একটু বিস্তারিত করেই বলি: গত ১৬ই এপ্রিল খুব সকালে জরুরী প্রয়োজনে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় গাজীপুরের বিরক্তিকর জ্যাম ঠেলে সাড়ে দশটা নাগাত ময়মনসিংহ পৌঁছাই। ঠিক ঐদিনই বিকালে ঢাকায় ফেরার জন্য রেলগাড়িকে বেছেনিলাম যানজটমুক্ত আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য। কিন্তু আরাম কি আর মামীর হাতের মোয়া! ময়মনসিংহ জংশনে গিয়ে যখন পৌঁছালাম তখনো বলাকা নামের রেলগাড়ীটা ষ্টেশনে আসেনি। খোঁজ নিলাম কাউন্টারে, ঢাকার জন্য কোন আসন পাওয়া যাবে কিনা। ভিতরে বসা ভদ্র?লোকগণ বললেন এই গাড়ীতে কোন সিট হবেনা, পরের গাড়ীতে হবে। ভাবলাম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি, পরবর্তী গাড়ী তিনটা তেত্রিশ মিনিটে। দুটোয় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম, আড়াইটা নাগাত যখন কাউন্টারের সামনে আসলাম তখন সেই ভদ্র?লোকগণ বলছেন কোন সিট নাই, দাঁড়িয়ে যেতে হবে।অনেক অনুরোধের পর ময়মনসিংহ থেকে কাঁওরাইদ (৪৫কি:মি: ) পর্যন্ত একটা সিটের টিকিট কিনলাম ত্রিশ টাকায়। অনেক অপেক্ষার পর চারটা পাঁচ মিনিটে গাড়ী এলো। সেকি অবস্থা!!! গাড়ীতে তো উঠার কোন সুযোগই নাই। মিস করলেতো সমস্যা তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে কোনরকমে দরজার মুখ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াতে পারলাম। কিছুক্ষণ পর এলেন টিকিট চেকার। অল্পবয়সী ভদ্রলোক টিকিট চাইতেই সবিনয়ে তাঁকে বললাম ‘ভাই, আমি তো ঢাকার কোন সিট পেলামনা, আমাকে কাঁওরাইদ পর্যন্ত সিট দিয়েছে, আপনি
আমাকে কাঁওরাইদ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আরেকটা টিকিট দিয়েদিন। তিনি বললেন আপাতত এটাই থাকুক, কাঁওরাইদ যাওয়ার পরে দেখব। যেহেতু আমার টিকিটে একখান সিটের নম্বর ছিল তাই টিকিট চেকার ভদ্রলোক অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে আমাকে আমার সিটের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্ত সিটের কাছে গিয়ে আরো হতাশ হলাম। এক ভদ্র মহিলা ছোট্ট একটা বাচ্চা নিয়ে বসে আছেন আমার সিটে। কি আর করা ত্যাগ করলাম সিটের মায়া। ততক্ষনে গাড়ী গফরগাঁও ষ্টেশন অতিক্রম করেছে। আর ভিড়ের পরিমানটাও বলে বুঝানোর মাত্রা অতিক্রম করেছে। হাত দুটো নিচে নামিয়ে দাঁড়ানোর অবস্থাও ছিলনা। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মতোকরে দুহাত মাথার উপরে তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। শরীরের সমস্ত জলীয় অংশ ঘাম হয়ে আমার জামাকাপড় কয়েকবার ভিজিয়ে দিয়েছে।কয়েকজনকে দেখলাম জামা খুলে খালিগায়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই এক মহিলা প্রচন্ড গরম সইতে নাপেরে মূর্ছা গেলেন, নাকমুখে পানি ছিটিয়ে তাঁর হুঁশ ফেরানো হলো। এভাবে গাড়ী যখন গাজীপুরের কাছাকাছি ঠিক তখন আসলেন অন্য আরেকজন টিকিট চেকার। এবারও যথারীতি টিকিট চাইতেই সবিনয়ে তাঁকে বললাম ‘ভাই আমার টিকিট সংক্রান্ত একটু জটিলতা আছে, আমাকে কাঁওরাইদ পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়েছিল, আমি এর আগের টিকিট চেকারকে বলেছিলাম নতুন একটা টিকিট তৈরি করেদিতে, তিনি বলেছিলেন এটা কাঁওরাইদ এর পরে করতে হবে। আপনি দয়াকরে আমাকে কাঁওরাইদ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একটা টিকিটের ব্যবস্থা করেদিন।’ এবার ভদ্রলোক আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে যা বললেন তাতে আমার এই ভ্রমণের পুরো গ্লানিটাই নিমিষে মুছে গেলো। তিনি বললেন “ভাই আপনি যে সত্যি কথাটা এত সহযে সুন্দর করে বলেছেন এতে আমার মনটা ভরেগেছে, যান ভাই আপনার আর টিকিট লাগবেনা।” আমি বললাম বিমানবন্দর ষ্টেশনে টিকিট চাইলে কি বলব, তিনি বললেন এটাই দেখাবেন, তাদের এত দেখার সময় নাই। ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম, টঙ্গী অতিক্রম করে বিমান বন্দর। ততক্ষণে মুখ গলা শুকিয়ে কাঠ। নেমে দেখি দুপায়ে অসাড়তা, সব মিলিয়ে মনেহচ্ছিলো এইমাত্র রিমান্ড রুম থেকে বেরিয়েছি।
আমার জীবনে অনেকবার রেলগাড়ীতে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে, কিন্তু এযাত্রার অভিজ্ঞতা মনেথাকবে আজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