১.
আজ কলেজের নবীন বরণ । একঝাঁক নতুন মুখ কলেজের এখানে সেখানে । ছাত্র নেতারা এদেক সেদিক বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরছে । অপেক্ষা কলেজের মূল অনুষ্ঠান শেষ হলে তারা ছাত্রদের কাছে যাবে । এই উদ্দেশ্যে প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের নেতারাই ক্যাম্পাসে আছে । এটার জন্য চাঁপা উত্তেজনা আছে ক্যাম্পাসে । রাশেদ তার গ্রুপ নিয়ে ঠিক ক্যাম্পাসের মূল ভবনের পেছনে পরিত্যাক্ত একটা ক্লাস রুমে আড্ডা দিচ্ছিল । সময় দুপুর বারোটা ।
ভাইয়া একটা কথা বলতে পারি?
রাশেদ ঘুরে তাকালো মেয়েটির দিকে ।মনে হয় নতুন অচেনা মুখ,বয়সও কম । রাশেদ কথা বলে উঠলো ।
বলো কি বলবে ?
ভাইয়া এখানে রাশেদ ভাই কে ?
কেনো কি দরকার ?
ভাইয়া আমাকে জামশেদ ভাই পাঠিয়েছে ।
ও আচ্ছা।আমি রাশেদ ।বলো ?
জামশেদ ভাই এই চিঠিটা আপনাকে দিয়েছে ।
রাশেদ চিঠিটা নিয়ে পড়লো । জামশেদ তার রাজনৈতিক বড় ভাই । এখানেই পড়তো । রাশেদ কথা বলে উঠলো।
তুমি জামশেদ ভাইয়ের আপন বোন ? নাম কি ?
জ্বি । ঝুমুর ।
জামশেদ ভাই এখন কি করে?
যশোর অপারেশনে আছে ।
ও আচ্ছা । রাজনীতি করবে ?
জ্বি ।
আগে করতে কি?
জ্বি ভাইয়া । এলাকায় ও আমাদের স্কুলে ।
ওকে কাল ফরম নিয়ে জমা দাও । ২/৪ দিনের মাঝেই আইডি পেয়ে যাবে । তবে এখন আর কেউ আইডি নিতে চায় না । পুলিশ যে জ্বালানো জ্বালায় । তুমি নিবে কি ?
জ্বি না ভাইয়া ।
রাশেদ হেসে দিলো আচ্ছা যাও,পরে দেখা হবে ।
২.
( ৩মাস পর )
ঝুমুর না কি ?
জ্বি নবী ভাই ।কেমন আছেন?
ভালো ।তোমার খবর কি?
জ্বি ভালো।
বাড়ি যাও ?চলো পৌচ্ছে দেই ।
কোনো দরকার ভাইয়া?
হুম তোমার একটু খোঁজ খবর নিতে হবে ।
কেনো?দলে লাগবে?
নবী এক মুহূত্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো ।তার পর বলো ।না তেমন কিছু না ।
নবীর মুহূত্তের বিব্রতকর অবস্থা ঝুমুরের নজড় এড়ালো না । ঝুমুর অনমনে একটু হাসলো ।
৩.
রাত নয়টা। মফসলে অনেক রাত । ক্যাম্পাসের মূল ভবনের পেছনে রাশেদের আড্ডা ।
রাশেদ : এই চল তোরা,অনেক রাত হয়েছে। এতো রাত পর্যন্ত এখানে থাকাটা ঠিক হবে না ।
জনৈক ছাত্র : হ্যা ভাই । চলেন বেড়িয়ে যায় । চারদিকে কি অন্ধকার দেখেন ।
রাশেদরা বেড়িয়ে গেলো ক্যাম্পাস থেকে ।গেটে আসতেই নবী বলে উঠলো।
আমার নোট থেকে গেছে আড্ডার জায়গায় । আনতে ভুলে গেছি,নিয়ে আসি ।
রাশেদ সাবধান করে দিয়ে হাটতে শুরু করতো । বাকিরা পিছু নিলো ।
৪.
নবী আস্তে আস্তে পরিত্যক্ত ক্লাস রুমের ভেতরে তাকালো । দুর থেকে হৈচৈ শুনছিল তাই আর হুট করে ভেতরে ঢোকেনি । দরজার আড়াল থেকে দেখলো রুমিদের গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে । রাশেদ আর এগোলো না । ঘুরে উল্ট দিকে হাটা ধরলো । কিছুটা যেতেই কিসে যেনো বারি খেলো । কিছু একটা জোড়ে শব্দ করে পড়ে গেলো । নবী ঝেড়ে দৌড় দিল । সাথে সাথে রুমি গ্রপ চিৎকার করতে করতে পিছু নিলো ।ধর ধর শালারে । রুমি ভাইকে খুন করতে আসছিলো । ধর ধর ।
নবী দৌড়তে দৌড়তে মেইন রোডে উঠলো । পেছনে তাকালো দেখলো ওরা ক্যাম্পাসের মুল দরজা পর্যন্ত এসে ফিরে যাচ্ছে । হাটাতে শুরু করলো নবী । হাঁপাচ্ছে । আজ বড় বাঁচা বেঁচে গেছে । ধরা পড়লে নিশ্চিত খুন হয়ে যেতো । ভয় হচ্ছে ক্লাস রুমের নোট গুলো দেখে যদি চিনে ফেলে ।
এই ছেলে দাড়াও । হাঁপাচ্ছ কেনো ?
নবী ঘুরে তাকালো । শিঁড়দাড় বেয়ে একটা শীতল অনুভুতি নিচে নেমে গেলো । নবী বুঝে গোলে এটা সিআইডির লোক । লোকটা এগিয়ে এসে জানতে চাইলো ।
দৌড়চ্ছিলে কেনো ?
স্যার কিছু লোক কলেজের গেটে অস্ত্র নিয়ে কাকে যেনো দৌড়াচ্ছিলো । তাই দেখে ভয়ে দৌড় দেই ।
কখন?পাগলা ঘটক আসার আগে ?
নবী থতোমতো খেয়ে বললো । স্যার পাগলা ঘটক কে ?
তুই কি ছাত্র?
জ্বি না স্যার ।
তাহলো সোজা এখান থেকে চলে যা ।
৫.
(২ দিন পর । কলেজের মুল দরজার সামনে।রাত ৮ টা । )
রাশেদ: এইখান পর্যন্ত আসছিল ওরা ।
নবী : জ্বি ভাই ।
রাশেদ : হাতে অস্ত্র ছিলো ?
নবী যেই উত্তর দিতে যাবে অমনি রাশেদের হাতে অস্ত্রটা গর্জে উঠলো । নবী মাটিতে পড়ে গেলো । ঝুমুর চোখ বন্ধ করলো । চোখ থেকে একটু জল গড়িয়ে পড়লো ।তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে উল্টো দিকে হাটা শুরু করলো । আরও কিছু ছেলে মেয়ে এদিক সেদিক ছড়িয়ে গেলো । একটা কার এসে থামলো কলেজের গেটে । রাশেদ সহ আরও কয়েকজন উঠে বসলো । এর পরপর একটা মাইক্রয় এলো,তাতে নবীর মৃত দেহ নিয়ে বাকি কজন উঠে গেলো । মুহূত্তেই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেলো । শুধু ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে পড়ে রইলো,মাটিতে লেগে থাকা রক্ত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫৫