somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি নিসঙ্গ দুপুরের আলাপন

২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৫ শে জুন, বৃহঃস্পতিবার, সময় দুপুর ২.৩০ মিনিট, এই সময়টাতে কেন জানি নিজেকে খুব অস্থির মনে হল। আমি পরীক্ষা হলে পরির্দশক হিসাবে কর্তব্যরত। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রয়োজনীয় টুকটাক কাজ সেরে বসে আছি। প্রখর রোদ্রের রক্তিম আঁভা জানালা ভেদ করে আমার চোখের চশমার উপর সাত রঙের একটা অর্ধবৃত্তাকার রংধনু তৈরী করল। সেই রংধনুর মায়াজালে আমার পরীক্ষা কক্ষটাকে মনে হ্ল মায়াবী এক কল্পনগরী। পাঠকদের বলে রাখা ভাল যে শর্ট র্টাম পরীক্ষা হওয়ার কারনে মাত্র ৫ জন পরীক্ষার্থী আছে। কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী হওয়ার কারনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মিনিট দশেক পরে কাজ শেষ হল। চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি কি করা যায়। হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা লেখা যাক, যেই ভাবা সেই কাজ। একটা পেপার (পরীক্ষা কক্ষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কাগজ) আর একটা কলম নিয়ে লিখতে বসলাম। মজার ব্যপার হ্ল যে কলম আর কাগজ নিয়ে আমি খসড়া তৈরী করছি তার কোনটাই আমার না। সব ধার করা। যাইহোক আজাইরা প্যচাল বাদ দিয়ে কিছু লেখা যাই কিনা দেখা যাক! আমি আগেই বলেছি যে পরীক্ষা কক্ষটা হল মায়াবী এক কল্পনগরী, আমি হারয়ে গেলাম সেই কল্পনায়। মনে পড়ল এইতো কয়েকদিন আগেওতো আমি এই পরীক্ষাকক্ষে আসতাম, কিন্তু সেই সময়ের পরীক্ষাকক্ষে আসার সাথে এখন কার আসার কত তফাৎ। আগে যেখানে একটা পেনছিল বক্স নিয়ে হাজির হতাম, আর এখন আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে পরিদর্শক রুপে আমার কর্তব্য পালন করছি। এই সময়টা কতো মুল্যবান, সামান্য একটু উলটা পালটা হয়ে গেলে অপুরনীয় অনেক ক্ষতি হবে। হবে নৈতিকতার অবক্ষয়। আমি জানি না নিজে কতটুকু জানি, কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে আমি সবসময় আমি আমার দায়িত্য পালন করার চেষ্টা করেছি। এমন কোন কাজ করি না যাতে আমার ছাত্র ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যথা সময়ের আগেই আমি সমস্ত কাজ শেষ করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। মূল কথায় আসা যাক, আজ আমার খুব মনে পড়ছে, আমার ছাত্র থাকা অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার দিন গুলির কথা। আমি বরাবরই পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত থাকতাম, আমার পরীক্ষা হলে যাওয়ার আগে মনে হত আমি পরীক্ষায় কিছু লিখতে পারব না। আমি পরীক্ষা হলে একবার যদি খাতায় কলম দিয়েছি তারপর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিখতেই থাকতাম। মাঝে মাঝে আমি নিজেও অবাক হয়ে যেতাম। নিরব পরিবেশ, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা খুব মনযোগের সাথে তাদের কর্তব্য পালন করছেন, আমি লিখেই চলেছি, একটানা শুধু কাগজের খস খস আর মাথার উপর ফ্যনের শোঁ শোঁ আঁওয়াজ। