৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
রাত ১২ টা ১৫
রবিনের তখন সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম চলছিল।যথারীতি সে পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
হঠাৎ রবিনের ফোন বেজে উঠলো।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
রবিন মোবাইলের স্ক্রিকে তাকাতেই স্নিগ্ধার নাম্বার দেখতে পেলো। সঙ্গে সঙ্গে তার পরিক্ষার কথা ভুলে ফোন রিছিভ করল। ওপাশ থেকে স্নিগ্ধার কান্নার শব্দ শুনে রবিন একটু চিন্তায় পরে গেল।
রবিনঃ- হ্যালো ,স্নিগ্ধা কি হয়ছে তোমার?? কথা বলছো না কেন?? আর কান্না করো কেন?? কথা বলো। হ্যালো।
কিন্তু ওপাশ থেকে শুধু কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। অনেক্ষন চেষ্টার পর রবিন স্নিগ্ধার কথা শুনতে পায়।
স্নিগ্ধাঃ- কান্না ভরা কন্ঠে , রবিন তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না । তুমি আমাকে ভুলে যাও। আর আমাকে ফোন দিও না ।এই বলে স্নিগ্ধা ফোনটা কেটে দিল ।
রবিন কথা গুলো ঠিক কিভাবে নিবে তা ভেবে পাচ্ছিল না কারণ স্নিগ্ধা মাঝে মাঝেই রবিনের সাথে এমন করে ।
কিন্তু আজ কেন স্নিগ্ধার কন্ঠে কোন ভারি কষ্টের আভাস পেল রবিন ।
তাই সে কোন দেরি না করে বার বার স্নিগ্ধাকে ফোন করতে লাগলো কিন্তু স্নিগ্ধার কোন সাড়া পেল না ।
তখন যেন রবিনের মাথায় বড় ধরনের কোন বাজ পরলো।
সামনে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি , ৮ মে স্নিগ্ধার জন্মদিন এসব নিয়ে রবিন মনে মনে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছিল। সব পরিকল্পনা যেন এক বৈশাখের ধমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে গেল।
আসলে কি হয়েছে ? নাকি স্নিগ্ধা তার সাথে মজা করতেছিল এই সব এর খোজ করার জন্য তার পরিক্ষার কথা ভুলে বার বার স্নিগ্ধাকে ফোন করে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ তার নাম্বার স্থান পায় সিন্ধার মোবাইল এর ব্লাক লিস্টে।
কিন্তু ২২ নভেম্বর ২০১২, যখন তাদের প্রথম কথা হয়েছিল তখন তো এমন ছিল না??
২২ নভেম্বর ২০১২ রবিন আর স্নিগ্ধার প্রথম পরিচয় ।
রবিনঃ- হ্যালো !! তুমি কি স্নিগ্ধা বলছো?
স্নিগ্ধাঃ- হ্যাঁ! কিন্তু আপনি কে??
রবিনঃ- আমি রবিন । তোমার আপু তোমায় আমার কথা বলেছে নিশ্চয়??
স্নিগ্ধাঃ ও ভাইয়া !! কেমন আছেন?
রবিনঃ- ভালো। তুমি?
স্নিগ্ধাঃ- ভালো। ভাইয়া আসলে আমি দুঃখিত , আজ আমি কথা বলতে পারতেছি না বাসায় মামা মামী আসছে । আমি কাল কথা বলি?
রবিনঃ- ঠিক আছে।
এর পর থেকে তাদের কথা হতে থাকে এবং ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ তে তাদের এই পরিচয় টা ভালবাসায় রুপান্তরিত হয়।
১২.১২.১২ তে ববিন এবং স্নিগ্ধার প্রথম দেখা ।
রবিন ঠিক গুনে গুনে ১২ টা লাল গোলাপ ও এক জোড়া পায়েল কিনে নিয়ে গেল সিন্ধার জন্য।
স্নিগ্ধা ফোনে যতটা সাচ্ছন্দ ভাবে কথা বলত বাস্তবে তার ঠিক উল্টা।
কেনন তাদের আজ প্রথম দেখা তার মধ্যে কোন উৎকর্সতা থাকাবে তা না হয়ে সে লজ্জায় মাথা তুলতে পারতেছিল না।
সে একবার ও রবিনের চোখের দিকে তাকাই নি।
তারপর এমন করেই তারা কিছুটা সময় পারকরলো ।
এবং অনেক জোর করার পরে রবিন তাকে নিয়ে আসা ১২ টা গোলাপ এবং পায়েল দিতে সক্ষম হলো।
স্নিগ্ধা বাসায় এসে সেই ফুল গুলো বার স্পর্শ করতে থাকে এবং সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার পদ্ধতি জানার জন্য রবিন কে ফোন করে।
স্নিগ্ধাঃ- স্যরি!!
রবিনঃ- কেন?
স্নিগ্ধাঃ- তোমার সামনে গিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে এবং তাকাতে না পারার জন্য।
রবিনঃ- এইটা ব্যাপার না।
স্নিগ্ধাঃ- ধন্যবাদ ,ফুল গুলোর জন্য। কিন্তু আমি ফুল গুলো যত্ন করে রেখেদিতে চাই! কিন্তু কি ভাবে রাখবো??
