নামঃ অন্য রকম এক মেয়ে অন্য রকম এক ভালোবাসা
গিটারটা কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো স্বপ্নিল ।। গিটার শিখছে সে , এখনো অনেক সময় আছে কিন্তু টিউনিংয়ে কিছু সমস্যা আছে সেটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে , আসলে ওর এক কাজিন গিটার শিখায় উনার কাছেই শিখে সে ।
বাসা থেকে বের হয়ে হেডফোনটা কানে দিয়ে মুখে নিকোটিনের একটা অখাদ্য নিলো ধরাবে কিনা চিন্তা করতে করতে শেষমেশ ধরিয়েই ফেললো । আস্তে আস্তে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটছে সে , হটাত চোখ পড়লো কিছু দূরে রাস্তায় রিকশায় বসা এক মেয়ের দিকে সাথে আরেকটা মহিলা ,মনেহয় মাই হবে । মেয়েটিকে দেখার সাথে সাথে থ হয়ে গেলো সে , এতো সুন্দর মানুষ কি করে হয় !! নাহ ও কোন মানুষ হতে পারে না নিশ্চিত ও একটা পরী ।। গোলাপি একটা ড্রেস পরা চোখে গোলাপি ফ্রেমের চশমা ।। অসাধারন সুন্দর লাগছে , গোলাপি ড্রেসে দারুন মানিয়েছে ওকে , চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা ওর থেকে ।।
:- ভাই এমন হা কইরা কই তাকাই আসেন আর কি ভাবতাসেন ?? দোকানের সামনে এমনে দাড়াই থাইকেন না ,, দূরে গিয়া দাঁড়ান ।।
পাশের দোকানদারের কথায় কল্পনা থেকে বাস্তবে নেমে এল স্বপ্নিল ।। মোবাইলটা বের করে সময় দেখলো , এই রে সব শেষ !! পুরা টাইম তো এখানেই শেষ এখন!!
তাড়াতাড়ি একটা রিকশা ডাক দিলো রিকশাতে উঠে হেডফোনটা খুলে ফেললো কান থেকে ,, এমনিতে মিউজিক পাগলা মানুষ সে সবসময় কানে থাকে হেডফোন,,আর গান বাজে এখন শুনছিলো পিটবুলের গান ইন্টারনশন্যাল লাভ।। এখন অবশ্য গান শুনা থেকে মেয়েটির কথা চিন্তা করতেই বেশি ভালো লাগছে,তাই হেডফোন খুলে ফেলা আরকি !! হটাত করেই একটা গান মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো,, `` গোলাবী আখে মেনে যো দেখি `` কিন্তু গানটা কোথায় শুনেছে মনে আসছে না , অবশ্য ভালই লাগছে গানটা গুনগুন করতে যদিও এই একটা লাইন ছারা আর কিছুই মনে আসছে না ,
গিটার ক্লাস শেষ হয়ে গেছে স্বপ্নিল বসে আছে ভাইয়ার সাথে কথা বলছে টিউনিংয়ের ব্যপারে ,, বাসা থেকে আগে বের হয়েছে কিন্তু আসতে আসতে দেরিই হয়ে গেছে ।। এমন সময় একটা মেয়ে এসে উপস্থিত ভাইয়ার সাথে কথা বলবে একটু ,, সে ভুল দেখছে না তো এই যে সেই মেয়েটা !! কেন এসেছে গিটার শিখতে নাতো ,, কিন্তু মেয়েরা তো গিটার বাজায় না !! তাহলে কি সে ভুল দেখছে?? নিজেকে নিজে চিমটি কাটলো , নাহ এইটা সেই মেয়েটাই কিযে সুন্দর লাগছে ।। ভাইয়ার সাথে কথা শেষ করে চলে গেলো ,ভাইয়া এসে বলল কাল থেকে তোদের সাথে শিখবে ।। আরে এর মানে কি এ যে মেঘ না চাইতেই বজ্রপাত সহ বৃষ্টি ।। নাচতে ইচ্ছা করছে স্বপ্নিলের ।।
রাতে বাসায় পড়ার টেবিলে বসলো ,, কিন্তু পড়ায় মন বসলে তো !! খালি ঐ মেয়েটার কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে না আজ আর ওর পড়া হবে না ।। তারপরও মাকে বুঝ দেবার জন্য কিছুক্ষণ পড়ে শরীর খারাপ লাগছে বলে উঠে গেলো ।। রাতে খেতেও পারলোনা ঠিক মত তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলো কিন্তু ঘুম আসলে তো খালি ঐ মেয়েটাই মাথার সব অংশ দখল করে বসে আছে ।। চিন্তা করছে যে প্রেমটেম হয়ে গেলো নাকি আবার ঐ মেয়েটার কথা না হলে ভুলতে পারছে না কেন ?? যাহোক অনেক কষ্টে রাতটা পার করলো ,, সকাল হতেই বিকেলের অপেক্ষা কখন যে বিকেল হবে ওকে দেখবে একবার আজকের দিনটাই মনেহয় যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দিন ।। যাক অবশেষে বিকেল হোল ।। আজ একটু আগে আগেই উপস্থিত স্বপ্নিল , এসে দেখে ও এসে বসে আছে আর কেও নেই মানে ও আর সে দুইজন একা ।। আহা এমন একটা মুহূর্তের অপেক্ষাই তো করছিলো সে।
মেয়েরা তো আর আগে থেকে কথা বলে না তাই সে নিজেই উদ্যোগী হয়ে কথা শুরু করলো ,, মনে সাহস জুগিয়ে মেয়েটির সামনে গেলো
:- আপু আপনার নাম ??
