somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০২)

২০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে পড়ে নিন ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০১)

আগের পর্বে হাদীসের রেফারেন্স দিয়েছিলাম নারী নেতৃত্ব নিয়ে ইসলাম কি বলে তা সরাসরি উপস্থাপন করতে। এই পর্বে কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন বোধ করছি। আগেও বলেছি গঠনমূলক আলোচনাকে ইসলাম সর্বদা উৎসাহ দেয়। আলোচনার প্রসঙ্গে এসে কয়েকটি ভিন্নঘটনা/ব্যাপার উত্থাপন করবো যা আমাদের অনেকাংশে আলোচনায় সাহায্য করবে।

হুদায়বিয়ার সন্ধি দিয়েই শুরু করছি।

৬ষ্ঠ হিজরিতে রাসূল(সাঃ) ৭০০ জন উমরাসঙ্গী আর ৭০টি উট নিয়ে যুল্‌কাদাহ মাসে উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন।এরপর টানা কয়েকদিনে কুরাইশদের আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং কোনভাবেই রাসূল(সাঃ) এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের মক্কায় প্রবেশ না করতে দেয়ার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্‌র নির্দেশে রাসূল(সাঃ) কুরাইশদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হোন।
কুরাইশদের প্রতিনিধি ছিল সুহাইল ইবনে আমর। তাকে এমন নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল যে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে আপোষ করতে এবং এই আপোষের একমাত্র লক্ষ্য হবে তিনি যে অবশ্যই এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করতে পারেন এবং আরবরাও যাতে বলতে না পারে যে মুহাম্মদ (সাঃ) কুরাইশদের উপর বলপ্রয়োগে মক্কায় প্রবেশ করেছেন।

সন্ধি চুক্তির সিদ্ধান্ত পাকাপাকি হয়ে লিখিত রূপ নিতে বাকী, এই সময়ে উমর(রাঃ) আবু বকর(রাঃ) এর নিকটে ছুটে গিয়ে বললেন, “হে আবু বকর, তিনি কি আল্লাহ্‌র রাসূল নন?” আবু বকর(রাঃ) বললেন,“অবশ্যই”। “আমরা কি মুসলমান নই?” “অবশ্যই”। “কুরাইশরা কি মুশ্‌রিক নয়?” “হ্যাঁ”। উমর এবার বললেন, “তাহলে কিসের জন্য আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে এভাবে নতিস্বীকার করতে যাচ্ছি?” জবাবে আবুবকর(রাঃ) বললেন, “উমার, তাঁর আনুগত্য কর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহ্‌র রাসূল।” উমর(রাঃ) বললেন, “আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তিনি আল্লাহ্‌র রাসূল।”

তারপর তিনি রাসূল(সাঃ) এর কাছে এসে বললেন,“হে আল্লাহ্‌র রাসূল, আপনি কি আল্লাহ্‌র রাসূল নন?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। “আমরা কি মুসলমান নই?”। “হ্যাঁ”।
“ওরা কি মুশ্‌রিক নয়?”। “হ্যাঁ”। উমর(রাঃ) আবারো বললেন যে, “ তাহলে কি কারণে আমরা আমাদের দ্বীনের প্রশ্নে এই অবমাননা বরদাশ্‌ত করতে যাচ্ছি?” রাসূল(সাঃ) বললেন, “আমি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং রাসূল। তাঁর নির্দেশে আমি কখনো লঙ্ঘন করবো না। আর তিনি আমাকে কখনো বিপথগামী করবেন না।”


পরবর্তী কালে উমর(রাঃ) তাঁর এহেন প্রশ্নের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন।সেটা বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করলাম নাহ।

কুরাইশদের প্রতিনিধি সুহাইল ইবনে আমর আর এই সন্ধি পত্রের লেখক ছিলেন হযরত আলী(রাঃ), রাসূল(সাঃ) আলী(রাঃ)কে বললেন “লেখো,বিস্‌মিল্লাহির রাহমানির রাহিম।” সুহাইল বলল, “এটা আমার অজানা কথা। তুমি বরং লেখ, “বিস্‌মিকা আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ্‌, তোমার নামে)।” রাসূল(সাঃ) এর নির্দেশে আলী(রাঃ) তাই ই লিখলেন।

অতঃপর রাসূল(সাঃ) বললেন, “লিখ, আল্লাহ্‌র রাসূল(সাঃ) সুহাইল ইবনে আমরের সাথে নিম্নলিখিত মর্মে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছেন।” একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সুহাইল ইবনে আমর বলে উঠলো, “আমি যদি তোমাকে আল্লাহ্‌র রাসূল বলে মানতাম তাহলে তো তোমার সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতাম না। শুধু তোমার নাম ও পিতার নাম লিখ।” ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ পর্যায়ে আলী(রাঃ) প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং এহেন কিছু লিখতে অস্বীকৃতি লিখেন। তখন রাসূল(সাঃ) এর নির্দেশক্রমে তিনি আবার লিখতে বসেন। রাসূল(সাঃ) বলেন, “বেশ, তাই লেখ। আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ নিম্নলিখিত মর্মে আমরের পুত্র সুহাইলের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন.............................................”

