গহীন জংগলে আগুন লেগেছে। দাবানল ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে পুরা জংগল। আপনি জংগলের ভেতরে আটকা পড়েছেন। এই অবস্থায় আপনি কি করবেন? তখন আগুন থেকে বাচার একটা কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে আপনার চার পাশে বৃত্তাকার একটা এলাকায় শুকনো পাতা, ডালপালা পুড়িয়ে একেবারে ঘাস সহ ভালভাবে জ্বালিয়ে দিন। জংগলের আগুন সেই বৃত্ত প্রর্যন্ত এসে থেমে যাবে। কারন যেই যায়গা অলরেডি পুড়ে ছাই হয়ে আছে সেই জায়গা আর পুড়বে না তাই আগুন আর সেই বাউন্ডারি অতিক্রম করবে না। এই পদ্ধতিকে বলা হয় Back Firing.
বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা কিভাবে কাজ করে? টিকা বা ভ্যাক্সিন আর কিছুই নয় তা হচ্ছে এক ধরনের সিরামে মিশ্রিত নির্দিষ্ট রোগের মৃত জীবানু। রক্তে যখন মৃত জীবানু প্রবেশ করানো হয় তখন সেই জীবানুর বিরুদ্ধে রক্তে এন্টিবডি তৈরী হয়ে যায় কিন্তু মৃত জীবানু কোনো রোগ সৃষ্টি করে না। এন্টিবডি যেহেতু তৈরি হয়ে গেছে তাই কখনো যদি শরীরে সেই রোগ জীবানু প্রবেশ করে তারা সেখানে আর সুবিধা করতে পারে না। রোগ জীবানুর বিরুদ্ধে খুবই সুচতুর একটি পদ্ধতি। এটাকেও এক হিসেবে Back Firing বলা যায়।
স্কুলে থাকতে সামাজিক বিজ্ঞান স্যার জালি বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন। একে একে সবাইকে পড়া মুখস্থ বলতে হত। পড়া না পারলে হাতে, পিঠে, পাছায় বেতের বাড়ি পড়ত। অথবা কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। স্যারের বেতের বাড়ি থেকে বাঁচতে আমি অভিনব এক পদ্ধতি বের করেছিলাম। তা হচ্ছে যেদিন আমি পড়া শিখে আসতাম না সেদিন স্যার ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে আগেভাগেই কান ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে যেতাম। স্যার জিজ্ঞেস করত, কি ব্যাপার কান ধরে দাঁড়িয়ে আছিস যে? আমি কাচুমাচু করে বলতাম পড়া পারি না স্যার। স্যার মজা পেয়ে হেসে বলতেন ভেরি গুড। আমি যেহেতু আগে থেকেই নিজের সুবিধামত শাস্তি নির্ধারণ করে ফেলেছি তাই সম্ভাব্য বেতের বাড়ি থেকে বেঁচে যেতাম। এটাও এক ধরনের Back Firing
তাহলে ব্যাপারটা বুঝেছেন তো? যদি দেখেন আপনি শিঘ্রই অবধারিতভাবে আইক্কা ওয়ালা বাঁশ ম্রা খেতে চলছেন তাহলে আগে ভাগেই সেখানে মুলো গুজে রাখুন, তাহলে হয়ত বাঁশ ম্রা খাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন। মুলোর গাত্র যেহেতু মসৃন তাই অন্তত আইক্কাওয়ালা বাঁশ থেকে কিছুটা কম বেদনাদায়ক হবে। কথাটা অশ্লীল শোনালেও মিনিংফুল। দেখেন, আপনি যদি ছিন্তাইকারীর সামনে পড়েন তাহলে কি দিবেন? মানিব্যাগ, মোবাইল দিবেন নাকি জান দিবেন? বিচক্ষন ব্যাক্তি অবশ্যই টাকা বিসর্জন দিয়ে জান নিয়ে ফিরবেন। যে কোনো বিপদ টাকার উপর দিয়ে যাওয়াই উত্তম।
যারা জীবনে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন তাদের নিশ্চই জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হয়ে যাওয়ার কথা যে নির্ঝঞ্ঝাট অনাবিল সুখের পেছনে ছোটা বৃথা, সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে আসলে কাউকেই প্যারা বিহীন লাইফ লিড করতে দিবেন না। আফটার অল আপনাকে লাইফে প্যারা নিতেই হবে। আপনাকে Joy and Sorrow এর একটা সাইক্লিক অল্টারনেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মানে হচ্ছে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার লাইফ স্প্যান এ ৫০% সুখ এবং ৫০% প্যারাময় হবে। তার মানে আপনার জন্য নির্ধারিত যতটুকু বিপর্যয় আছে আপনাকে মোকাবেলা করতেই হবে। এখন কিভাবে করবেন? একজন মানুষ একটি বার্গার খেয়ে কয় টন ওজন তুলতে পারে? যদি বলা হয় ২ টন ওজন আলগিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে সে নিশ্চই পারবে না। কিন্তু এই ২ টন ওজনকে ১০ কেজি করে ভাগ করে একটু একটু করে সে ঠিক সরিয়ে নিতে পারবে। তেমনই আপনাকে আপনার লাইফের প্যারাগুলো একটু একটু করে উপভোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি পালিয়ে বেড়ান তাহলে সেগুলো জমা হতে হতে একদিন এত বড় হয়ে হটাত সামনে আসবে যে তার ভার হয়ত আপনি সইতে পারবেন না। উদাহরন স্বরুপ যার মাঝে মাঝে হাল্কা পাতলা জ্বর কাশি সর্দি হয় সে হচ্ছে সুস্থ মানুষ। যে কখনই অসুস্থ হয় না দেখা যায় তার শরীরে এক সময় প্রান ঘাতী রোগ বাসা বাঁধে।
