অনেক দিন ধরে মনটা খুব একটা ভাল না, কেমন জানি নিজেকে পৃথিবীর মুল্যহীন একটা প্রানীর মত মনে হয়।আজ জুনের ২৩ তারিখ, রাত ১০.০৫ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চেয়ার নিয়ে ছাদে বসে ভাবছি, অনেক দিন কিছু লেখা হয় না। কিছু একটা লেখার বাসনা নিয়ে আমার আজকের এই লেখা। ছাদের কার্নিশে মাথা রেখে কিছুক্ষন এলোমেলো ভাবনা, কিছুক্ষন বোকার মত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। আকশে চাঁদ ছিল না, কিন্তু চাঁদনী রাতের মত আলো ছিল আমার চারপাশে। তাই অনেক্ষন ধরে ভাবতে থাকলাম এত আলো আসলো কোথা থেকে? ভাল করে আকাশ দেখলাম, না কোন চাঁদতো নাই, একটা তাঁরাও খুঁজে পেলাম না। আনমনে ভাবছি ... অনেক্ষন ধরে খুঁজে যখন কোনো চাঁদ বা তাঁরাকেও পেলাম না তখন হঠাৎ করে স্মৃতির আকাশ হাতরে পেলাম আমার আকাশের একটা দুঃখ তারা (আমি অবশ্য ধ্রুবতারা বলতেই ভালবাসি)। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমার মনের আকাশে ছোট একটা তারা ছিল, নাম দিয়েছিলাম ধ্রুবতারা। রাতের আকাশের তারা যেমন বেশিক্ষন থাকে না তেমনি আমার আকাশে ধ্রুবতারাও বেশিদিন আমার ধ্রুবতারা হিসাবে ছিল না। মাস তিনেক ধরে আমার আকশে সে প্রতিদিন আলো দিত। আজও আমি ভুলতে পারি না ক্ষনিকের জন্য জলে ওঠা আমার মনের আকাশের ধ্রুবতারার কথা। সেই সময়টা খুব ভাল ছিল না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবতাম আজকে ওর সামনে কিভাবে যাব, কেমন করে ওকে বুঝাব যে ও আমার মনের আকাশের ধ্রুবতারা, ভাবতাম ও কি আমার অব্যক্ত ভালবাসার কথা বুঝতে পারবে! অনেক আশা নিয়ে, বুকে অনেক সাহস নিয়ে আমি ওর সামনে যেতাম। কিন্তু কি অবাককান্ড! আমি যখন ওর সামনে হাজির হতাম তখন আমার মুখের কথা হারিয়ে যেত, লজ্জায় আমি মাথা তুলে ওর সামনে দাঁড়াতে পারতাম না। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, সে একটি বারের জন্যও বুঝল না যে তার মনের আকশে সুখতারা উদিয়মান। সন্ধায় যখন বাসায় ফিরতাম, মনে থাকত একটি দিনের কষ্ট। তারপর নির্ঘুম সারা রাত জেগে কত ভাবনা আমার মনে ঘুরপাক খেত। ভাবতাম পরের দিন তাকে কিভাবে বুঝানো যায়। এভাবে দিনরাত শুধু নতুন নতুন বীজ বোনা আর মুকুল হওয়ার আগেই অংকুরে বিনষ্ট হওয়া। এখন মনে হয় বীজ বপন করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু হয়ত পরিচর্যার অভাবে সেটা আর কুঁড়িতে পরিনত হচ্ছিল না। এভাবে দিন চলছিল। একদিন খবর পেলাম ধ্রুবতারা আমার আকাশ থেকে চলে যাচ্ছে অন্য আকাশে। আমি পাগলের মত ছুটে গেলাম আমার ধ্রুবতারার কাছে। সেদিন আর আমার কোন ভয় ছিল না, আমি বলে ফেললাম ওকে আমার সুখতারা হওয়ার কথা। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি নিচের দিকে তাকিয়েছিলাম। সে আমার চোখের এক ফোঁটা জল হাতে নিয়ে বলল আমি আমার সুখতারাকে তো পেলাম না কিন্তু আজ থেকে এই এক ফোঁটা জল দিয়ে আমি ভালবাসার সুমুদ্র বানিয়ে প্রতিদিন স্নান করব। এটাই হবে আমার প্রতিদিনের ভালবাসায় সিক্ত হাওয়া। আমি এতদিন এই একফোঁটা জলের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেটা পেয়েছিও বটে, কিন্তু সেটা সুখের না, দুঃখের জল। এই জল দিয়ে দুঃখের সুমুদ্র বানিয়ে স্নান করা যায় না কিন্তু ঝাঁপ দেয়া যায়। আমি জিঙাসা, আর কিছু বলবে না? সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, অনেক দেরি হয়ে গেছে যে! আমি তাকে হারিয়ে ফেললাম চিরদিনের জন্য আমার মনের আকাশ থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০০৯ রাত ১১:৫১