আমার প্রাথমিক স্কুল জীবনের কোন বন্ধুদের নাম বা অবয়ব আমি মনে করতে পারি না। কারণ প্রাথমিক স্কুল জীবনটা বেশ অস্থির ছিল আমার। যে কারণেই হোক অনেকগুলো স্কুল আমাকে পরিবর্তন করতে হয়েছে। হয়তবা কোনটার নামও বলতে পারবো না। প্রথম প্রাথমিক স্কুল ছিলো নানা বাড়ীর একটা স্কুল। আমার এক খালামনির সাথে জীবনের প্রথম স্কুলে যাওয়া। টিনের চাল আর ভাঙ্গা বাঁশের বেড়া। মেঝেতে এত ধূলাবালি থাকতো যে প্রতিদিন বেঞ্চ গুলোর উপর ধুলোর স্তর পরে থাকতো। ক্লাশের ভিতরে নয়, ক্লাশের বাইরে মাঠের এক পাশে গাছের ছায়ায় একজন শিক্ষক আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে নাম জিজ্ঞেস করেন, পরে আরো দু-একটা সাধারণ প্রশ্ন। এই ছিলো জীবনের প্রথম স্কুল। পরের স্কুলটি আমাদের গ্রামের বাড়ীর পাশের একটি স্কুল। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ছিলাম। কোন পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিনা মনে নাই। এর পরে ঢাকায় গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনের কাছে একটি স্কুল আছে "খোকন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়"। স্কুলের অবস্থা একই ছিলো। ছাপড়া, টিনের ছাউনি, ভাঙ্গা বেড়া। এটা সম্ভবতঃ ১৯৮৬ সালে কথা। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিও হয়েছিলাম। কয়েকদিন শিক্ষকদের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়েছিলো। পরের স্কুলটি সম্ভবত আবার আমার গ্রামের স্কুল, দ্বিতীয় শ্রেণী। ভর্তি হয়েছিলাম। পরীক্ষাও দিয়েছিলাম দু-একটা। রফিক স্যারের কথা পরিষ্কার মনে আছে। খুব মেজাজী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ভর্তি হই গেন্ডারিয়াতে ডিআইটি প্লটের কাছে একটি স্কুলে, তৃতীয় শ্রেণীতে। স্কুলটির নাম সম্ভবতঃ "সিরাজুল ইসলাম একাডেমী"। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশ করার সুযোগ হয়েছিলো। এর পর আবার গ্রামে চলে যাই। ওখানে আমার ইউনিয়নের রসুলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে কিছুদিন ক্লাশ করি। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। ফাইনাল পরীক্ষাটাও মনেহয় দেওয়া হয়নি। যাহোক এবার ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার পালা। আবার গেন্ডারিয়ার সেই "সিরাজুল ইসলাম একাডেমী" থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেই। সিট পরেছিলো "গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে"। ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট লাগে। সেই সার্টিফিকেট নিয়েছিলাম আমার গ্রামের সেই প্রাইমারী স্কুলথেকে। এর মাঝে কোন এক সময় টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি স্কুলে ভর্তির জন্য গিয়েছিলাম। ভর্তিটা কেন জানি হয়নি।
এভাবেই শেষ হয় আমার বৈচিত্রময় প্রাথমিক স্কুল জীবন। যে কারণে এখন আর প্রাথমিক স্কুল জীবনের কারো কথা মনে নেই। ভাবলে নিজের কাছেই এডভেঞ্চার মনে হয়।