এই চুক্তি সাহাবায়ে কেরামগণের কাছে তাতক্ষণিকভাবেই চরম অপমানজনক মনে হয়েছিল এবং আপাদত দৃষ্টিতে ইসলামের জন্য ও চরম অপমানজনক বলেই মনে হয়। অথচ এই চুক্তিকে ঐতিহাসিকবৃন্দ দেখছেন “ইসলামের সবচেয়ে বড় বিজয়” হিসেবে।

যুহরী বলেন যে, “পূর্বে ইসলামের যতগুলো বিজয় অর্জিত হয়েছে তার মধ্যে এটিই (হুদায়বিয়ার সন্ধি) ছিল সবচেয়ে বড় বিজয়।”

যুহরীর এ উক্তির পক্ষে প্রমাণ এই যে, রাসূল(সাঃ) হুদায়বিয়ায় গিয়েছিলেন ১৪০০ মুসলমানকে নিয়ে। এর মাত্র ২ বছর পরে তিনি যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তাঁর সাথে ছিল ১০,০০০ মুসলমান। সুবহানাল্লাহ।

চুক্তি সম্পাদন শেষে রাসূল(সাঃ) যখন মদীনা অভিমুখে রওনা হলেন, তখন সূরা আল ফাতহ নাজিল হলোঃ
“হে নবী, আমি তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিজয়ের উদ্বোধন করেছি যেন আল্লাহ্‌ তোমার আগের ও পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন, তোমার উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন এবং তোমাকে নির্ভুল পথে পরিচালিত করেন।”

আল্লাহ্‌ আরও বলেন যে, “আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূলের স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি শীগ্রই নিরাপদে ও নির্ভয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে নিরাপদে মাথার চুল মুন্ডিয়ে ও ছেটে নির্ভীকচিত্তে প্রবেশ করবে। সে (আল্লাহ্‌র রাসূল) সেই জিনিস অবগত হয়েছে যা তোমরা অবগত হওনি। ঐ ঘটনার (হুদায়বিয়া সন্ধি) পরেই নির্ধারিত রেখেছেন আসন্ন বিজয়।”

..........................................

আশা করেছিলাম ২য় পর্বেই পরে ভেবেছিলাম ৩য় পর্বেই পুরো আলোচনা শেষ করবো কিন্তু কলেবর বৃদ্ধির কারণে সম্ভব হচ্ছেনা।
৪র্থ পর্বে ইন শা আল্লাহ্‌ ইতি টানবোই।

বাকি পর্ব গুলোঃ

ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০১)


ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০৩)

ইসলামে নারী নেতৃত্ব (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে তো পানি দিতনা মারার আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে।

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪


আগে তো পানি দিতনা শেষ নিস্বাশের আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে। আর শামীম মোল্লা ভাইয়ের কপালে অবশ্য অত্যাচার ছাড়া কিছু জোটে নাই। “ভাই আমারে আর মাইরেন না বলে অনুনয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে থাকতে দেয়ায়, আপনি ভারতের উপর কতটুকু রেগেছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৩



"শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে ঘোরাফিরা করেছে; আশা করছে, যদি কোন বিএসএফ ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত প্রবেশ করার ব্যবস্হা করে;" ইহা ছিলো ১ জন "নতুন মুক্তিযোদ্ধা"... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ এবং ২০২৪ এর হানাদার ও রাজাকারকে সমর্থন করা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০০



১৯৭১ সালের হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ তাদের দেশে নিয়েগেছে। ২০২৪ এর হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ বিভিন্ন দেশে নিয়েগেছে। কারণ আমাদের দেশই এদের দেশ। ১৯৭১ সালের হানাদার ছিলো ভিনদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা আর আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া বিবেক

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬


একটা গল্প প্রচলিত আছে এমন: রমজান মাসে বাংলাদেশে বেড়াতে এলেন উত্তর কোরিয়ার এক নাগরিক। কোনো এক রোজাদারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা সারাদিন না খেয়ে থাকেন কেন?
উত্তরে রোজাদার বললেন, আমরা স্র্রষ্টার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ বর্বরতার দায় কি শুধু ছাত্রলীগের

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৪

ঘটনার সাথে দুজন ছাত্রলীগ নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
কিন্তু এতে সকল পক্ষের দায় মোচন হয়ে যায় না। এরা যদি ছাত্রলীগ নেতাই হয় তবে তারা বিচারের আগে হলে পুনর্বাসিত হলো কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×