আমরা যখন ঢাকা থেকে রওয়ানা দিলাম তখন বাজে রাত্র ৯.৪৫ মিনিট। আমরা যে বাসে উঠেছিলাম দূরপাল্লার বাস গুলোর মত অতটা সুবিধার ছিলনা। যাই হোক গাড়িত চলছেই। ওইদিন ছিল বৃহঃপতিবার সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেমন জ্যামে পরতে পারি। কাচপুর পার হতেই আমাদের অনেক সময় লেগে গেল। আরেকটু বাদে শুরু হল বৃষ্টি, একেত আমরা দেরি করে বাস পেয়েছি তার উপর বৃষ্টি। আমার বন্ধুটা তখন বলছে আজকে হয়ত আমাদের কুমিল্লা শহরেই থাকতে হবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমার বন্ধুটির বাড়ি বরুড়া, যেটা কুমিল্লা মুল শহর থেকে বেশ কিছু ভিতরে। আমরা কুমিল্লা যখন পৌঁছালাম তখন বাজে রাত্র ১২.৩০। এত রাতে বরুড়ার কোন বাস থাকেনা। কিন্তু চট্রগ্রাম থেকে একটা বাস আসে নাকি গভীর রাতে সেটা আজকে এখনো আসেনি স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য। সুতরাং আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কখন বাস আসবে।
বাসটা যখন এল তখান বাজে ১ টা। বন্ধুর বাসায় পৌঁছালাম ১.৩০ মিনিটের দিকে। বাসায়। আঙ্কেল আন্টি ছাড়া আর কেউ থাকে না। এখানে একটু বলে রাখা ভাল যে মানুষটিকে দেখলাম তাকে দেখে আমার নিজ থেকে শ্রদ্ধা চলে আসল। একজন আদর্শ স্কুল মাষ্টার। আরো জানতে পারি আঙ্কেল এর সুনাম একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক নামে সবাই ওনাকে শ্রদ্ধা করেন।
আমরা আসব বলে তখও ওনারা রাত জেগে বসে আছেন আমাদের জন্য। রাতে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়এ পড়লাম। ঘুমও হল অনেক ভাল। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করে নিলাম। তারপর নাস্তা সেরে বের হলাম চাদপুরের উদ্দেশ্য। চাঁদপুর পৌছাইলাম সন্ধ্যা ৬টার দিকে তখন প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছে।
ছবিঃ আশিস
[পরের দিন সকালে তোলা। ছবি দেখেই হয়ত অনেকেই বুঝতে পারছেন এই মোড়টার নাম কি। এই মোড়ের নাম ইলিশের মোড়। মুলত চাঁদপুর শহর এখান থেকেই শুরু। চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এখানেই]
আমরা প্রথমে গেলাম বড় স্টেশন। অনেকেই হয়ত নামটা সুনেছেন এবং গিয়েছেন অনেক বার। ঢাকা-বরিশাল-ভোলা…এই সমস্ত যায়গায় যারা লঞ্চে ভ্রমন করেন তারা ভাল জানবেন।
ছবিঃ নীল_পদ
[ছবি দেখেই বোঝার কথা, এটাই হল বড় স্টেশন, রাতের অন্ধকারে ছবিটা অন্য রকম ভাবে ফুঁটে উঠেছে।]
ছবিঃ আশিস
[একটা সময় ইলিশঘাট নামে পরিচিত ছিল। ইলিশের জন্যই অনেক নামকরা ছিল জায়গাটা। কিন্তু আজ আর সেই ঐতিহ্য আর নেই]
ছবিঃ আশিস
আমার মনে আছে আমি অনেক আগে একবার চট্রগ্রাম থেকে বরিশাল গিয়েছিলাম নদী পথে সীট্রাকে করে। অনেক সুন্দর একটা জায়গা।
ছবিঃ নীল_পদ
ছবিঃ নীল_পদ
ভাল না লাগার কোন কারন নেই। রাতের বেলাই পুরা শহর আমরা ঘুরে বেড়ালাম। অনেক সুন্দর একটা শহর চাঁদপুর। খুব ছোট কিন্তু অনেক দিনের পুরানো একটা শহর। আমি প্রথমেই খুব অবাক হয়েছিলাম চাদপুরের ওই পুরাতন বাড়ি গুলা দেখে। আমার ধারনা ছিলনা যে চাঁদপুর এতটা পুরাতন একটা শহর। সেটা আরো বুঝা যাবে যদি আপনি চাদপুরের স্কুল ও কলেগ গুলার দিকে দেখেন। অনেক পুরাতন পুরাতন সব স্কুল আর কলেজ। সব গুলোর নাম আমার মনে নাই কিন্তু সব প্রতিষ্টান অনেক পুরানোদিনের। আমার যতটা মনে আছে, ১৮৮৫, ১৯১৭, ১৯৪৬ এবং আরো আগের। একটা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্টান এত পুরানো হলে কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে সেই শহর অনেকটা আধুনিক।
আমার বেশ ভাল লেগেছে শহরটা। আর এখানে আছে দেখার মত খুব সুন্দর যায়গা। এখানে বেশ কিছুদিন আগে একটা ব্রিজ করা হয়েছে এতটা সুন্দর যে কেউ সেখানে না গেলে বুঝতে পারবেন না। তবে হা কেউ যদি যেতে চান তাহলে চাঁদনি রাতে জেতে পারেন আপনার অনেক ভাল লাগবে ওই ব্রীজের উপর দাড়িয়ে নিষ্পাপ ও চাঁদটাকে দেখলে। মুহুর্তের মধ্যে আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। অবশ্য যারা রোমান্স ভালবাসেন তাদের জন্য এটা একটা অসাধারন একটা স্থান। সবচাইতে মজার বিষয় হল এই জায়গাটা অনেক নিরিবিলি। শহরে থেকেও শহরের যে যান্ত্রিক কোলাহল তার বিন্দু মাত্র ছোয়া নেই এখানে। এক কথায় অসাধারন…
ওহ! আরেকটা মজার কথা বলি। আমরা ব্রীজের উপরে দাড়িয়ে গল্প করছি। চাঁদনি রাত, হঠাত আমার বন্ধু বলল যে এখন দেখিস খুব মজার একটা জিনিস দেখাবো তোকে। আমিও অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছি, একটু বাদে দেখলাম একটা লঞ্চ অনেক দূর থেকে আলো জালিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। কিন্তু আসল মজাটা পেলাম যখন আমাদের নিচে দিয়ে লঞ্চটা চলে যাচ্ছিল। কি মন্মুগ্ধকর সেই দৃশ্য নিজ চক্ষে বা দেখলে হয়ত বুঝবেন না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে আমার হাতে সেই সময় ক্যামেরাটা ছিলনা। আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছিল। আমার মেমোরিতে এই স্মৃতি কখনোই ভুলার নয়।
আজ এই পর্যন্ত আরেক দিন আমি লিখব ময়নামতি আর কুমিল্লার বার্ডকে নিয়ে।
[বি দ্রঃ আসলে আমি লেখক নই, আগে একটা সময় ডায়েরি লিখতাম। এখন সেই লেখা লেখির কাজটা ব্লগে করি শখের বশে। কারোও পড়তে কষ্ট হলে আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
ছবিঃ আশিস
[আমার বন্ধুটি চাঁদপুরের এই বিড়ালটিকে সাথে আনতে পারেনি কিন্তু তার ছবিটা সাথে করে নিয়ে এসেছে, এটা নাকি তার খুব পচ্ছন্দ হয়েছে]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৫৯