:- আমি তুলি, আপনি ??
:- ও, আর আমি স্বপ্নিল , পড়ি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে
:- ও, আমিও তো সেকেন্ড ইয়ারে
:- ও, তাহলে কি আমি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি ??
:- অবশ্যই , আসলে কেও আমাকে আপনি আপনি করে বললে আমার কেমন যেনো লাগে মনে হয় যেনো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি !!
:- হা হা ,, তা গিটার শিখার শখ কিভাবে জাগলো ??
:- কেন ??
:- না সচরাচর তো মেয়েদেরকে গিটার শিখতে দেখা যায় না তাই জিজ্ঞাসা করলাম আর কি......!
:- ও, না গিটার শিখার আগ্রহ আমার সেই ছোট বেলা থেকেই মিউজিক জিনিসটার প্রতি আমি আসলে একটু দুর্বলই
:- আরে তোমার সব তো আমার সাথে মিলে যাচ্ছে আমারো তো একি অবস্থা , music is my soul
ক্লাস শেষ বাসায় ফিরতে ফিরতে স্বপ্নিল চিন্তা করতে লাগলো কি সুন্দর নাম তুলি ,,
ওর মতো ওর নামটাও সুন্দর দুজনের নাম কি সুন্দর মিলেও যায় ,স্বপ্নিল তুলি, স্বপ্নের তুলি , স্বপ্নের যেমন শেষ নেই স্বপ্ন আকার তুলিরো শেষ নেই !!
কিছুদিন পর (প্রায় এক মাস ):-
ওদের সম্পর্ক এখন তুমি থেকে তুই এ নেমে এসেছে , দুইজনই একজন আরেকজনের খুব ভালোবন্ধু ।।
একদিন দুপুরে ঘুমাচ্ছে স্বপ্নিল , মোবাইলটা চার্জে , হটাত করেই তার আদরের ছোট বোনটা ডাকাডাকি শুরু করলো
:- ভাইয়া ওঠ, তোর ফোন
:- আহা দেখতেসস না ঘুমাচ্ছি ডিস্টার্ব না করলে কি ভালো লাগে না ?
:- তোর ফোন বাজতেছে কখন থেকে
:- কেটে দে
:- ভাইয়া তুলি আপুর ফোন ।।
গত কয়েকদিন যাবত তুলির সাথে কোন যোগাযোগ নেই ,লাফ দিয়ে উঠলো স্বপ্নিল,
কই তাড়াতাড়ি দে এতক্ষণ কই ছিলি ? আরো আগে দিতে পারস নাই
ফোনটা রিসিভ করলো
:- কিরে তোরতো কোনো খবরই নাই কই তুই ??
:- এইতো বাসায় ,, কেন ??
:- তাড়াতাড়ি নিচে নাম ৫ মিনিট টাইম আমি তোর বাসার নিচে
:- আচ্ছা বাবা আসছি দাড়া ।
:- তাড়াতাড়ি নাম ১ মিনিট শেষ
তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নিচে নামলো স্বপ্নিল , নেমে দেখে তার প্রানপাখি দাড়িয়ে আছে , সাদা কালো একটা ড্রেস পরে চোখে সাদা ফ্রেমের চশমা, কিযে সুন্দর লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ।।
:- কিরে কই থাকস তুই ? এতো ব্যস্ত হয়ে গেসস যে আমার কোন খবরই নেস না উল্টা আমি তোর বাসার নিচে আইসা দাঁড়াইয়া থাকি আর তোকে ফোন দিয়ে নামাই
:- না কিছু সমস্যা চলতেছিলো আরকি !
:- জানস তো মানুষের তিনটা হাত ডান,বাম আর শেষেরটা অজুহাত , এখন আর মিথ্যা না বলে রিকশায় উঠ
:- কই যাচ্ছি ??
:- যাচ্ছি আরকি ! তোর সাথে কিছু কথা আছে
:- ও
রিকশা দিয়ে একটা পার্কে গেলো দুজন
:- বল কি বলতে এখানে ধরে আনছস
:- শোন তুই আর সিগেরেট খাবি না , সিগেরেট খেতে খেতে আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবি এইটা তো ঠিক না ।
:- এইটা বলার জন্য এখানে আনছস ??!
:- হ্যাঁ , তুই আর সিগেরেট খাবি না তোর আর আমার কত সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সামনে আমি সেটা নষ্ট হতে তো আর দিতে পারি না ।
:- মানে কি ?? তোর আর আমার কত সুন্দর ভবিষ্যৎ দিয়া কি বোঝাতে চাইসস??
:- তুই এখনো বুঝস নাই ?
:- না
:- আরে গাধা, বোকা তোকে যে আমি প্রচন্ড ভালবাসি এটা তো আর তোকে না জানিয়ে থাকতে পারছিলাম না । যা তোর সাথে কথা বলাই উচিত না
এই বলে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেলো তুলি
থ হয়ে রয়েছে স্বপ্নিল , এই পৃথিবীতে কেও কাওকে এভাবে প্রপোজ করেছে কিনা সন্দেহ আছে
পার্কে একা একা হাঁটতে হাঁটতে জীবনের শেষ সিগারেটটা ধরালো স্বপ্নিল , আসলেইতো তাদের দুইজনের কত সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে , আসলেই জীবনটা খুব সুন্দর ...........................!!