somewhere in... blog

আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাত্র ৭ বছর বয়স তার। যে বয়সে বাবার হাত ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা সে বয়সে শিশুটি গরুর গলার রশি ধরে নিয়ে যায় মাঠে। স্কুল থেকে যখন হৈ চৈ করতে করতে বাচ্চারা বাড়ী ফেরে অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শিশুটি। নৈশ বিদ্যালয়ে মাত্র ৮ দিন পড়েছে এতে যৎসামন্য অক্ষর জ্ঞান পেয়েছে শিশুটি। কুড়িয়ে পাওয়া ছেড়া কাগজ কিংবা বইয়ের ছেড়া পাতা পড়ার চেষ্টা করে গরু ছড়ানোর অবসরে। পিতামাতার একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। বাকী পাচঁ মেয়ে এবং স্ত্রী নাইয়রজান বিবিকে নিয়ে যখন অভাবের সংসারে কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত ইব্রাহিম আলী তখন এ ছোট্ট শিশুটি অন্যের বাড়ীতে রাখাল থেকে বাবার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। শিক্ষার প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল সে শেশবই। কিন্তু অভাবের সংসারে শিক্ষাতো বিলাসিতা। এ ছোট্ট শিশুটিই পরবর্তীতে তার শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গেয়ে উঠেন -

ভরণ-পোষণে তখন অক্ষম ছিলেন।
পিতা-মাতা আমাকে চাকরিতে দিলেন।।
শিক্ষা নয় চাকরি করি পেটে নাই ভাত।
কি করে বেচেঁ থাকা যায় ভাবি দিনরাত।।

দিন যায়, মাঠের গরুগুলো মোটাতাজা হয়ে বেড়ে উঠে। কালনীর কুলে বেড়ে উঠে আমাদের ছোট্টশিশুটি আবদুল করিম। শিশু থেকে কিশোরে পরিণত হন তিনি।আবারো নৈশ বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনার ইচ্ছে জাগে। ততদিনে বেজে উঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যারা লেখাপড়া জানে তাদের জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যাবে ব্রিটিশরা। এই গুজবের ভয়ে পড়া হয়না আবদুল করিমরে। ততদিনে একজন ওস্তাদও জুটে যায় তার। নিজগ্রাম উজানধলের করমউদ্দিন। ওস্তাদ তাকে অক্ষর জ্ঞান দিতেন আর দোতারা বাজিয়ে শুনাতেন ভক্তিমূলক গান, বাউল গান প্রভৃতি। জেগে উঠে আবদুল করিমের বাউলমন। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন ওস্তাদ করমউদ্দিনের কাছে। ওস্তাদ গান গাইতেন আর গানের তালে মাথা দুলিয়ে রপ্ত করতেন আবদুল করিম। গ্রামে রটে যায় এ খবর। মসজিদের ইমাম নিষেধ করেন গান গাইতে। আবদুল করিমের সরল স্বীকারোক্তি - সত্য বলি গান আমি ছাড়ব না।

আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া।
গান গাই আমার মনকে বুঝাই
মন থাকে পাগল পারা।।

গ্রামীন জীবনে ধর্মীয় ও সামাজিক আক্রমনের মুখোমুখি হন আবদুল করিম। ঈদের জামাতে তারঁ উপর আক্রমন হন। যুগে যুগে যেভাবে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হাতে নিগৃহিত হয়েছেন জ্ঞান সাধকেরা। আবদুল করিমই বা তার ব্যাতিক্রম হবে কেন? ঈদের জামাতে নামাজ পড়া হয় না আবদুল করিমের। অপরাধ ? গান গাওয়া। মনের খেদে গেয়ে উঠেন আবদুল করিম....

মনে ভাবি দয়াল যাহা করেন অআমারে।
আমার নৌকা ছেড়ে দিলাম অকূল পাথারে।।

তখন ভাটি বাংলায় বাউল মুর্শিদি, জারী সারি, ভাটিয়ালি গানের জোয়ার বইছে। বিভিন্ন আসরে গান গেয়ে, মুখে মুখে গান রচনা করে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আবদুল করিম। আবদুল করিম থেকে তিনি পরিণত হন শাহ আবদুল করিম-এ। কাগমারী সম্মেলনে যোগ দিয়ে আর্শীবাদ লাভ করেন মৌলানা ভাসানীর। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা করেন গান। বঙ্গবন্ধুরই উপস্থিতিতে তাকে নিয়ে তৈরী গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেন এ কন্ঠযোদ্ধা। ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদকসহ লাভ করেন বিভিন্ন পুরস্কার। সবচেয়ে বড় যে পুরস্কারটি লাভ করেন বাউল আবদুল করিম তাহলো জনমানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভাটির পুরুষ, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের আজ ৯৫ তম জম্মদিন। জম্মদিনে এ মহান সাধকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। বেচেঁ থাকলে এই মরমী কবি আজ আবারো কি গেয়ে উঠতেন সেই সাম্যের গান -

এই সব নিয়ে দ্বন্ধ কেন
কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান
তুমিও মানুষ আমিও মানুষ
সবাই এক মায়ের সন্তান।

করিম বলে কাঙাল বেশে
জম্ম নিয়েছি এই দেশে
মানুষকে ভালবেসে
হোক না জীবন অবসান।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সঙ্গ সুখ উধাও

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:১৯



এখন অনেক রাত
তুমি পূর্ণিমার চাঁদ দেখ হারিকেন জ্বালিয়ে
তাতে মাটি স্পষ্ট দেখা যায়
তোমার ভাবনা গুলো এলোমেলো না গোছানো বুঝার উপায় নাই।

একাকী নির্জন পরিবেশ
স্বামী প্রবাশে থাকলে এভাবেই জোছনা দেখতে হয়
হয়ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জেনারেশন - বিটা'দের জানাই খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১৫


আজ খ্রিষ্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন। গতকাল খুবই উৎসব মুখর পরিবেশে ২০২৪ সালের শেষ দিনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর কে স্বাগত জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ও রাজনৈতিক জীবনে ২০২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় ব্লগার মিররের সাথে সাক্ষাৎ

লিখেছেন স্প্যানকড, ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২০

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

যান্ত্রিক জীবন যখন হাঁপিয়ে উঠে একঘেয়েমির চুড়ান্ত পর্যায়ে, তখন আমরা জীবন থেকে পালাতে চাই।
ইচ্ছে করে সব ছেড়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসি।

মোটামুটি বেশ কিছু দেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৩১

প্রিয় সামহোয়্যারইন ব্লগার,

ইংরেজি নতুন বছরের জন্য আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনাদের সৃজনশীলতা, ভাবনা ও লেখাগুলো আমাদের কমিউনিটিকে প্রতিদিন সমৃদ্ধ করেছে এবং ব্লগকে আরও বর্ণময় করে তুলেছে। আমাদের প্রযুক্তিগত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যাপিত জীবনঃ অনলাইন কৃষক।

লিখেছেন জাদিদ, ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাখাত হওয়া সাংবাদিক ইলিয়াস সাহেব একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটিয়েছেন। অনলাইনেও যে গবাদী পশুর খামার বিশেষ করে ব্ল্যাক ব্যাঙ্গলের ফার্ম করা যায় এবং সেখান থেকে আয় করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×