# কেস স্টাডি ১
পাড়ার অবস্থাসম্পন্ন প্রভাবশালী রহিম শেখের ছেলে বদরুলকে পড়াশোনা বেশিদুর করান গেল না। তার বাউন্ডুলে স্বভাব আর চায়ের দোকানে আড্ডাবাজির কারনে এসএসসিতেও পাশ হলনা। তাই তাকে বিভিন্ন কারিগরি ভোকেশনাল ট্রেনিং করিয়ে দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া হল। সেখানেও দু বছরের বেশি টিকলো না সে। বাঙ্গালী জাত বলে কথা, তাই সভ্য দেশে গিয়ে যে নিজের স্বভাব একটু পাল্টাতে হয় সেটাও তার কমন সেন্সে আসে নি। তাই দুই বছর নানা ঝামেলায় জড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির গুষ্টি সহ বদনাম করে দিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হল। আর উপায়ন্তর না দেখে সে পাড়ার এক কোনে একটি মোবাইল মেরামত কাম ফ্লেক্সি লোডের দোকান খুলে বসলো। দুবাই ফেরত কোমোরের নিচে রংচঙে জিন্সের প্যান্ট, লাল শার্ট, গলায় চেইন, হাতে ব্রেসলেট, মূরগী স্টাইলের হেয়ারকাট, কানে দুল বদরুল এখন দোকানে বসে। এই দোকানে ফ্লেক্সিলোড হয়, মোবাইল মেরামত হয়, মোবাইল ফ্লাস করা হয়, লক খোলা হয়, সফটওয়ার ইন্সটল হয়, সিম কার্ড, ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন সহ বিভিন্ন একসেসরিজ পাওয়া যায়। সেই সাথে গান রিং টোন ইত্যাদি লোড করা যায়। লাস্ট বাট নট দা লিস্ট আরও একটি গোপন জিনিস লোড দেওয়া হয় যা পাড়ার একমাত্র স্কুল কলেজগামী উঠতি কিশোররাই জানে। লেটেস্ট বিভিন্ন দেশি সেক্স স্ক্যান্ডেলের ভিডিও এখানে পাওয়া যায়।
দোকানে পাড়ার ছেলে মেয়ে সবাই মোবাইল রিচার্জ করতে আসে। স্কুল কলেজের অনেক ছাত্র আসে, গান লোড করে আর ইশারায় বলে দেয় লেটেস্ট কিছু থাকলে দিয়েন। বন্ধুরা আসে আড্ডা দিতে। বদরুলের ঘনিষ্ট বন্ধু পারভেজ প্রায়ই দোকানের ভেতর বদরুলের পাশের চেয়ারটিতে বসে থাকে । বদরুল দোকান খোলা রেখে কোথাও গেলে পারভেজ মাঝে মাঝে প্রক্সি দেয়। পারভেজ আবার দেখতে শুনতে ভালো। পাড়ার প্লেবয় হিসেবে নামডাক আছে পারভেজের। পড়াশোনায় ভালো না হলেও খাড়া সোনা নিয়ে মেয়েদের পেছনে ঘুরে বেড়াতে সে বেশ পারদর্শী। তার দোকানে আসার মুল উদ্যেশ্য হচ্ছে ফ্লেক্সিলোড করতে আসা মেয়েদের নাম্বার কালেক্ট করা।
-- দোস্ত তোর কাছে তো মেয়েদের নাম্বারের গোডাউন। আমারে একটা নাম্বার দে না, লাইন মারি
- নাম্বার লাগব তোর? আছে ঝাক্কাস একটা মাইয়া আছে। আগে বল কি খাওয়াবি।
এভাবে পাড়ার সুন্দরী মেয়েটির মোবাইল নাম্বার বদরুলের বন্ধু পারভেজের হাতে চলে যায়। বাকিটা ইতিহাস। মধুর বচনে সিডাকশনে অতিপটু পারভেজ মেয়েটিকে হিপনোটাইজ করে ফেলে। দুজনের মোবাইলে আলাপচারিতায় জল অনেক দূর গড়ানোর পর সেই মেয়েটি এখন বদরুলের দোকানে আসে IMO ইন্সটল করার জন্য। মেয়েটির সাথে পারভেজের এখন IMO তে ভিডিও চ্যাট হয়, সেক্স চ্যাট। বখাটে পারভেজ তাদের সেক্স চ্যাট রেকর্ড করে রাখে। সেই ভিডিও এখন লেটেস্ট স্ক্যান্ডেল হিসেবে বদরুলের দোকান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে পাড়ার কিশোরদের মোবাইলে। কয়দিন পর সেটি এক পর্ন সাইটেও স্থান পায়।
