'লায়লা' অন্ধ্র উপকুল অতিক্রম করেছে... তবে রেশ রয়ে গেছে তখনও। ৩ নম্বর সিগনাল মাথায় নিয়েই বন্ধুরা মিলে বেড়াতে গেছিলাম চট্টগ্রাম বহিঃনোঙর। আমাদের এক বড় ভাই, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, আছেন লাইবেরিয়ার একটি জাহাজের চীফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। জাহাজটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বহিঃনোঙরে অবস্থান করছে। জাহাজে থাকা-খাওয়া.... আর আড্ডার প্রর্যাপ্ত রসদ মজুদ, সুতরাং এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা... রওনা হয়ে গেলাম চিটাগাং-এর উদ্দেশ্যে....
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৫ নম্বর ঘাট থেকে এই স্পীডবোট আর লাইফবোট-গুলি করেই যেতে হবে বহিঃনোঙরে। আমাদের গন্তব্য সমূদ্র তীর হতে ৬ নটিকেল মাইল বা প্রায় ১১ কিলোমিটার সমূদ্র অভ্যন্তরে।
বহিঃনোঙর অভিমুখে আমাদের যাত্রা হলো শুরু।
কর্ণফুলীর মোহনায় নোঙর করা লাইটারেজের সারি।
ঐ যে... দূরে আমাদের গন্তব্য.... সুলু উইন্ড,অয়েল ট্যাঙ্কার! সুলু উইন্ড মানে.... মৃদূ বায়ু প্রবাহ!
ঢেউ-এর দোলায় দোল খেতে খেতে আমরা জাহাজের আরও কাছাকাছি
এইতো আমরা পৌঁছে গেছি....
অবশেষে পৌঁছেই গেলাম আমরা সুলু উইন্ড-এ।
কিন্তু এরপরই আমরা সম্মুখীন হলাম আসল পরীক্ষার। জাহাজে উঠতে হলে লতা সিঁড়ি (রোপ ল্যাডার) বেয়ে উঠতে হবে প্রায় ৪০ ফুট। নীচে ঢেউ-এর দোলায় লাইফবোট দুলছে প্রচন্ডভাবে। জাহাজের গায়ে ঢেউ-এর ধাক্কায় লাইফবোট একবার লাফ দিয়ে উঠছে ৬ ফুট উপরে... আবার নেমে যাচ্ছে ৬ ফুট! লাইফবোট থেকে লতা সিঁড়ি-তে নিজেকে স্থানান্তর করাটাই বিশাল রিস্ক। আর নীচে পরে গেলে ভাটার টানে নির্ঘাত সমূদ্রের আরও গভীরে।
আল্লাহর নাম নিয়ে একে একে ঝুলে পড়লাম লতা সিঁড়িতে... রক্ষার মালিক আল্লাহ!
অবশেষে আমরা জাহাজের উপরে।
সুলু উইন্ডের মাষ্টার ব্রীজ থেকে মেইন ডেকের একাংশ।
জাহাজের ফরোয়ার্ড ডেক।
স্পেয়ার এ্যঙ্কর।
মেঘলা আকাশে সানসেট-এর ছবি তোলার চেষ্টা।
সানসেট-এর লালীমা।
ফরোয়ার্ড ডেকে সান্ধ্যকালীন খোশগপ্প।
কেবিনে জমপেশ আড্ডা।
পরদিন ফেরার পালা। রাতেই দেখলাম আকাশে কোন তারা নেই... আর বাতাসের বেগ আরও জোড়ালো হয়েছে। এই আবহাওয়ায় আমাদের থাকা ঠিক হবেনা ভেবে পরদিন ফিরে আসবো সিদ্ধান্ত নিলাম। ভোরে সাগর কিছুটা শান্ত থাকে বলে ঠিক হলো ভোর আটটায় রওনা হবো। কিন্তু বিধি বাম.... ভোর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি..আর জাহাজের রোলিং! আমরা ধরেই নিলাম....এখানেই আটকা পড়ে গেছি আমরা! কিন্তু দুপুরের দিকে আবহাওয়া একটু ভাল হলো। জাহাজের ক্যাপ্টেন পরামর্শ দিলেন আবহাওয়া আবারও খারাপ হবার আগেই ডাঙায় ফেরা ভাল। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়েই ডাঙায় ফিরবো ঠিক করলাম।
জাহাজ থেকে নামার সময় আবারও সেই বিভিষিকাময় লতা সিঁড়ি। নীচে উত্তাল ঢেউয়ে বাদামের খোসার মত দুলছে লাইফবোট। এবার বাড়তি সাবধানতা হিসেবে কোমরে সেফটি বেল্ট।
পিছে ফেলে আসছি সুলু উইন্ড!
বাই.... সুলু উইন্ড!
ফেরার দিন সাগর এত উত্তাল ছিল যে.... লাইফবোটে অতিরিক্ত দুলুনীতে অবধারিত সী-সিকনেস!
অতঃপর...... ডাঙায় ফিরে স্বস্তি!
ভিডিও লিংকস....
১. জাহাজের সাথে লাইফবোট বাঁধার চেষ্টা
২. রিস্কি লতা সিঁড়ি ক্লাইম্বিই।
অফ টপিকঃ গত বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়াতে গিয়ে দেখে এসেছি ভরা বর্ষায় ভাটির দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! এবার বর্ষায় এমন এক জায়গায় বেড়াতে যাবার ইচ্ছে আছে..... যেখানে থাকবে থোকা থোকা কদম ফুল, ঝিলের পানিতে যতদূর চোখ যায় শুধু শাপলা আর শাপলা... আর রাতে বৃষ্টির গান উপভোগ করার জন্য টিনের চালের একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাঁই। এমন কোন জায়গার সন্ধান থাকলে একটু জানাবেন প্লিজ... কৃতার্থ হবো।