প্যারা বিহীন জীবন থেকে সাবধান থাকুন। যেখানে কোনও সমস্যা নেই, ঝুট ঝামেলা নেই সেসব জায়গা এড়িয়ে চলুন। যদি কখনো দেখেন আপনার জীবনে চরম সুখ আর সুখের সময় চলছে, কোনো ঝামেলে নেই তাহলে বিপদ আছে, আপনি ধরে নিতে পারেন শিঘ্রই আপনার জীবনে এক মহা বিপর্যয় আসতে চলেছে। অতি সুখের সময়গুলো খুব বেশি উপভোগ করতে নেই। তাই জীবনের সোনালি সময়গুলোতে ইচ্ছে করেই নিজেকে প্যারা দিন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন, নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন, ছোটখাটো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ুন, টেনশনে থাকুন। ওই যে দেখলেন বড় আগুনের মোকাবেলা করা হয়েছে ছোট আগুন দিয়ে, জীবানুর আক্রমন মোকাবেলা করা হয়েছে মৃত জীবানু দিয়ে। কাঁটা তুলতে হয় কাঁটা দিয়ে, ফুল দিয়ে নয়। কখনও সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়াবেন না। আপনি যদি নিজে থেকে সমস্যায় না জড়ান তাহলে সমস্যা একদিন আপনাকে পেয়ে বসবে। কথায় আছে সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। আসলেই সুখে থাকা অবস্থায় একটু আধটু ভুতের কিল খাওয়া ভাল। আপনার বাড়ির উঠানে শেওড়া গাছ রোপন করে সেখানে দুটো বাচ্চা ভুত পুষে রাখুন। তারা রাত বিরেতে কিছুটা উতপাত করবে বৈকি কিন্তু বাচ্চা হওয়ার কারনে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু আপনি যদি ভুতদের জন্য কোনো জায়গাই না দেন একদিন এক বড়সড় মামদো ভুত এসে ঠিক আপনার ঘাড় মটকে দিয়ে যাবে।
প্রকৃতি চায় আপনি সমস্যায় পড়ুন। আপনি সমস্যা থেকে বাচতে পারবেন না। কিন্তু আপনি চাইলে সমস্যাকে চিট করতে পারেন, আপনার লাইফের চ্যালেঞ্জ আপনি নির্ধারন করতে পারবেন। প্যারা যেহেতু নিতেই হবে তাই কোন বিষয়ে আপনি প্যারা নিতে চান আপনি নিজেই নির্ধারন করে ফেলুন, এবং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এঞ্জয় করুন। নইলে প্রকৃতি নিজের সুবিধামত আপনার সমস্যা নির্ধারন করে দেবে।
নদীর গতিপথে যখন পাললিক শিলার আস্তরন জমে তখন নদী তখন নতুন গতিপথ খুজতে থাকে। কুল ছাপিয়ে সমতল ভুমিতে বন্যা হয়। এখন বন্যা থেকে কিভাবে বাঁচবেন? নদীতে বাঁধ দিয়ে? সে আশা দুরাশা। এক্ষেত্রে কার্যকরী উপায় হচ্ছে খাল খনন করা, I mean নদীর শাখা প্রশাখা করে গতির বিকল্প পথ তৈরি করে দেওয়া। প্রকৃতির সাথে সরাসরি বিরোধ চলে না, প্রকৃতির মোকাবেলা করতে যাওয়া বোকামি, কিন্তু প্রকৃতির সাথে আপোষ করা যায় এভাবেই। তাই কখনই সমস্যার সামনে দেওয়াল তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকবেন না। তাহলে দেওয়ালের পেছনে এর পোটেনশিয়াল এনার্জি বাড়তে বাড়তে হটাত দেওয়াল ভেঙ্গে প্রবল স্রোতে সমস্যা একদিন আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সুতরাং খাল খনন করে সমস্যাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করুন। এখন আপনি কোন প্যারাটা নিতে চান? খাল খনন না করলে সমস্যার বন্য বন্যা নিজের খেয়াল খুশি মত প্রবাহিত হয়ে আপনার ঘর বাড়ি ভাসিয়ে নেবে এটাও লাইফের একটা প্যারা আবার খাল খনন করাও বেশ ঝামেলার কাজ। আপনিই নির্ধারন করুন আপনি কোনটা নেবেন, একটা আপনাকে নিতেই হবে। আমারা অনেকেই আলসেমি করে খাল খননের ঝামেলায় যাই না, সে কারনেই কোনো কোনো সময় অপ্রস্তুত আমরা সমস্যার বন্যায় ভেসে যাই, দিশেহারা হই।
লাইফে পেইন আপনাকে নিতেই হবে। জীবনের অর্ধেকটাই পেইন, অল্প অল্প করে সহ্য করে নিন। জমা করবেন না। লাইফ প্যারায় প্যারায় প্যারাগ্রাফ হয়ে যাওয়ার আগেই নিজের সুবিধামত প্যারা নিতে থাকুন। জীবনকে উপভোগ করার পাশাপাশি সব সময় ছোট খাটো পেইন নিয়ে অনাগত বড় বিপর্যয়গুলোকে ব্যাক ফায়ারিং করতে থাকুন। তবেই জীবনে সুখ দুঃখের সহনীয় ভারসাম্য থাকবে।
If you don't walk today you have to run tomorrow
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৯