# কেস স্টাডি২
ক্লাসে একদিন ম্যডাম এসে বললেন, দেখ আজ আমি পড়াতে পারব না, আমি প্রেগন্যাণ্ট তাই অসুস্থ, তোমরা দুষ্টামি কোরোনা। এবং ছাত্রদের একটি বিষয়ে রচনা লিখতে দিয়ে বললেন চুপচাপ বসে লেখ। ম্যাডামের কথা মত সব ছাত্রকেই অপাত দৃষ্টিতে মনে হলো যেন সবাই ম্যাডামের প্রতি সহানুভুতিতে সুবোধ বালকের মত শান্ত হয়ে রইল। কিন্তু ম্যাডাম জানতেও পারলেন না পেছনের বেঞ্চের কতিপয় ছাত্রদের মধ্যে কি কানাঘুষা চলছিল।
--এই দেখ তো ম্যাডামের কয় মাস চলে রে?
-দেখে মনে হচ্ছে ছয় মাস তো হবেই
--তার মানে বুঝছস তো, আজ থেকে ছয় মাস আগে এক রাতে ম্যাডামকে তার জামাই সেই রকম ঠেলা দিছে।
তারপর ক্লাসের পেছনের সারিতে চাপা একটা হাসির তরংগ বয়ে গেল।
সেদিন ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রই ম্যাডাম এবং তার হাজবেন্ডের সংগমের দৃশ্য কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল।
# কেস স্টাডি ৩
সেদিন স্কুলের পেছনের বেঞ্চে বসা যে ছেলেগুলো ম্যাডামকে নিয়ে ফ্যান্টাসাইজ করছিল তাদের একজন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যার হবি হচ্ছে হলের প্যাপার রুমে গিয়ে সমস্ত পত্রিকা হতে খুজে খুজে ধর্ষনের খবর গুলো পড়া। কারন তার মনে ধর্ষনের খবরগুলো এক অন্য ধরনের সুড়সুড়ি দেয়। মেগাজিন পেজের সুন্দরী মডেলদের পাশাপাশি সে ধর্ষনের খবরের অংশগুলো কেটে নিয়ে নিজের কাছে জমিয়ে রাখে। সেগুলো পরবর্তীতে তার কি কাজে লাগে তা আর ডিটেল নাই বা বললাম।
কেন কি এমন ছিল এই ধর্ষনের খবরগুলোতে? কেন এই খবরগুলো তাকে উত্তেজিত করে? তাহলে চলুন পত্রিকায় ধর্ষনের খবরের শৈল্পিক বর্ননার এক নমুনা দেখাই
" শিরোনামঃ বখাটে তরুনদের হাতে কিশোরী ধর্ষিত
অমুক জেলার অমুক থানার তমুক গ্রামের সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া সখিনা বেগমের সাথে এলাকার প্রভাবশালী মতলুব মিয়ার বখাটে ছেলে বদরুলের দীর্ঘদিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সেদিন ভোরে সখিনা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ীর বাইরে গেলে বদরুল তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে পার্শ্ববর্তী পাটক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে উপস্থিত বদরুলের আরো চার জন সহযোগী মিলে কিশোরীকে উপুর্যুপরি ধর্ষন করে। কিশোরীর আর্ত চিৎকারে সেখানে এলাকা বাসীরা উপস্থিত হলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। তাকে অচেতন অবস্থায় অমুক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিশোরির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং ধর্ষনের আলামত নিশ্চিত হয়।"
এখানে সংবাদ মাধ্যম ধর্ষনের দুর্ধর্ষ রগরগে বর্ননা দিয়ে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষন করা হল। বাংলা সাহিত্যে এই "প্রলোভন", "ফুসলানো ", "উপুর্যুপরি" খুবই বাজে কতগুলো শব্দ। মাঝে মাঝে আমার বাংলা ভাষার প্রতি প্রচন্ড রাগ হয়। প্রলোভন মানে কি? বিয়ে কি এতই লোভনীয় বিষয়? বিয়ের লোভ দেখানো কি বাচ্চাদের ললিপপ খাওয়ার লোভ দেখানোর মতই? ফুসলানো শব্দের অর্থ কি? ভিকটটিম কি বিয়ের লোভে লোভাতুর হয়ে উত্তেজনায় ফোঁস ফোস করতেছিল?