রবিনঃ তুমি ঐ গুলো কে কাগজে মুড়িয়ে হারভেরিয়াম হিসেবে রেখে দিতে পারো।
এভাবে কথা চলতে থাকে তাদের কথা।
তাদের এখন প্রায় দেখা হতো । রবিন ছুটি পেলেই স্নিগ্ধাকে দেখার জন্য ছুটে আসতো।
তাদের ভালবাসার স্বাদ ছিল অনেক টা হজমলার মত।
এই টক, এই ঝাল আবার এই মিষ্টি।
বলতে গেলে এক অন্যরকম ভালবাসা।
দুজনের মধ্যে রবিন ছিল একটু মাথা গরম ছেলে এবং স্নিগ্ধা ছিল অতিশয় আবেগি।
তাই তাদের ভালবাসার স্বাদ ছিল ভিন্ন মাত্রার ।
এই ভালবাসা চলতে থাকে টানা তিন বছর।
এই তিন বছরে দুজন তাদের নিয়ে তিন হাজার বছরের চেয়ে বেশি জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করেছিল।
কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
রাত ১২ টা ১৫ এর কল টা রবিনের স্বপ্ন চিরতরে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।
৬ ফেব্রুয়ারির পর রবিন অনেক চেষ্টা করেছে স্নিগ্ধার সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু প্রতিবার ই বিফলতা ছাড়া আর কিচ্ছু মিলে নি ।
অনেক চেষ্টার পরে রবিন জানতে পারে স্নিন্ধার মায়ের নাকি রবিন কে পছন্দ না!! কারণ রবিন নাকি খারাপ ছেলে কেননা রবিন স্নিগ্ধার সাথে প্রেম করে । আর স্নিগ্ধা নাকি অনেক ছোট তাই রবিন তাকে ভুলভাল বুঝায়া তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে।
তাই তিনি কোন ভাবেই স্নিগ্ধা ও রবিনের এই সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নন।
এর জন্য তিনি স্নিগ্ধা কে কুরআন নিয়ে শপথ করিয়েছেন সে যেন কোন ভাবেই রবিনের সাথে সম্পর্ক না জড়ায়।
এই কথা জানার পর রবিন দিশেহারা হয়ে পরে এবং নিজেকে মাদকের করালগ্রাসে বিলিন করে দেয়। এবং সে স্নিগ্ধার ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে।
এবং মাঝে মাঝে স্নিগ্ধাকে ফোন করে যায়।
এর মাঝে অবশ্য কথা হয়েছিল একবার কিন্তু তা ছিল রবিন কে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য স্নিগ্ধার ভয়াবহ রুপ।
কিছুদিনের মধ্যে অবশ্য স্নিগ্ধা রবিনের দেওয়া সকল উপহার ফেরত পাঠায়।
এভাবে ছয় মাস পারহয়ে যায় রবিন এখন আর স্নিগ্ধাকে কোন ফোন করে না । সে স্নিগ্ধার আশা ছেড়েই দিয়েছে পুরোপরি।
কিন্তু ৯ ই আগষ্ট ২০১৫ তে রবিনের জীবনে একটি মোড় চলে আসে ।
ঐ দিন স্নিগ্ধার এইস এস সি এর রেজাল্ট।
রবিন তার স্মার্ট ফোনে অনেকদিন হোয়াটসএপ ব্যবহার করে না । কিন্তু সেদিন কি মনে করে যেন সে হোয়াটসএপ এ ঢুকলো এবং হোয়াটসএপ এ কলিং সার্ভিস চালু হওয়ায় ভুল করে স্নিগ্ধার নাম্বারে কল চলে যায়।
এবং মধ্যরাতে ওপাশ থেকে জবাব আসলোঃ
স্নিগ্ধাঃ- কল করেছিলেন কেন??
রবিনঃ- ভুল করে চলে গিয়েছিল ।
স্নিগ্ধাঃ - ভুল করে না , মজা নেওয়ার জন্য । কারণ আপনি জানেন আমার রেজাল্ট খুব ভালো হয় নি
রবিনঃ- সত্যি আমি তোমার রেজল্ট জানি না সত্যি ভুল করে চলে গেছে।
এই বলে তাদের কথা শেষ হয়।
কয়েকদিন পর স্নিগ্ধা রবিন কে হোয়াটসএপ এ নক করে ।
স্নিগ্ধাঃ আপনি আমার বড় ভাই হবেন??
রবিন পরক্ষনে চিন্তা করলো এমনেতে তো স্নিগ্ধাকে পাবো না তবে বড় ভাই হিসেবে থাকলে হয়তো তার প্রেয়সী কেমন আছে তা অনন্তত জানতে পারবে এবং মনকে সান্তনা দিতে পারবে।
তারপর রবিন উত্তর দিলঃ
রবিনঃ- বড় ভাই !!!!
স্নিগ্ধাঃ হ্যা বড় ভাই।
তার পর রবিন রাজি হয়ে যায়।
এখন ও তাদের কথা চলতে থাকে এবং তাদের মনে আগের ভালবাসা পুনরজন্ম হতে থাকে এবং তা ভিন্ন কোন রুপে।
মাঝে মাঝেই রবিন বলে ওঠে " দেখনা আমি ভীষন সুখে আছি"।
একসাথে থাকতে পারেনি বলে ওরা আফসোস করেনা।
তবে বুকের বামপাশটা কেন যেন ব্যাথায় চিন চিন করে ওঠে। এ ব্যাথার রহস্য ওদের কখনো জানা হয়না।
একদিন দুজনের দুটি সংসার হবে ,
হয়তো কোন দিন তারা একে অপরের কাছ থেকে আরো দূরে চলে যাবে।
কিন্তু তাদের এই ভালবাসার ব্যথা বা আনন্দ রয়ে যাবে সবসময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫২