক্ষমা করো !
বাবা শাহ্ জালাল (রাঃ)
তোমার প্রতি শ্রদ্ধা নয়
তোমার প্রতি ভক্তি নয়
তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে "শিক্ষা দেবার জন্য"
তোমার পবিত্র নামকে ব্যবহার করেছেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা !
তোমার পবিত্র গুন ও নামের বরকতে
যেই দেশের আদি-পত্তন
সেই দেশেই তোমার পবিত্র নামকে
অতি নীচু নোংরা রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা !
বাবা শাহ্ জালালা (রাঃ)
তুমি আমাদের ক্ষমা করো
তুমি হতভাগা এই দেশটাকে ক্ষমা করো !
বাবা শাহ্ জালাল (রঃ)
আমরা জানি, নির্বোধের বিষ্ঠা লাগে তিনখানে
পায়ে হাতে, আর নাকে-
শেখ হাসিনার পাপ লাগলো কোথায়,
বাবা (রঃ) , কে বলবে তাকে ?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:০৭