একজন সাইকো যে কিনা চটি বই পড়ে সেক্স সম্প্ররকে জ্ঞান লাভ করে এবং ধর্ষনের খবর পড়ে যৌন সুড়সুড়ি অনুভব করে সে এই সমস্ত শব্দ থেকেই বিকারগ্রস্ত হয়।
শুনতে কি আজিব লাগছে? এবং এইটাই সত্য। এতক্ষন যেসব কেস বললাম সবই হচ্ছে পর্নোগ্রাফির ইফেক্ট। যে ছেলে চটি বই এবং পর্ন ভিডিও দেখে দেখে সাইকো হয়ে গেছে সে সেক্সুয়াল যে কোনো শব্দ থেকেই উত্তেজিত হয়। যোনী, বীর্য এই জাতীয় শব্দগুলো, জীববিজ্ঞান বই এর সেক্স ক্রোমোজম এবং শুক্রানু ডিম্বানু ইত্যাদির নিষেক সম্পর্কিত বর্ননা তার কল্পনায় শেষ পর্যন্ত রগরগে অশ্লীল চিন্তাতেই পর্যবসিত হয়। তারা মেয়েদের সম্মানের চোখে দেখার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলে। পোশাকের ভেতর দিয়ে সে মানুষকে নগ্ন দেখে। নাটক সিনেমা দেখে যেমন এখনকার তরুনদের শর্ট ফিল্ম নির্মানের প্রবনতা বাড়ছে তেমনই পর্ন ভিডিও দেখে প্রেমিক প্রেমিকা তাদের দৈহিক সীমা লংঘনের মুহুর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দি করে রাখার প্রবনতা ইদানিং প্রকট আকার ধারন করছে। তাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়, জ্ঞ্যাতে বা অজ্ঞাতে তাদের ভিডিওগুলোও পর্নসাইটে স্থান করে নিচ্ছে।
পাঠ্যবই এ যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রন না করে যৌন শিক্ষার এই অন্তর্ভুক্তি শিশু কিশোরদের নৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে কতটুকু ফলপ্রসু। যৌনতা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বয়সন্ধির বিপজ্জনক সময়ে যৌনতা সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান এবং শারিরিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা যে কারো দেহ মনে পুলক জাগ্রত করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই এই সময়ে একাডেমিকালি যৌন শিক্ষা এমনভাবে দিতে হবে যেন সেই সাথে বিপরীত লিংগের প্রতি সম্মান, সংযম এবং নৈতিকতার শিক্ষাও জোরালোভাবে স্থান পায়। এটা খুবই কঠিন ব্যাপার। এ জন্য শিক্ষকদেরও কার্যকর প্রশিক্ষন নেওয়া জরুরি।
ভুলভাবে প্রাপ্ত যৌন শিক্ষা এবং পর্নোগ্রাফি কিশোরদের হস্তমৈথুনের অভ্যাসের দিকে ঠেলে দেয়। পর্নগ্রাফিক সাইট বন্ধ না করে যতই যৌন শিক্ষা দেওয়া হোক না কেন, যৌন অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন, এবং হস্তমৈথুন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রন করা যাবে না। হস্তমৈথুন এমন একটি অভ্যাস যা তরুন সমাজের বড় একটি অংশকে সাস্থ্যহানী এবং ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা একটা ড্রাগের মত জটিল অভ্যাসে পরিনত হয়। ডিপ্রেশন কাটাতে অনেকেই হস্তমৈথুনের আশ্রয় নেয়, এবং এই অভ্যাস এক