যদিও এরকম ঘটনা আমার জানামতে কোথাও কখনও ঘটেনি, তারপরেও পত্রিকায় ঘটনাটা পড়ার পর থেকে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছি। এ কোন দুনিয়ায় বাস করি আমরা? কোনদিন কি কোন ধর্ষকের ফাঁসি নিজ চোখে দেখতে পাব? নাকি গ্রেফতার বিচার তদন্তের ফাঁদে পার পেয়ে যাওয়া এই নরপশুদের অট্টহাসি শুনেই জীবন পার হয়ে যাবে? এসব খবর পত্রিকায় ছাপাই বা হয় কেন? আমাদের পৃথিবী কতটা নষ্ট হয়ে গেছে জানানোর জন্য? নাকি এগুলোই স্বাভাবিক - এই পরিবেশকে সহনীয় করার জন্য? কারো কাছে কি উত্তর আছে?
ধর্ষণের শিকার মা মৃত সন্তান নিয়ে ঘুরেছেন!
প্রথম আলো ৮ জুন ২০১৭
ভারতে আট মাসের শিশুকন্যাকে ছুড়ে ফেলে হত্যা ও মাকে ধর্ষণের ঘটনা দেশটিতে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ধর্ষণের পর ওই তরুণী মা তাঁর মৃত শিশুকে নিয়ে অটো ও মেট্রোতে চড়ে কীভাবে চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তাঁর মর্মস্পর্শী বর্ণনা উঠে এসেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এদিকে এ ঘটনায় তিন ধর্ষকের স্কেচ প্রকাশ করেছে পুলিশ। মৃত শিশু নিয়ে মেট্রোতে চড়া ও পুলিশের অবহেলার কথাও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে গত ২৯ মে মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটলেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায় গত সোমবার। ঘটনার পরদিন ৩০ মে ধর্ষণের শিকার নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেল টাউনশিপ (আইএমটি) মানেসরের কাছাকাছি একটি গ্রামে থাকেন। রাতে মা-বাবার বাড়ির উদ্দেশে শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনি বের হন। পথে এক অটোচালক ও দুজন যাত্রী তাঁকে জোর করে অটোতে তোলে। তাঁকে ধর্ষণ করে ও শিশুটিকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায় ওই তিন ধর্ষক।
তিন ধর্ষক যখন চলে যায়, তখন রাত ২টা বাজে। অন্ধকার রাস্তায় একাকী ওই তরুণীকে সাহায্য করার জন্য কেউ ছিল না। নিথর শিশুকে কোলে নিয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অপেক্ষা করেন। নিজের শারীরিক অবস্থার তোয়াক্কা না করে তিনি সন্তানকে নিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। প্রথমে অটোতে করে তিনি মেয়েকে নিয়ে পুরোনো গুরুগ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়ির কাছে একজন চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করলেও তিনি তা বিশ্বাস করেননি। এরপর তিনি শ্বশুরের সঙ্গে মৃত কন্যাকে নিয়ে মেট্রোতে চেপে বসেন। দিল্লিতে তুঘলাকাবাদে যেখানে তাঁর বাবা-মা থাকেন সেখানে যান। আরেকজন চিকিৎসক দেখান। ওই চিকিৎসকও শিশুটি মৃত বলে জানান। এরপর তিনি মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে গুরুগ্রামে ফিরে যান। সেখানে পুলিশ স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর স্বামী।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, পুলিশের বক্তব্য অনুসারে গত মঙ্গলবার পত্রিকাটিতে যে খবর প্রকাশ হয়, বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও ভয়াবহ ছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, ওই তরুণীর ওপর হামলাকারীরা শিশুটিকে চলন্ত অটো থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছিল। তবে ওই তরুণীর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠান্ডা মাথায় নিষ্ঠুরভাবে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটি কাঁদছিল এটাই ধর্ষকদের কাছে বিরক্তিকর ছিল। তারা অটো থামিয়ে একটি নির্জন স্থানে ওই তরুণীকে জোরপূর্বক নামিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় একেকবার একেকজন ক্রন্দনরত শিশুটির মুখ চেপে ধরে থাকে। ধর্ষণ শেষে চলে যাওয়ার সময় এক ধর্ষক শিশুটিকে সড়ক বিভাজকের ওপর ছুড়ে মারে।
ওই তরুণী বলেন, ‘আমি অসাড় হয়ে যাচ্ছিলাম। এরপরও আমার মনে আছে, আমার সন্তানের মাথা সড়ক বিভাজকে গিয়ে লাগে।’
ধর্ষণের শিকার তরুণী এরপর তাঁর সন্তানকে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে কাছাকাছি এক ফ্যাক্টরিতে পৌঁছান। সেখানে নিরাপত্তা প্রহরী তাঁকে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন এবং শ্বশুরবাড়িতে যেতে অটো ঠিক করে দেন।
এত ভয়াবহতার পরও ধর্ষণের শিকার মায়ের পুরো মনোযোগ ছিল তাঁর সন্তানকে নিয়ে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি শ্বশুরবাড়িতেও তাঁর ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানাননি। শুধু সন্তানের কথা ভেবেছেন। তাঁর কাছে কোনো মুঠোফোনও ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর তাঁর স্বামী সেখান থেকে ঘটনা জানতে পারেন।
ওই তরুণীর স্বামী বলেন, ‘আমার পরিবারটি পুরো শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার মেয়ের জন্য শোক করছিলাম। ওই সময় আমার স্ত্রী গণধর্ষণের কথা জানান। আমি দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করছি।’
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