সম্প্রতি হাইব্রিড ও অতি আওয়ামী লীগারদের উৎপাত আবার বেড়েছে। বছর দুয়েক আগেও রাজনৈতিক সংকটের সময় এদের দেখা যায়নি। বিগত নির্বাচনের আগে তারা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক তৎপরতা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও অতি আওয়ামী লীগারদের কোনো তৎপরতা ছিল না। বর্তমানে সরকারকে সুবিধাজনক অবস্থানে দেখে আবার মাঠে নেমেছেন অতি আওয়ামী লীগাররা। এদের কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের আওয়ামী লীগ সাজিয়ে বিভিন্ন নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে হাইব্রিডরা ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নিচ্ছেন। জড়িয়ে পড়ছেন টেন্ডার বাণিজ্যে।
সম্প্রতি মিডিয়ার কল্যাণে দেখা যাচ্ছে , হাইব্রিড ও নব্য অতি আওয়ামী লীগাররা গ্রুপ বেঁধে তৎপরতা চালাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ নেতা ও নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা । অনেক জাতীয় ব্যক্তিত্বকেও তারা অকারণে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগের বিপক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এদের মদদদাতা হিসেবে বেরিয়ে আসছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। বুঝে না বুঝে তারা যে সংকট তৈরি করছেন দীর্ঘমেয়াদে তা কোনদিকে মোড় নেবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিভিন্ন মহলে। নানা ধরনের নামসর্বস্ব সংগঠন তৈরি করে দলের ভিতরে-বাইরে সমস্যা সৃষ্টি করছে। নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের নেপথ্যে কাজ করছেন সুবিধাভোগী একশ্রেণির হাইব্রিড আওয়ামী লীগার।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের এখন জয়জয়কার। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, সাংগঠনিক কর্মসূচিতে হাইব্রিড নেতারা বরাবরই অনুপস্থিত। কর্মীদের সঙ্গে ক্রমাগত দূরত্ব বাড়ানো যেন হাইব্রিড নেতাদের প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল ও সরকারে কর্মীবিচ্ছিন্ন হাইব্রিডরা ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে। অভিযোগ রয়েছে, হঠাৎ দলে নেতা হওয়া হাইব্রিডদের রাজনৈতিক তৎপরতা না থাকলেও নিজেদের বিত্ত-বৈভব বাড়াতে পদ-পদবিকে তারা কাজে লাগাচ্ছেন।
এখন অনেকটা হাটে-মাঠে-ঘাটেই দলের কেন্দ্রীয় নেতার অস্তিত্ব মেলে।
সচিবালয় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকি সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই হাইব্রিডদের দেখা যায় নানা কিসিমের তদবির বাণিজ্যে। মৌসুমি পাখির মতোই পরপর দুবার ক্ষমতায় আসা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের তালিকায় নতুন যোগ হয়েছেন প্রবাসী আওয়ামী লীগাররা। দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে হাইব্রিডরা লাভজনক নানান প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। মৌসুমি পাখির মতোই এসব হাইব্রিড নেতা ঘন ঘন দেশে আসছেন-যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে হাইব্রিড নেতাদের কেউ কেউ বেসরকারি ব্যাংক, টিভি চ্যানেল ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানিসহ লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদারও হয়েছেন। কয়েকটি প্রভাবশালী দেশে দলীয় নেতৃত্বে থাকা হাইব্রিড নেতাদের কেউ কেউ দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির স্বপ্নে বিভোর।
হাইব্রিড, সুবিধাভোগী আর নব্য আওয়ামী লীগারদের ভিড়ে তৃণমূলের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা। দলের দীর্ঘ পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা হাইব্রিডদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান।
সময় এসেছে এবার- হাইব্রীড মুক্ত আওয়ামী লীগ গড়ার ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