somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্য বলায় পরম সুখ

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু বিস্তারিত করেই বলি: গত ১৬ই এপ্রিল খুব সকালে জরুরী প্রয়োজনে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় গাজীপুরের বিরক্তিকর জ্যাম ঠেলে সাড়ে দশটা নাগাত ময়মনসিংহ পৌঁছাই। ঠিক ঐদিনই বিকালে ঢাকায় ফেরার জন্য রেলগাড়িকে বেছেনিলাম যানজটমুক্ত আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য। কিন্তু আরাম কি আর মামীর হাতের মোয়া! ময়মনসিংহ জংশনে গিয়ে যখন পৌঁছালাম তখনো বলাকা নামের রেলগাড়ীটা ষ্টেশনে আসেনি। খোঁজ নিলাম কাউন্টারে, ঢাকার জন্য কোন আসন পাওয়া যাবে কিনা। ভিতরে বসা ভদ্র?লোকগণ বললেন এই গাড়ীতে কোন সিট হবেনা, পরের গাড়ীতে হবে। ভাবলাম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি, পরবর্তী গাড়ী তিনটা তেত্রিশ মিনিটে। দুটোয় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম, আড়াইটা নাগাত যখন কাউন্টারের সামনে আসলাম তখন সেই ভদ্র?লোকগণ বলছেন কোন সিট নাই, দাঁড়িয়ে যেতে হবে।অনেক অনুরোধের পর ময়মনসিংহ থেকে কাঁওরাইদ (৪৫কি:মি: ) পর্যন্ত একটা সিটের টিকিট কিনলাম ত্রিশ টাকায়। অনেক অপেক্ষার পর চারটা পাঁচ মিনিটে গাড়ী এলো। সেকি অবস্থা!!! গাড়ীতে তো উঠার কোন সুযোগই নাই। মিস করলেতো সমস্যা তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে কোনরকমে দরজার মুখ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াতে পারলাম। কিছুক্ষণ পর এলেন টিকিট চেকার। অল্পবয়সী ভদ্রলোক টিকিট চাইতেই সবিনয়ে তাঁকে বললাম ‘ভাই, আমি তো ঢাকার কোন সিট পেলামনা, আমাকে কাঁওরাইদ পর্যন্ত সিট দিয়েছে, আপনি
আমাকে কাঁওরাইদ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আরেকটা টিকিট দিয়েদিন। তিনি বললেন আপাতত এটাই থাকুক, কাঁওরাইদ যাওয়ার পরে দেখব। যেহেতু আমার টিকিটে একখান সিটের নম্বর ছিল তাই টিকিট চেকার ভদ্রলোক অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে আমাকে আমার সিটের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্ত সিটের কাছে গিয়ে আরো হতাশ হলাম। এক ভদ্র মহিলা ছোট্ট একটা বাচ্চা নিয়ে বসে আছেন আমার সিটে। কি আর করা ত্যাগ করলাম সিটের মায়া। ততক্ষনে গাড়ী গফরগাঁও ষ্টেশন অতিক্রম করেছে। আর ভিড়ের পরিমানটাও বলে বুঝানোর মাত্রা অতিক্রম করেছে। হাত দুটো নিচে নামিয়ে দাঁড়ানোর অবস্থাও ছিলনা। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মতোকরে দুহাত মাথার উপরে তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। শরীরের সমস্ত জলীয় অংশ ঘাম হয়ে আমার জামাকাপড় কয়েকবার ভিজিয়ে দিয়েছে।কয়েকজনকে দেখলাম জামা খুলে খালিগায়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই এক মহিলা প্রচন্ড গরম সইতে নাপেরে মূর্ছা গেলেন, নাকমুখে পানি ছিটিয়ে তাঁর হুঁশ ফেরানো হলো। এভাবে গাড়ী যখন গাজীপুরের কাছাকাছি ঠিক তখন আসলেন অন্য আরেকজন টিকিট চেকার। এবারও যথারীতি টিকিট চাইতেই সবিনয়ে তাঁকে বললাম ‘ভাই আমার টিকিট সংক্রান্ত একটু জটিলতা আছে, আমাকে কাঁওরাইদ পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়েছিল, আমি এর আগের টিকিট চেকারকে বলেছিলাম নতুন একটা টিকিট তৈরি করেদিতে, তিনি বলেছিলেন এটা কাঁওরাইদ এর পরে করতে হবে। আপনি দয়াকরে আমাকে কাঁওরাইদ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একটা টিকিটের ব্যবস্থা করেদিন।’ এবার ভদ্রলোক আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে যা বললেন তাতে আমার এই ভ্রমণের পুরো গ্লানিটাই নিমিষে মুছে গেলো। তিনি বললেন “ভাই আপনি যে সত্যি কথাটা এত সহযে সুন্দর করে বলেছেন এতে আমার মনটা ভরেগেছে, যান ভাই আপনার আর টিকিট লাগবেনা।” আমি বললাম বিমানবন্দর ষ্টেশনে টিকিট চাইলে কি বলব, তিনি বললেন এটাই দেখাবেন, তাদের এত দেখার সময় নাই। ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম, টঙ্গী অতিক্রম করে বিমান বন্দর। ততক্ষণে মুখ গলা শুকিয়ে কাঠ। নেমে দেখি দুপায়ে অসাড়তা, সব মিলিয়ে মনেহচ্ছিলো এইমাত্র রিমান্ড রুম থেকে বেরিয়েছি।

আমার জীবনে অনেকবার রেলগাড়ীতে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে, কিন্তু এযাত্রার অভিজ্ঞতা মনেথাকবে আজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×