দীর্ঘমেয়াদী ডেপ্রেশনের দিকেই ঠেলে দেয়। এক সময় পর্ন ভিডিও এক অপরিহার্য বদ অভ্যাসে পরিনত হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, আমেরিকা পাড়ি দিয়ে এশিয়া মহাদেশ হয়ে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে আরেকটি ভয়ানক কালো বিষবাষ্প তা হচ্ছে Incest এ সম্পর্কে আর বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা হচ্ছে না। এই incest এবং শিশু পর্নগ্রাফির থাবা যখন বাংলাদেশের উপর পড়বে তখন সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
সরকার পর্ন সাইট বন্ধ করার জন্য যে উদ্যেগ নিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। হয়ত পুরো পুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে না কারন এ সাইট গুলোর পরিমান অনেক বেশি। যেসব দেশে কোটি কোটি ডলারের পর্ন ব্যাবসা হয় সেখানেও কিছু নিয়ম কানুন এবং আইন আছে। ইন্টারপোল এবং এফবি আই এর কড়া নিয়ন্ত্রনের কারনেই এখনো পর্যন্ত ইন্টারনেটে শিশু পর্নগ্রাফি দেখা যায় না। কিন্তু এমন একসময় আসবে যখন শিশু পর্নগ্রাফিও অবাধে সাইটে পাওয়া যাবে। এ থেকে বোঝা যায় চাইলেই কিন্তু ১০০ শতাংশ ফিল্টার করা সম্ভব। কিন্তু অন্তত পক্ষে ৭০ শাতাংশও যদি নিয়ন্ত্রনে আনা যায় সেটিও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করবে।
আমি জানি দেশের তরুন সমাজের বড় একটা অংশ এতে অসন্তুষ্ট হবে, কারন দির্ঘদিনের অভ্যাস এমন একটা জিনিস যা পরিবর্তন করতে প্রথমে একটু কষ্ট হবে কিন্তু যা নেই তার প্রয়োজনীয়তাও এক সময় অনুভব হবে না। দেশে হিন্দি সিনেমা, হিন্দি সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা আছে কারন এর অবাধ অনুপ্রবেশ। আমাদের চার পাশে ভারতের পরিবর্তে যদি চিন দিয়ে ঘেরা থাকত তাহলে আমার হিন্দি গানের পরিবর্তে চৈনিক সংগীতেই আসক্ত হতাম। আউট অব সাইট আউট অব মাইন্ড বলতে একটা ব্যাপার আছে। কিছু কিছু জিনিস না হলেও মানুষের চলে যায়।
আমাদের বাসায় টিভি ছিল না কোনোদিন, কারন আমার বাবা ধার্মিক মানুষ ছিলেন। এ জন্য ছোটকালে মনে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও পরে বুঝেছি, টিভি ছিল না বলেই আমি আমার শৈশব একজন প্রকৃত শিশুর মত করেই কাটিয়েছি। টিভির কন্ডমের বিজ্ঞাপন আমার মনকে কলুষিত করতে পারে নি।
তাই দেশে পর্নগ্রাফি বন্ধ হয়ে গেলে সুস্থ বিনোদনের অনেক পন্থা অবশ্যই বের হবে। এ জন্য মন খারাপ করার কিছু নেই। শুধু দাতে দাত চেপে কিছুদিন সহ্য করে গেলেই হবে।
এ জন্য সবাইকে ইতিবাচক দৃষ্টিভংগি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
হ্যা তারানা আপা, আমরা আছি আপনার পাশে। পর্নগ্রাফি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৯