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষন পর শুরু হত অতিরিক্ত কাগজ নেওয়ার পালা। আমি এক একটা অতিরিক্ত কাগজ নিচ্ছি আর সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমার মনে হত আমার কোন কোন সহপাঠী ব্যপারটা খুব একটা ভালভাবে নিত না। কেন জানি আজ সেই দিন গুলোর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। সবাই কি আমার মত মনে করে নাকি আমি বোকার মত আবোল তাবোল ভাবছি। কেউ মনে না করলেও আজ আমার খুব বেশি মনে পড়ছে, হয়তবা আমি এই পরিবেশে থাকার কারনে আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারছি। ভাবতে ভাবতে আরও আনমনা হয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলাম আমার সহকর্মির ডাকে। আজ আমি সময়ের বিবর্তনে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে অনেক দূর এসেছি, অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, হয়েছে আমার অবস্থানও, কিন্তু পরিবর্তন হয়নি সেই চেনা শ্রেনীকক্ষ, টেবিল, চেয়ার, সেই ডায়াস আজও সেভাবেই আছে। হঠাৎ করে আমার মনে হলো, ওদের কেন জানি মন খারাপ। আমি ওদেরকে বললাম, “কিরে তোরা এমন মন খারাপ করে আছিস কেন? দেখ কত সুন্দর মায়াময় পরিবেশ! তোদেরত আজকে হাসবার কথা! আজকে না তদের আনন্দের দিন?” একটু নরম সুরে পাশ থেকে একজন বলল, “বন্ধু, আমারা আজও আমাদের জায়গায় আছি, আমরা ভাল আছি”। আমি বললাম, “তা তোরা কাঁদছিস কেন”? ওদের একজন আরেকটু গম্ভীর কন্ঠে বলল, “বন্ধু তোমায় খুব মিছ করছি”। আমি বললাম, “কেন? এই তো আমি আছি, তোরা কি আমাকে দেখছিস না?” “হাঁ!” ওরা বলল। “তাহলে?” আমি জিঙ্গেস করলাম। “তোমাকে আমরা নতুন রুপে দেখছি”, মন খারাপের সুরে ওরা বলল আমায়। আমি বললাম, “পাগল, আমিতো তোদের জন্যই এখানে এসেছি। তাহলে আবার কাঁদছিস কেন?” ওরা বলল, “আমরা তোমাকে নিয়ে কাটানো সেই চারটি বৎসরের কথা ভুলতে পারছি না।আজ তোমাকে দেখে আরও বেশি বেশি মনে পড়ে গেলো”। হঠাৎ পাশ থেকে একটা চেয়ার আর একটা টেবিল কেঁদে উঠল, বলল, “কতোদিন তুমি আমাদের সাথে বসে ক্লাস করোনা। আমরা তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। আমরা তোমাকে আবার আগের মত করে ফিরে পেতে চাই”। আমি নির্বাক হয়ে গেলাম ওদের কথা শুনে, ওরা আমায় এত ভালবাসে। আমি আজ এভাবে না আসলে হয়তবা বুঝতে পারতাম না। আমি মৃদুপায়ে হেঁটে হেঁটে ওদের কাছে গিয়ে বসলাম। খুব মনে পড়ছিল সেই দিনগুলির কথা, এখানে আমি কাটিয়েছি চার চারটি বৎসর। আমি আমার এই চেয়ার টেবিলটাতে বসার জন্য আমার সহপাঠীদের সাথে কত না মনমালিন্য হত। আমার আজও স্পষ্ট মনে পড়ছে একদিন আমি আমার এই প্রিয় চেয়ার টেবিলে বসতে না পেরে কত খারাপ লেগেছিল। এর পর থেকে আমি আর কখনও মিছ করতাম না। সবার আগে চলে আসতাম এখানে বসার জন্য। একটা সময় পর আমার জন্য এই আসনটিতে কেউ আর বসত না।এক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল আমার প্রিয় টেবিলটার উপর। আমি চুপ চাপ বসে আছি, কারও মুখে কোন কথা নেই। আছে শুধু টপ টপ করে অঝোরে ঝরতে থাকা চোখের জল। আমি আমার প্রিয় আসনটিকে একটা চুম্বন দিয়ে উঠে দাড়ালাম আর বললাম, “আমি তোমাদের ভুলিনাই আর কখন ভুলবও না, এখনও ভালবাসি তোমাদের আগের মত করে”। চলে আসার আগে শুধু বললাম, “সময় বড় নিষ্ঠুর। সে কারো জন্য থেমে থাকে না। সে এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে।আমিও চলেছি তার পেছন পেছন”। নিস্তব্ধ নিরব চারিদিক সব কিছু, শুধু মাথার উপরের ফ্যানটা তখনো শোঁ শোঁ করে চলতে থাকে। মনে পড়ে গেল মান্নাদের সেই প্রিয় গানটার কথা “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেল গুলো সেই, আজ আর নেই”। আমি মনে মনে “ক্লাস রুমের সেই পরীক্ষাগুলো আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী সেই পরীক্ষাগুলো হমম হমম ...” গাইতে গাইতে ওদের সবাইকে পেছনে ফেলে রেখে বেরিয়ে এলাম বাস্তবতার জগতে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×