সাম্প্রতিক সময়ে, অতীতে ইসলাম নারী নেতৃত্বকে আদৌ বৈধতা দেয় কিনা কিংবা দিলে কতটুকু দেয় কিংবা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নারী নেতৃত্ব এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অনেক আলোচনা উঠেছে। তার-ই প্রেক্ষিতে এই লেখাটি লিখতে বসা। লেখাটির কোথাও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজস্ব কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছিনা এবং কাউকে পরামর্শ দেবার ঔদ্ধত্ব্য ও দেখাচ্ছিনা। শুধু আলোচনা করতেই এই প্রয়াস। ইসলাম সর্বদা আলোচনাকে উৎসাহ প্রদান করে।
ভণিতা না করে সরাসরি নারী নেতৃত্ব নিয়ে ইসলাম কি বলে সেদিকে যাইঃ
ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম কিংবা নিষিদ্ধ কিনা এ ব্যাপারে সরাসরি কোন হাদীস এখনও খুঁজে পাইনি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বলেন যে এরকম হাদীস রয়েছে, বুখারী শরীফে অন্তত এরকম হাদীস খুঁজে পাইনি। (যদি কেউ পেয়ে থাকেন অবশ্যই জানাবেন দয়া করে)
বরং নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করে রাসূল(সাঃ) বলেছেন-
“যখন তোমাদের শাসক হবে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুষ্ট ও শয়তান প্রকৃতির, তোমাদের ধনীরা যখন হবে তোমাদের মধ্যে বেশি কৃপণ আর তোমাদের (জাতীয়) কাজ-কর্মের দায়িত্ব যখন ন্যস্ত হবে তোমাদের স্ত্রী লোকদের হাতে তখন মৃত্যু হবে জীবন অপেক্ষা উত্তম।” ..................... (তিরমিযী)
রাসূল (সাঃ) যখন জানতে পারলেন যে ইরান (তৎকালীন পারস্য) এর রাষ্ট্রপ্রধানের কন্যাকে পারস্যবাসী নিজেদের বাদশাহ বানিয়েছে তখন এ খবর শুনে রাসূল (সাঃ) এরশাদ করলেন-
“যে জাতি নিজেদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারের দায়িত্বসমূহ কোন নারীর ওপর সোপর্দ করে সে জাতি কখনোই প্রকৃত কল্যাণ এবং সার্থকতা লাভ করতে পারে না।” .................................(বুখারী,তিরমিযী,নাসাঈ)
দেশ শাসন এবং রাজনীতিতে যারা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান তারা প্রায়ই উটের যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নেতৃত্ব দেয়ার ঘটনাকে প্রমাণ হিসেবে জাহির করেন; কিন্তু ইসলামী ইতিহাস সম্পর্কে তাদের হয় আংশিক জ্ঞান নতুবা চরম অবজ্ঞা কাজ করে। তারা জানেন না যে উটের যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) কে উটের পিঠে এ ঘাঁটি থেকে ও ঘাঁটি দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেছিলেন, “ আয়েশার জন্য তাঁর ঘর তাঁর উটের পিঠের আসন অপেক্ষা উত্তম; একথাটি স্মরণ রাখা উচিৎ।”
উটের যুদ্ধের সমাপ্তির পর হযরত আলী (রাঃ) হযরত আয়েশা(রাঃ) এর সাথে সাক্ষাতে বলেছিলেন,
“হে উটের পিঠে আরোহিণী, আল্লাহ্ পাক আপনাকে ঘরে থাকার নির্দেশ করেছিলেন কিন্তু আপনি যুদ্ধ করার জন্য বের হয়েছেন।”
আয়েশা(রাঃ) এর প্রত্যুত্তর দিতে পারেন নি।বরং আয়েশা (রাঃ) এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করেছিলেন,
“তুমি যদি তখন আমাকে নিষেধ করতে তাহলে নিশ্চয়ই আমি ঘর থেকে বের হতাম না।”
সুতরাং আয়েশা(রাঃ) এর ব্যক্তিগত এ কাজটি শরীয়তের দলিল মনে করে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো কতটুকু যৌক্তিক তা এখন বিবেচনার বিষয়।
তাহলে কি “ইসলামে নারী নেতৃত্ব এর স্থান নেই” দাঁড়াচ্ছে...?
এখানে একটা কিন্তু রেখে আজকের পর্ব শেষ করছি...
কিন্তুর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি পরবর্তী পর্বে...
এখানে দ্বিতীয় পর্ব ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০২)
এখানে ৩য় পর্বঃ
ইসলামে নারী নেতৃত্ব (পর্ব-০৩)
এখানে শেষ পর্বঃ
ইসলামে নারী নেতৃত্ব (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০২